সন্ত্রাস এ দেশে আছে কি নেই : মিনা ফারাহ

সন্ত্রাস এ দেশে আছে কি নেই

download (9)

মিনা ফারাহ

বিগত কয়েক বছর সন্ত্রাসের নামে সরকার যদি একটি বুলেটও খরচ না করত তারপরও বিশ্বকাপের মতো মহাঘটনা শান্তিপূর্ণই হতো। এই দফায় সরকারকে অতিরিক্ত নিরাপত্তার আশ্রয় নিতে দেখা যায়নি কারণ, সন্ত্রাস এ দেশে নেই। কিন্তু ‘সন্ত্রাস আছে’ বলাটা গদি রায় কতটা সহায়ক, বুঝতে হলে রাজনৈতিক শিা-দীা এবং সচেতনতা প্রয়োজন, যা ৯৯ ভাগ আইনপ্রণেতা এবং মানুষের নেই। সন্ত্রাস যারা করে, বক্তৃতায় নয়, ওসব জন্তু দেখলেই টের পাওয়া যায়। বিষয়টি মাননীয় আদালতের বিবেচনায় থাকা প্রয়োজন কারণ শেষ কথা তাদেরই। পদ-পদবি অস্থায়ী, স্বজন হারানোর বেদনা চিরস্থায়ী।

কাকতালীয় ঘটনা
বাংলায় এর নাম শাক দিয়ে মাছ ঢাকা। যখন সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি রাশিয়া কর্তৃক ক্রিমিয়া দখলের দিকে, তখনই মালয়েশিয়ান বিমানটি হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার সাথে ১৯৬৯ সালের আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনার মিল পাওয়া যায়। ভিয়েতনাম যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সমগ্র বিশ্বে যখন গণহত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ঠিক সেই সময়েই চাঁদে মানুষ পাঠিয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ নিক্সনের বিরুদ্ধে। আর ৯/১১? বোমার আয়তনের চেয়ে পেন্টাগনে সৃষ্ট গর্তের আকার ছোট হওয়ায় ৯/১১ বনাম ইরাক আক্রমণের রহস্য নিয়ে আজ অবধি সক্রিয় গবেষকেরা। গবেষকদের যুক্তি, ৯/১১-এর মূল উদ্দেশ্য ইরাক আক্রমণের আগে মাঠ তৈরিতে নানা ঘটনাপ্রবাহ সৃষ্টি করে ভিন্ন খাতে দৃষ্টি সরিয়ে দেয়া।
৯/১১ আর ইরাক আক্রমণের নাড়ির সম্পর্ক তৈরির কাজে একটা চাঞ্চল্যকার ঘটনা গুগলে সার্চ করে দেখতে পারেন। আক্রমণের আগে বুশ সরকার জোরেশোরে প্রচার করল, হাসপাতালের নবজাতকদের মাটিতে ফেলে দিয়ে হত্যা করছে সাদ্দামের বাহিনী। কেঁদে কেঁদে বিদেশী নার্স বলছেন, সৈন্যগুলো আমার সামনেই ইনক্যুবেটর থেকে তুলে নবজাতকদের আছাড় দিয়ে মেরে ফেলছে। বলেই সে কী কান্না যা আমিও শুনেছি। শিশু হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত মানুষ। ইরাক আক্রমণের জন্য অন্যান্য ত্রে তৈরির মধ্যে ‘ডব্লিউএমডি’র গুদাম এক নম্বরে, পরে যা মিথ্যা বলে প্রমাণ হয়েছে। ওই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত ছিল একাধিক প্রভাবশালী মুসলিম রাষ্ট্র, সাদ্দামকে সরিয়ে যারা ইসরাইলকেন্দ্রিক পশ্চিমা প্রভাবিত বিভক্ত মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের কর্তৃত্ববাদের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। সৌদি নাগরিক ওসামা বিন লাদেনের পিতার ৫০ বিলিয়ন ডলারের বহুমাত্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘কার্লাইল’ গ্র“পের সাথে বুশ পরিবারের পুরনো অর্থনৈতিক সম্পর্ক। ৯/১১-এর সময়েও বাবা বুশ ছিলেন এই ‘কার্লাইল’ গ্র“পেরই একজন বেতনভুক কনসালট্যান্ট। ইরাক আক্রমণ আর ৯/১১-এর যোগসূত্র প্রমাণ করল ‘ফারেনহাইট ৯/১১’-এর পরিচালক মাইকেল ম্যুর এবং অন্যরা ষড়যন্ত্র গবেষক। ওসামার বাবার ‘কার্লাইল’ গ্র“পের সাথে বুশ পরিবারের দীর্ঘ যোগাযোগের অনেক তথ্য পাওয়া যাবে অস্কারপ্রাপ্ত ওই ছবিটিতে। আর পূর্বপরিকল্পিত ইরাক যুদ্ধের জন্য আজ অবধি মনেপ্রাণে বুশকে ঘৃণা করে মার্কিনিরা, যে কারণে রিপাবলিকান পার্টির জন্য ফের মতায় আসা কঠিন। জরিপ অনুযায়ী, মার্কিনিরা এবার আনছেন হিলারিকে। পরবর্তী সময়ে নবজাতক হত্যার ঘটনাটি ফাঁস হলে দাঁড়ালো, যে নার্সটি কেঁদে কেঁদে এসব বলল, সে হচ্ছে ‘কুয়েতে’ নিযুক্ত ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতের’ বড় কন্যা যাকে মার্কিনি একটি সংস্থা দিয়ে ট্রেনিং দেয়ানো হয়েছিল যেন ইরাক আক্রমণকে গ্রহণ করে মার্কিনিরা। এসব বলছি কেন? কারণ ষড়যন্ত্র থিওরি আছে বলেই চাঁদে মানুষ পাঠানোর সাথে ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং নার্সের মিথ্যা কাহিনীর সাথে ইরাক যুদ্ধের সংযুক্তি প্রকাশ হয়েছে। ডব্লিউএমডির ঘটনাকে মিথ্যা স্বীকার করেছে ওয়াশিংটন। যা বলতে চাইছি, পশ্চিমের মিডিয়া এবং ষড়যন্ত্র গবেষকেরা স্বাধীন। তারা মূক কিংবা বধির কোনোটিই নয়, যে দাবি আমরা কখনোই করতে পারি না।

জঙ্গি প্রমোশনের পেছনে
বর্তমান সরকারের প্রতিটি শাখারই এক দাবি, জঙ্গি ও ধর্মীয় মৌলবাদে ভরে গেছে বলেই জিরো টলারেন্স। যারাই এ কাজে লিপ্ত তাদেরকে অন্য দেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ। বাস্তবে যে বস্তুর প্রমাণ নিয়ে বিতর্ক, সেই বস্তু নিয়ে সরকারের এত উৎকণ্ঠার কারণ কী? যখনই তারা এসব দাবি করে, তখন তাদের হাতে কোনো প্রমাণ থাকে না! উন্নত বিশ্বে সন্দেহাতীত প্রমাণ বা ব্যাখ্যা ছাড়া জঙ্গি সন্দেহ কদাচিৎ।
প্রশ্ন, সন্ত্রাস আছে কী নেই! সন্ত্রাস যে কী জিনিস, হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলাদেশী নাফিস। ৩৫ বছর পর যখন বের হবে, যৌবন তার ফুরিয়ে যাবে। সস্ত্রাস মোটেও ছেলেখেলা নয়। নাফিসের পরিণতি কে চায়?
সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ একা আওয়ামী লীগের কাম্য না হলেও বিষয়টি যেন ঠিক তাই-ই। সব বিবেচনাসাপেে সত্যিই সন্ত্রাস আছে কি না, নাকি আওয়ামী মন্ত্রীদের মুখের কথাই সব? এসব দুর্ঘটনা ঘটুক, কোনো সুস্থ মানুষই চাইবে না। অতীতে যা ঘটেছে, একটিরও নিরপে তদন্ত হয়নি; কিন্তু পরে সেগুলোই বরং আওয়ামী ট্রাম্পকার্ড হওয়ায় মন্ত্রীদের কথায় নিশ্চিত হয়েছে, দেশটা আফগানের মতোই জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য। বাস্তব কী বলে? সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ কায়েমে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্সের নামে বিরোধী দলকে তালেবানদের সারিতে দাঁড় করানো একমাত্র রাজনীতির ফেরিওয়ালাদের মুখেই শোভা পায়। বরং মূল সন্ত্রাসীর চেয়ে প্রমোটাররাই ভয়ঙ্কর। আল কায়েদার নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভয় ছড়ানোদের বিরুদ্ধে মানুষকেই সতর্ক হতে হবে। সন্ত্রাসের ভয়ঙ্কর থাবা প্রায় প্রত্যহ টের পাচ্ছে মিসর, ইরাক, পাকিস্তান, আফগানিরা। সকাল হলেই খবরÑ বাসে, মসজিদে, বিয়েবাড়ি, বাজারে যখন তখন সুইসাইড বোমা কিংবা গুলিতে মরছে শত শত। বরং যারাই শান্তিপূর্ণ দেশটিতে জঙ্গি শব্দটি লালন করছে, তারাই বরং দুশ্চিন্তার ত্রে গড়ছে যেন এই সুযোগে আজীবন মতায় থাকা যায়। বরং একপেশে হওয়ার বদলে পাঁচ বছরে অন্তত একটি অভিযোগেরও সন্দেহাতীত প্রমাণ দেয়নি তারা। ভয়ঙ্কর শব্দটিকে চাপিয়ে দিয়ে ১৬ কোটি মানুষের আত্মবিশ্বাসের ওপর আক্রমণের বিশেষ এজেন্ডা মানুষ বোঝে।
এ দেশে সন্ত্রাস নেই যার কয়েকটি নমুনা। দু-একটি ঘটনা বাদে ১২ মাসে ১৩ পার্বণ চলছে ১০০ ভাগ শান্তিপূর্ণভাবে। বিশ্ব ইজতেমার মতো লাখ লাখ মানুষের জমায়েতে পুলিশ চাইলেও দুষ্টচক্রকে ঠেকাতে পারত কি? ঠিক তেমনই বইমেলা, দুর্গাপূজা, রোজার মওসুম, ঈদ, বৈশাখ, বাণিজ্যমেলা… স্বাধীনতাজনিত উৎসব এবং আওয়ামী লীগের লাগাতার নিজস্ব কর্মসূচির মতো বিশাল অনুষ্ঠানগুলো। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এবং সহজ ভৌগোলিক যোগাযোগের কারণে দুর্ঘটনা অনেক দেশের চেয়ে সহজ সত্ত্বেও দুর্ঘটনামুক্ত জীবনযাপন প্রমাণ করে, সরকারের দুশ্চিন্তা অহেতুক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। সন্ত্রাস কী জিনিস টের পাচ্ছে পশ্চিমারা। যত নগণ্যই হোক, ধরতে পারলে প্রমাণসহ সর্বপ্রথম কোর্টের হাতে সোপর্দ করবে অভিযুক্তদের। হোক পাতা ফাঁদ, তবু এটাই সত্য, সক্রিয় টেপ এবং অন্যান্য প্রমাণসহ নিজস্ব উকিল দিয়ে ওই দিনই নাফিসকে আদালতে হাজির করল এফবিআই। আমাদের বেলায় হাতকড়া পরানো অভিযুক্তদের সাথে কখনোই নিজস্ব আইনজ্ঞ থাকে না বলে জিরো টলারেন্স বিষয়টি অবশ্যই একপেশে এবং অন্ধকারে। উল্টো গত পাঁচ বছরে হত্যা-গুম-ক্রসফায়ারের অভয়ারণ্য বাংলাদেশকে নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ববাসী।
ফেস বুক, গালাগাল, বক্তৃতায়, পোস্টারে সন্ত্রাস হয় না। সাতসকালে উঠেই বাজারে, মসজিদে, বিয়েবাড়িতে বোমার আঘাতে নিহত মিসরীয়, আফগানি, ইরাকি,
পাকিস্তানিদের মতো পরিস্থিতি এ দেশে নেই। বরং উৎসব আনন্দে গ্রামবাংলায় আমরা
শান্তিতে আছি, ভালো আছি, জঙ্গিমুক্ত দেশে আছি। তবে ‘সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ’ কারো মতা আঁকড়ে থাকার অস্ত্র হওয়ার কারণ, পশ্চিমাদের কাছে এই শব্দ ভালো বিক্রি হয়। নিরবচ্ছিন্ন পুঁজিবাদের প্রয়োজনে হরতাল-মিছিল আন্দোলনমুক্ত রাজনৈতিকভাবে মূক ও বধির বাংলাদেশের বিকল্প নেই। সে েেত্র নির্বাচন বৈধ না অবৈধ, ত্বকীর খুনের আসামি ‘ভ্রমরকে’ জামিন দিয়ে ‘ফকরুলের’ জামিন নাকচ, খুনের মামলার আসামি এরশাদ কেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, এসব গণতান্ত্রিক প্রশ্ন ততণ পর্যন্ত অবান্তর, যতণ নিশ্চিত হবে পুঁজিবাদ। খালেদা পড়েছেন এসব পুঁজিবাদীর জালে। আন্দোলন কেন বন্ধ হলো, ভোটারবিহীন নির্বাচনের পরও পশ্চিমাদের দুর্বোধ্য ভূমিকা সচেতন মহলকে এখনো ভাবায়নি। খালেদাকে যতই পরামর্শ দিক, নিরবচ্ছিন্ন পুঁজিবাদ নিশ্চিত রাখতে ভোটারবিহীন নির্বাচনে বরং ওদের লেজগুটানোই ৫ জানুয়ারিকে সম্ভব করেছিল। এত কিছু সত্ত্বেও এক কথা, দুই পকেই আলোচনায় বসতে হবে। আমাদের সাফ কথা, নির্বাচন হবে জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে এবং গণতান্ত্রিক মতে, সে েেত্র আলোচনায় বসা নিয়ে ফালতু উপদেশ ওদের মুখে মানায় না। আর এসব কারণেই সন্ত্রাস নির্র্মূলে পশ্চিমাদের সন্তুষ্টি এবং আগ্রহে সরকারের উৎসাহ আরো তুঙ্গে ওঠায় ক্রসফায়ারও মাত্রা ছাড়িয়েছে। পূর্বপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সম্ভব করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগগুলো বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছাতে পেরেছে বলেই ‘ইইউ’ এর মুখে সেই বিশেষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরকারের মতো একই নেতিবাচক মন্তব্য। বরং নির্বাচন গুম করতে মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসির বিরুদ্ধে বালুর ট্রাক আর জলকামান রাজনীতির মতো সন্ত্রাসী কাজে নীরব গণতন্ত্রের ধারকবাহকেরা। এই বর্বরতা তাদের দেশে ঘটলে কী প্রতিক্রিয়া দেখাত! এর ভূরি ভূরি উদাহরণ আমরা জানি। গার্মেন্টের ডলার মেশিন নিশ্চিত হওয়ায় আশ্বস্ত ওরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে। জিরো টলারেন্সের নামে যা ঘটছে, পুঁজিবাদী বিদেশীদের সায় ছাড়া সম্ভব না। অন্য দিকে জোটের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ শুনতে শুনতে কান্ত আমরা। যা বলতে চাইছি, সৌদির ঘাঁটি ছাড়া ইরাক আক্রমণ সম্ভব হতো না, পুঁজিবাদীদের হস্তপে ছাড়া ৫ জানুয়ারিতে আমাদের মৌলিক অধিকারও চরমভাবে ুণœ করা সহজ হতো না। দুঃখজনক, কোনোটিই এই বাংলার অ্যাক্টিভিস্টদের রাডারে নেই।
যারা এসব করে, জীবনের পরোয়া করে না। জিরো টলারেন্স সত্ত্বেও ওদের অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্কের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বরং বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখা উচিত। সন্ত্রাস থাকলে সাথে সাথে প্রমাণও থাকতে হবে। র‌্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিল্পমন্ত্রীও যা বললেন, এই দাবি তিনি আদৌ করতে পারেন কি না!
যখন কোনো শক্তি অশুভ এজেন্ডা নিয়ে আসে, তখন হঠাৎ চাঁদে মানুষ পাঠানোর মতো ঘটনা ঘটে। তখনই বরং বুদ্ধিমান জাতি চিন্তা করবে, কারা জড়িত শেয়ারবাজার, পদ্মা সেতু, ব্যাংক ও বিমান লুটপাট এবং হলমার্ক কেলেঙ্কারির সাথে! বিচার হলে কাদের মুখোশ উন্মোচন হতো!… ভোটারবিহীন নির্বাচন, ট্রাইব্যুনাল, ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্টকে কেন্দ্র করে যত মানুষ নিহত হয়েছে, সন্ত্রাস নাকি মৌলিক অধিকার রার সংগ্রাম! ড. ইউনূস, শেয়ারবাজার, হলমার্ক, কুইকরেন্টাল, ব্যাংক ডাকাতি, ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতি, তিস্তার পানি, জিএসপি বাতিল, রানা প্লাজা, তাজরীন, নিরাপত্তা বাহিনীতে অচেনা মুখ… ১৬ কোটি মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়া কেন জরুরি, মানুষ বোঝে; কিন্তু বাকস্বাধীনতায় মহাসঙ্কট। কত দ্রুত ভুলিয়ে দিলো রানা প্লাজা, ৫ জানুয়ারি এবং পদ্মা সেতুসহ হলমার্কের মতো ভয়ঙ্কর ব্যাংক জালিয়াতিগুলো। তাজরীন ঘটনার সাথে সাথে বিবাহ অনুষ্ঠান, রানা প্লাজার সাথে সাথে রেশমা, ৫ জানুয়ারির পরেই লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের বিশ্বরেকর্ড! ঠিক যেন মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান দিয়ে ক্রিমিয়া ঢাকা আর চাঁদে মানুষ পাঠিয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধের দুর্গন্ধ পবিত্র করা। নাগরিকদের সব অভিযোগই ফালতু নয়।
সন্ত্রাস আছে কি নেই প্রশ্নে আমরা আমাদের শিা, বুদ্ধি-বিবেক ব্যবহারে ব্যর্থ। বাস্তবতা হলো, ভয়ভীতি না দেখিয়ে বরং জনপ্রিয়তা যাচাই করা হোক। আমরাও বিশ্বাস করতে চাই না, একটি পুরনো ঐতিহ্যবাহী দল এবং তার সরকারের জনপ্রিয়তায় ৯০ ভাগের বেশি ধস। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর কী হচ্ছে এসব? সাধারণ মার পরিপ্রেেিত অতীতের ভুলভ্রান্তিগুলো সংস্কার করে যখন স্বাভাবিক পথে এগোতে চাইছে একটি দল, যখন তারা স্বাভাবিক রাজনীতির পথ খুঁজছে, ঠিক তখনই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দলটি ক্রমেই মূল আদর্শ বিচ্যুত হয়ে সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে এমন সব আজব কাণ্ড ঘটাচ্ছে যাকে কেন্দ্র করে ভারতমুখী দলটিকে নিয়ে চরম দুর্ভাবনায় ৯৯ ভাগ মানুষ। অনেকেরই সন্দেহ, মুজিবের দল আর এই দল এক নয়। আমরা কি স্তম্ভিত? যথেষ্ট হয়েছে, চলুন বরং অন্যান্য কথা রেখে সবার আগে ভোটাধিকারের কথা বলি। ভোটাধিকার নিশ্চিত হলে জঙ্গিবাদ এবং মৌলবাদ সবাই মিলে একসাথে মোকাবেলা করা যাবে। গণতন্ত্রের পথে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বাধা অগণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন করে প্রতিপকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র। ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া আর দৈবিক মৃত্যু সমান। যা সত্য, প-বিপরে চরম লড়াইয়ে ’৪৭-এর মতো দ্বিজাতিতত্ত্বে আবারো বিভক্ত জাতি। এবার আর হিন্দু বনাম মুসলমান নয় বরং বাঙালি বনাম বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের অসমাপ্ত যুদ্ধ। বাঙালির সাথে যুক্ত ‘পশ্চিমবঙ্গ’ এবং বাংলাদেশীর সাথে শুধুই ‘বাংলাদেশী’ জাতীয়তাবাদ, যার ভিত্তি ৪০-এর ‘লাহোর প্রস্তাব’।

ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ অর্থাৎ ১৯১৫ সালের মুসলিম রেনেসাঁকেন্দ্রিক আত্মপরিচয়ের অপ্রতিরোধ্য ুধা মোটেও যে অহেতুক বা রক্তপাতহীন ছিল না, প্রমাণ দেশ বিভাগের ইতিহাসে; কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের ৭৪ বছর পরও কি একই রক্তপাতে লিপ্ত হতেই থাকব নাকি নিজেদের ভুলভ্রান্তির অবসান ঘটিয়ে বিদেশী শত্র“ মোকাবেলায় বরং হাত মেলাব! যারা সত্যিই জঙ্গি কিংবা ধর্মীয় মৌলবাদী, আচার-আচরণে বরং তাদের সাথে আজকের গণতন্ত্রবাদীদের অনেকেরই সামান্য তফাত।
দ্রষ্টব্য : লেখাটি অ্যাক্টিভিজমের ভিত্তিতে
নিউ ইয়র্ক প্রবাসী, কলামিস্ট ও মানবাধিকার কর্মী
farahmina@gmail.com

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend