যুদ্ধাপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায়কে ঘিরে শেরপুরে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা

kamaruzzaman_41055একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আলহাজ্ব মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলায় সোমবার চূড়ান্ত বিচারকে সামনে রেখে জঙ্গি নাশকতার আশংকায় শেরপুরে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা আরোপ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়ে মাঠে নেমেছে র‌্যাব, বিজিবিসহ অতিরিক্ত পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলার সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ১৭ সেপ্টেম্বর বুধবার দু’পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের বেঞ্চ মামলাটি যে কোনো দিন রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখার পর থেকেই কামারুজ্জামানের নিজ জেলা শেরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতসহ উগ্র মৌলবাদী স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক তত্পর হয়ে উঠছে। সূত্রমতে, চূড়ান্ত রায়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড বহাল থাকলে শেরপুরে বড় ধরনের জঙ্গি মিছিল, ভাংচুর, লুটপাটসহ নাশকতা সৃষ্টির আশংকা রয়েছে এবং ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রায় ঘোষণার সাথে সাথে চারদিক থেকে জঙ্গি মিছিল জেলা সদরে প্রবেশ করে শহর অচলকরণ এবং অবরোধ সৃষ্টি করে আন্তঃজেলাসহ রাজধানীর সাথে যেকোন পথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর বিশেষ তত্পরতায় শেরপুরে রাজনীতির মাঠে জামায়াতের অংশগ্রহণ খুব একটা না থাকলেও কামারুজ্জামানের মামলার চূড়ান্ত রায়কে সামনে রেখে তাদের অভ্যন্তরিন নীরব প্রস্তুতি থেমে নেই। কামারুজ্জামানসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের মামলার ফলাফলকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির চক্র ভেতরে ভেতরে শক্তি সঞ্চয় করে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনায় প্রস্তুত রয়েছে। আর ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান একটি ব্যাংকসহ জামায়াত ঘরানার প্রায় ১০/১২ টি প্রতিষ্ঠান আর্থিক যোগান দিচ্ছে বলেও খবর রয়েছে। সূত্র জানায়, একাধিক মামলায় ৫ শিবির নেতাসহ দলের ১০/১২ জন নেতা জেলা কারাগারে আটক থাকলেও এখনও অনেক নেতা-কর্মীসহ প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে। তাদের মাধ্যমে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের সুবাদে ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে জেলা-উপজেলা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত। পরিকল্পনা মোতাবেক ওই প্রস্তুতিতে কামারুজ্জামানের মামলায় প্রতিকুলে রায় ঘোষণার সাথে সাথে তার জন্মস্থান জামায়াত অধ্যুষিত বাজিতখিলা ইউনিয়নসহ শেরপুর সদর এবং অন্যান্য উপজেলা পর্যায়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সদর উপজেলাসহ সমগ্র জেলা থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক মাদ্রাসার শতশত শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে ভাগিয়ে নিয়ে কামারুজ্জামানের রায় পরবর্তী জঙ্গি নাশকতায় ঝাপিয়ে পড়তে পারে।
সর্বশেষ শনিবার সন্ধ্যায় জেলা শহরের খরমপুর এলাকায় শিবিরকর্মীরা হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছার পূর্বেই দ্রুত সটকে পড়ে তারা।

প্রস্তুত র‌্যাব, বিজিবিসহ অতিরিক্ত পুলিশ

এদিকে কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায়কে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য পরিস্থিতির আশংকা মাথায় রেখেই শেরপুরে জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্যান্য দপ্তরের সদস্যরা বিশেষ তত্পর হয়ে উঠেছেন। ওই তত্পরতার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের অফিসকক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, এনএসআই ও আনসার বাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এক বিশেষ সভা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন ওই বিশেষ সভার সত্যতা নিশ্চিত করে শ্যামলবাংলাকে জানান, যুদ্ধাপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায়কে ঘিরে সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইন-শৃঙ্খলার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের নেতৃত্বে জেলাশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করবে। পুলিশ সুপার মোঃ মেহেদুল করিম জানান, জামায়াতের শীর্ষ নেতা নিজামীসহ মীর কাশেম আলীর রায়েও পুলিশ এবং সন্ত্রাস ও নাশকতা বিরোধী সকল দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা সজাগ রয়েছেন। জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীদের পাকড়াও করতে ক’দিন যাবত নিয়মিত অভিযান চলছে। এছাড়া তাদের সম্ভাব্য আস্তানাগুলোর প্রতিও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। ২৭-বিজিবির (ময়মনসিংহ অঞ্চল) কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্ণেল মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, যুদ্ধাপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায়কে ঘিরে শেরপুরে সম্ভাব্য পরিস্থিতি বা নাশকতা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। আমরাও সার্বক্ষনিক খোঁজখবর রাখছি। একই কথা জানিয়ে র‌্যাব-১৪ (জামালপুর-শেরপুর) এর ক্যাম্প কমান্ডার মোঃ আনিসুজ্জামান বলেন, চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর কামারুজ্জামানের নিজ এলাকা শেরপুরে সম্ভাব্য যেকোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত র‌্যাব প্রস্তুত রয়েছে। এজন্য জামায়াত-শিবির ক্যাডারসহ নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির সাথে জড়িতদের পাকড়াও করতে বিশেষ অভিযান চলছে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend