অবশেষে জন্মের ৩০ বছর পরে পিতৃ পরিচয় পেল তাহমিনা আক্তার সিমু

DSC00163শেরপুর জেলার সদর উপজেলার আলিনাপাড়া গ্রামে বাবা ফরিদ আহাম্মেদ ও মাতা দেলুয়ারা ইয়াছমিনের এক মাত্র কন্যা তাহমিনা আক্তার সিমু। জন্মের ৩০ বছর পরে পিতৃ পরিচয় মেলে তার। গত ২১ জানুয়ারী বুধবার এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনা সূত্রে প্রকাশ, ১৯৮৩ সালে আলিনাপাড়া গ্রামের মোঃ আশরাফ মাস্টারের একমাত্র ছেলে ফরিদ আহাম্মেদ সাথে একই গ্রামের মোঃ জবেদ আলীর কন্যা দেলোয়ারা ইয়াছমিনের আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিবাহ হয়। বিবাহের সময় ফরিদ আহম্মেদ এইচএসসিতে অধ্যয়রত ছিল, কন্যা দেলোয়ারা ইয়াছমিন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী।
উল্লেখ্য, ফরিদ আহাম্মেদ-এর বিবাহের বহু আগেই তার মা-বাবার সম্পর্ক ছিন্ন হয়। তার মা-বাবার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরপরই তার পিতা আশরাফ মাস্টার মোছাঃ পারুল বেগম নামে জনৈক মহিলাকে বিবাহ করেন। পারুল বেগমের ঘরে দুই কন্যা সন্তান আমেনা পারভীন ও সাহানা পারভীন জন্ম নেয়।
ফরিদ আহাম্মেদের বিবাহের পর হইতে সৎমাতা ছেলে ফরিদ আহাম্মেদ ও ছেলের বউ দেলুয়ারা ইয়াছমিনের উপর অন্যায় অত্যাচার ও জোর জুলুম চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে ছেলে ফরিদ আহাম্মেদ পাগলপ্রায় হয়ে পড়ে।
উক্ত অবস্থায় ১৯৮৫ সালের ১ জানুয়ারী দেলুয়ারা ইয়াছমিনের ঘরে কন্যা সন্তান তাহমিনা আক্তার সিমু জন্মগ্রহণ করেন। একদিকে স্বামী পাগলপ্রায় অপর দিকে সৎ শ্বাশুড়ীর অত্যাচারে অবশেষে দেলুয়ারা ইয়াছমিনের স্বামীর বাড়ী থেকে বিতাড়িত হয়ে ঠায় মেলে বাবা-মার বাড়ীতে। মাতা দেলুয়ারা ইয়াছমিন কোন দিন স্বামীর দাবীতে আশরাফ মাস্টারের বাড়ীতে পা ফেলতে পারেনি। দিতে পারেনি কন্যা সন্তানকে পিতৃ পরিচয় পর্যন্তও।
বড় হতে থাকে সিমু। সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষায় থাকে না। সময়ের পরিক্রমা তাহমিনা আক্তার সিমুর বিয়ের বয়স হয়ে যাওয়ায় মাতার সাহায্যেই তাকে শেরপুর পৌরসভাস্থ নবীনগর মহল্লার জাহিদ নামে জনৈক এক ছেলের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরালয়ের লোকজনের মুখে পিতৃহীনতার কথা শুনতে শুনতে অবশেষে মুচড়ে পড়ে পড়ে সিমু। মাতা দেলুয়ারা বেগমের কাছে বার বার পিতৃপরিচয় জানতে চায় সিমু।
অবশেষে, কন্যার অবস্থা বেগতিক দেখে নবীনগরস্থ দুলাল হাজী ও জনৈক আ’লীগ নেত্রী সহায়তা কন্যা সন্তানকে নিয়ে গত ২১ জানুয়ারী বুধবার আলিনাপাড়া গ্রামের আশরাফ মাস্টারের বাড়ীতে যায় দেলোয়ার ইয়াসমিন। দীর্ঘদিন দ্বিতীয় স্ত্রী পারুল বেগমের বাধায় নাতী তাহমিনা আক্তার সিমুর পরিচয় না দিলেও অবশেষে উপস্থিত লোকজনের চাপের মুখে দাদা আশরাফ মাস্টার নাতনীর পরিচয় স্বীকার করেন। আলিনাপাড়া গ্রামের গণমান্য ব্যক্তির সহায়তা তাহমিনা আক্তার সিমুর পিতৃ পরিচয় মেলে।
কিন্তু বিধি বাম, স্বার্থন্বেষী সৎ ছোট ফুফু শেরপুর পৌরসভাস্থ দিঘার মহল্লায় অবস্থিত দিঘারপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আমেনা পারভীন ও বড় ফুফু চিথলিয়া দপ্তপাড়া গ্রামের চিথলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষিকা সাহানা বেগম বাধ সাধে, পৈত্রিক সম্পদ থেকে সৎ ভাই ফরিদ আহাম্মেদের কন্যাকে ভাগ না দেওয়ার জন্য। অবশেষে তাহমিনা আক্তার আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলতে থাকে, আমি সম্পদের ভাগ নেওয়ার জন্য আসিনি, এসেছি আমার পিতৃ পরিচয়ের দাবীতে। উপস্থিত লোকজনের সন্মুখে বৃদ্ধ ও পাগল বাবা ফরিদ আহমেদকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। অবশেষে পাগল বাবা ফরিদ আহম্মেদ ওরফে তোতা পাগলা ও মাতা দেলোয়ারা ইয়াসমিনকে সঙ্গে নিয়ে তার স্বামীর বাড়ীতে চলে আসে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend