সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে কাঁকড়া চাষে ব্যাপক সাফল্য

kakraখবর বাংলা২৪ ডেক্স:

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে কাঁকড়া চাষে ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। কাঁকড়া চাষে চাষীরা দিনের পর দিন ব্যাপক সাফল্যও পাচ্ছে। অল্প জায়গায় উৎপাদনে তুলনা মূলক কম খরচ এবং বালাইয়ের আক্রমণ না থাকায় উপকুলীয় অঞ্চলে চাষীরা কাঁকড়া চাষে ব্যাপক ভাবে ঝুঁকে পড়েছে।
অধিকাংশ চাষীর অভিমত বিগত বছর গুলোতে চিংড়ী চাষে ব্যাপক মার খাওয়ায় এখন তারা পরিকল্পিত পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। এশিয়ার দেশ গুলো ছাড়িয়ে ইউরোপের বাজারেও কাঁকড়া রপ্তানী ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চাষীরা জানান,বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ১৮টি দেশে কাঁকড়া রপ্তানী হচ্ছে। কাঁকড়া বাংলাদেশের মৎস্য খাতের মধ্যে একটি উদীয়মান রপ্তানী শিল্প। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে বাংলাদেশ হতে রপ্তানীকৃত মৎস্য সম্পদের মধ্যে চিংড়ীর পরেই কাঁকড়ার অবস্থান। বছরে ২শ ৫০ কোটি টাকারও বেশী কাঁকড়া রপ্তানী হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। সারা দেশে ২.৫ থেকে ৩.০ লক্ষ লোক কাঁকড়া সংগ্রহ, মোটা তাজাকরণ ও বিপনন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কেবলমাত্র সুন্দরবন এলাকায় প্রায় ৫০-৬০ হাজার নারী পুরুষ এ পেশায় সরাসরি জড়িত।
শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে,শ্যামনগরে ৫শ’ প্রজেক্টের মাধ্যমে ১৫ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হচ্ছে এবং বছরে প্রায় ৩ হাজার মে. টন কাঁকড়া উৎপাদন করে ১৫০ কোটি টাকা উপার্জন করে। বাংলাদেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী খাদ্য হিসাবে কাঁকড়া গ্রহণ না করলেও চীন, হংকং, মালেশিয়া, তাইওয়ান, জাপান ও সিঙ্গাপুর সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এবং ইউরোপ মহাদেশে কাঁকড়ার চাহিদা অনেক বেশী। বাংলাদেশ হতে বহিঃবিশ্বে যে পরিমান কাঁকড়া রপ্তানী হয়ে থাকে তার সম্পূর্ণই উপকূলীয় অঞ্চলের লোনা পানিতে বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, বাগেরহাট ও ভোলা অঞ্চল হতে আহরিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলে কাঁকড়া উৎপাদিত হলেও সাতক্ষীরা জেলায় তুলনামূলক উৎপাদন হয় বেশী। দেশের মোট উৎপাদনের শতকরা ২৫ ভাগের বেশী সাতক্ষীরা জেলায় উৎপাদিত হয়।
শ্যামনগরে নওয়াবেঁকী গণমুখী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান জানান, উপকুলীয় অঞ্চলে কাঁকড়া চাষীদের উন্নয়নে ঋণ সহায়তার পাশাপাশি তাদের ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে সম্যসা সমাধানের  ধারণা দেওয়া হচ্ছে। তাতে দিনের পর দিন চাষীরা ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছে। অল্প জায়গায় অধিক উৎপাদন ও ভাইরাসের আক্রমণ কম হওয়ায় কাঁকড়া চাষে চাষীরা ঝুঁকছে বেশী।
শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে উৎপাদিত কাঁকড়ার গুণগতমান ও স্বাদ অনেক বেশী হওয়ায় বিদেশে এর চাহিদা অকেন বেশী। তিনি এ অঞ্চলে কাঁকড়াকে শিল্প হিসাবে ঘোষনা করার দাবী জানিয়ে বলেন, যথাযথ পৃষ্টপোষকতায় উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ীর মত কাঁকড়া হ্যাচারী প্রতিষ্ঠা করলে চাষীরা ব্যাপক সুবিধা পাবে। সেক্ষেত্রে দ্বিগুন উৎপাদন করে প্রচুর বৈদশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে।
বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের সুত্র মতে,বাংলাদেশের জলসীমায় ২১ জাতের কাঁকড়া পাওয়া যায়। সুন্দরবন উপকলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা ও ভোলা অঞ্চলে বেশী পরিমান কাঁকড়া পাওয়া যায়। এ অঞ্চলে মাইলা, সেটরা, সাইলা ও ছিলা জাতের কাঁকড়া বেশী পাওয়া যায়। তন্মোধ্যে মাইলা ও ছিলা জাতের কাঁকড়া গুনেমানে উৎকৃষ্ট হওয়ায় বিদেশে এর চাহিদা ও মুল্য অনেক বেশী।
দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাকাকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলীয় অঞ্চলকে কাঁকড়া শিল্প জোন হিসেবে ঘোষনা করতে যা যা করা দরকার তার সব কিছুই করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন সরকার এটাই সুশীল সমাজের প্রত্যাশা।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend