প্রথম পর্বের ইজতেমা শুক্রবার শুরু : অবরোধে চরম হয়রানির শিকার মুসল্লিরা

image_172607.istemaআগামী ৯ জানুয়ারি থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হচ্ছে ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। বিশ্ব ইজতেমার মাঠ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।
মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় আসর এই বিশ্ব ইজতেমা।
শুক্রবার ফজরের নামাজের পর বিশেষ আম’বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার প্রথম পর্বের তিন দিনব্যাপী ইজতেমা আরম্ভ হবে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধে নানাবিধ বিড়ম্বনা আর চরম হয়রানিতে পড়েছে ইজতেমায় আসা দেশ-বিদেশের হাজার হাজার তাবলিগ অনুসারি ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
হযরত শাহজালাল ( রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার। কিন্তু অবরোধের কারণে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই বিদেশী ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের পরিবহনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অনেকটা সংকট ও বেগ পেতে হবে।
যানবাহন কম থাকায় যাত্রীদেরকে গুণতে হচেছ অতিরিক্ত কয়েক গুণ বেশি টাকা।
আজ ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে টঙ্গী তুরাগ নদীর পাড়ে ১৬০ একর বিশাল চটের ময়দানে দেশ-বিদেশের লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষ এসে অবস্থান নেবে বলে আশা করা হচেছ।
আজ বিকেল পর্যন্ত দেশ ও বিদেশের বেশ কিছু তাবলিগ অনুসারি ইজতেমা মাঠে এসে তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। অনেকে টঙ্গী, গাজীপুর, তুরাগসহ আশপাশের আত্মীয়-স্বজনের বাসায় উঠেছেন। অনেকে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসায় অবস্থান নিয়েছেন। এসব মুসল্লিরা শুক্রবার ইজতেমার প্রথম দিন সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ময়দানে প্রবেশ করবেন এবং এক কাতারের সামিল হয়ে পবিত্র জুম্মার নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা যাচেছ।
ইজতেমার মাঠে সরজমিন পরিদর্শণকালে মুসল্লিদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ইজতেমা ময়দান এখন প্রস্তুত রয়েছে। বিদেশী মুসল্লিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে উঁচু স্থান। মাঠের উত্তর পশ্চিম কোনে তাদের জন্য থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে ৫ ওয়াক্ত নামাজের জায়গা, ওযু-গোসলের পানি, খাওয়ার পানি, রান্না-বান্নাসহ অন্যান্য সকল ব্যবস্থা রয়েছে।
ইজতেমা মাঠের উত্তর, দক্ষিণ পাশে বেশ কয়েকটি দ্বিতীয় তলা ওযু, গোসল ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে রান্না-বান্নারও ব্যবস্থা রয়েছে। মাঠের উত্তর পাশে প্রবেশের দুইটি গেইট রয়েছে। পূর্ব পাশে দুইটি গেইট এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে আরো বেশ কয়েকটি গেইটসহ মোট ১৭টি প্রবেশ পথ রয়েছে। এসব প্রবেশ পথ ও সেনাবাহিনীর তৈরি ভাসমান সেতু দিয়ে ইজতেমায় আগত লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি আসা-যাওয়া করবেন।
প্রতিটি প্রবেশ গেইটে সার্বক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমা মাঠে বিশাল চটের সামিয়ানার নিচে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কমপক্ষে ২শ’ মোকাব্বির উঁচু মঞ্চ। ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময় ওই মঞ্চ থেকে একজন মোকাব্বির ( ব্যক্তি) আল্লাহ আকবর বলবেন।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ইজতেমা মাঠে এবং তার চারপাশ এলাকায় মুসল্লিদের নামাজ ও বয়ান শুনার সুবিধার্থে ১০ থেকে ১২ হাজার ছাতা মাইকের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ বছর প্রায় ২০ হাজার কাঁচা টয়লেট চট ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। মুসল্লিদের পানি ও পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থাও রয়েছে।
চলতি বছরের ইজতেমায় গাজীপুর জেলা পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের উত্তর পাশে র‌্যাব ও টেলিফোন শিল্প সংস্থার পাশে রয়েছে জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুম।
এ বছরও টঙ্গী প্রেসক্লাব ও থানা প্রেসক্লারের পক্ষ থেকে ইজতেমায় খোলা হয়েছে সাংবাদিকদের জন্য একটি মিডিয়া সেন্টার। এখান থেকে সাংবাদিকরা ইজতেমার খবরাখবর ও তথ্য নিতে পারবেন।
ইজতেমার আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ময়দানের ভেতরে ও বাইরে নিয়োজিত থাকবে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য। এরা পোশাকে, সাদা পোশাকে ও মুসল্লি বেশে পুরো মাঠ তদারকি করবেন।
ইজতেমা মাঠের পশ্চিম কোনে নদীর পাড়ে রয়েছে একটি লাশ ঘর। ইজতেমায় আগত মুসল্লি কেউ যদি অসুস্থ হয়ে মারা যায় তাহলে তার লাশ ওই ঘরে রাখা হয়। লাশ ঘরের পাশে একটি মালামাল হারানো ও প্রাপ্তির ঘর রয়েছে।
জঙ্গি ও ইবোলা ভাইরাস ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিমানবন্দরগুলোতে অভ্যর্থনা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে বিদেশ থেকে আগত মুসল্লিদের শারিরীক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থলবন্দরগুলোতেও অনুরূপ ব্যবস্থা নয়া হয়েছে। যাতে কোন জঙ্গি বা ইবোলা ভাইরাসবাহী মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে ঢুকতে না পারেন, সেদিকে কড়া নজরদারি রাখা হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল।
গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, ইজতেমার নিরাপত্তায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ, টহল পুলিশ, ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে, র‌্যাবের পাশাপাশি পুলিশেরও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। দুর্ঘটনা ও ভিআইপি বহনের জন্য ৩টি হেলিপ্যাড রয়েছে। ইজতেমার নিরাপত্তায় সাড়ে ৯ হাজারের মতো পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুমও স্থাপন করা হবে। যেখানে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা যে কোন অগ্নিকান্ডের বিষয়ে সতর্ক অবস্থায় থাকবেন।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. আনিসুর রহমান জানান, মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবাদানে ৬০/৭০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিক্যাল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে টঙ্গীর মন্নু গেইট, এটলাস গেইট, বাটা কারাখানার গেইট ও টঙ্গী হাসপাতাল মাঠসহ ৬টি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধপত্র বিতরণের জন্য বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ের প্রায় শতাধিক চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ইজতেমা ময়দানের চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে। আশপাশের খাবারের দোকানে ও ইজতেমাস্থল এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার নিশ্চিত করতে ১২টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হবে। মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন স্টেশন থেকে ৩শ’টি বিআরটিসি বাস চলাচল করবে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বিদেশি মেহমানদের যাতায়তের জন্য ৬টি এসি বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে।
রেলওয়ের দপ্তর থেকে জানানো হয়, রেলওয়ে ইজতেমায় মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে মুসল্লিদের যাতায়াতে আন্ত:নগর ট্রেন সমূহের যাত্রা বিরতি থাকবে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend