বিএনপি কি তত্ত্বাবধায়ক থেকে সরে গেল? সোহরাব হাসান

download (1)বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। ক্ষমতায় থেকেই শেখ হাসিনাকে তিনি তাঁর (এম কে আনোয়ারনির্বাচনী আসনে নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মহিলা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এম কে আনোয়ার বলেছেন, ‘চ্যালেঞ্জ করছিপ্রধানমন্ত্রী থেকে আমার নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন করুন। আমি দাঁড়াবপাস করতে পারলে সালাম করে আপনাকে প্রধানমন্ত্রী মেনে নেব।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন টোকিওতে। তিনি এম কে আনোয়ারের এই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করবেন কি না,সেটি এই মুহূর্তে জানার সুযোগ নেই। কিন্তু এম কে আনোয়ারের শেখ হাসিনার প্রতি চ্যালেঞ্জ রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটানোর একটি সুযোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। বিএনপির নেতা এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার মাধ্যমে বোঝাতে চাইছেন যে,নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রয়োজন হবে না। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই তিনি (এম কে আনোয়ারতাঁর (শেখ হাসিনাসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত আছেন।

সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেভাবে খুনোখুনি করেছেন তাতে জয়ের ব্যাপারে বিএনপির নেতার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগা অস্বাভাবিক নয়।

এম কে আনোয়ার কেবল বিএনপির অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতাই ননদুই মেয়াদেই বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। রাজনীতিতে আসার আগে আমলাতন্ত্রের শীর্ষ পদে ছিলেন। অতএব তাঁর  এই চ্যালেঞ্জকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। 

এম কে আনোয়ারের এই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছেতা হলো বিএনপির নেতারা আওয়ামী লীগ সরকার তথা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেও নির্বাচনী লড়াইয়ে যেতে প্রস্তুত আছেন। তাহলে আমাদের প্রশ্ন৫ জানুয়ারির  নির্বাচনকে তাঁরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন না কেনচ্যালেঞ্জটি নিলে নির্বাচনের ফল তাঁদের পক্ষেও যেতে পারত। শেখ হাসিনা এখন দলীয় সরকারের প্রধান। আর ৫ জানুয়ারি ছিলেন সর্বদলীয় সরকারের প্রধানযেখানে বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠেএখন এম কে আনোয়ার তাঁর নির্বাচনী এলাকায় শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচনী লড়াইয়ে যাওয়ার যেই চ্যালেঞ্জটি ছুড়ে দিয়েছেন৫ জানুয়ারি সেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন না কেন?তাঁর বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যেতাঁরা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে রাজি আছেন। আর সেটি এম কে আনোয়ারের আসনের জন্য সত্য হলে বাকি ২৯৯ আসনের জন্য নয় কেন?

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের পক্ষে বিএনপির প্রধান যুক্তি ছিলআওয়ামী লীগ সরকার আরও নির্দিষ্ট করে বললে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে তাঁরা নির্বাচন করবেন না। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বহু জনসভায় ও সংবাদ সম্মেলনে এ কথাটিই বলেছেন। শেষ পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করায় ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ওয়াক ওভার পেয়েছে। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও ঠেকাতে পারেনি। যেমন আওয়ামী লীগ ঠেকাতে পারেনি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন। দুটোই ছিল সংবিধান রক্ষার নির্বাচন।

এম কে আনোয়ার সাহেবরা যদি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেই এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি থাকেন,তাহলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করলেন কেনকেনইবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এত হরতালঅবরোধভাঙচুরজ্বালাওপোড়ানোর ঘটনা ঘটালেনদ্বিতীয় প্রশ্নএম কে আনোয়ারের এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি কি তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেঅর্থাত্ তাদের আগের অবস্থান ছিল কোনো অবস্থায়ই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন নয়। আর এখন প্রধানমন্ত্রী পদে রেখেই শেখ হাসিনাকে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে চাইছেন।

আমরা মনে করিএম কে আনোয়ারের এই বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার অবসানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। ৫ জানুয়ারির আগে জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো যেখানে আলোচনাটি রেখে গিয়েছিলেনসেখান থেকে নতুন করে শুরু হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ গঠিত হয়েছেতা পাঁচ বছর টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে জেদ করবে না। আর বিএনপিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় থাকবে না।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছিলেন যেএটি সংবিধান রক্ষার নির্বাচন। এ ছাড়া তাঁদের বিকল্প কিছু ছিল না। ভবিষ্যতে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আরেকটি নির্বাচন হতে পারে। তাঁরা নিশ্চয়ই পাঁচ বছর পরের নির্বাচনের কথা তখন বোঝাননি।

একটি অংশগ্রহণমূলক ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য দুই পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। এম কে আনোয়ারের বক্তব্যে বিএনপির ছাড় দেওয়ার পূর্বাভাস পেলাম। এখন আওয়ামী লীগ ছাড় দিতে রাজি হলেই দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হতে পারে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের এ বক্তব্যকে অনেকে ইউটোপিয়ান ভাবতে পারেনকিন্তু রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও অস্থিরতা কাটাতে এর বিকল্প আছে বলে মনে করি না। ফেনীনারায়ণগঞ্জলক্ষ্মীপুরের ঘটনা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার আগেই সরকারের উচিত হবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত করা।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend