জাতীয় পরিচয় পত্র ও বাংলাদেশ

জাতীয় পরিচয় পত্র ও বাংলাদেশ

“জাতীয় পরিচয় পত্র ও বাংলাদেশ ” একটু পুর্বের দিকে ফিরে গেলে দেখতে পাব, নির্বাচনে কেও যাতে জাল ভোট ( এক জনের ভোট অন্যজন) প্রদান করতে না পারে সেই উদ্যেশ্যেই মুলত ২০০৮ সাল থেকে সারা দেশে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার পরই চালু হয় জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি। সাদা চোখে জাতীয় পরিচয়পত্র একটি পেপার বা প্লাস্টিকের স্মার্ট কার্ড হলেও রাষ্ট্রীয় ভাবে কাজে লাগাতে পারলে এই জাতীয় পরিচয়পত্র টি ১৮ কোটি মানুষেরই সুফল বয়ে আনবে। তার জন্য নতুন করে কোন প্রযেক্ট বা বাড়তি খরচের কোন প্রয়োজন হবে না,শুধুমাত্র একটা সিস্টেম এ প্রবেশ করতে হবে। আর তা হলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দপ্তর গুলিতে এন আই ডি কার্ডের তথ্য সংযুক্ত করতে হবে এবং যথেচ্ছ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।বাংলাদেশের অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কাজে আইডেন্টির জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে নাগরিকগন এর সুফল পাচ্ছে না। উদাহরণ সরুপ আন্তনগর ট্রেনের টিকিট ক্রয় করার সময় একজন যাত্রী একটা এন আই ডি কার্ডের বিপরীতে একই সময়ে একদিনে সর্বোচ্চ ৪ টি টিকিট ক্রয় করতে পারেন। এরপর শত চেষ্টা তদবির করেও ওই একই দিনে সেই এন আই ডি কার্ড দিয়ে আর কোন টিকিট ক্রয় করা সম্ভব হয়না কেননা তার ঐ দিনের সুবিধা / কোটা পূর্ণ হয়েছে। আর এটার নামই সিস্টেম যেখানে রেলের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষও সিস্টেমের বাইরে কিছু করতে পারে না। শুধু ট্রেনের টিকেটের জন্য এই আই ডি কার্ডের প্রযুক্তির সিস্টেম সংযুক্তি না করে সব ক্ষেত্রেই করা উচিৎ । তাহলেই দেশের ১৮ কোটি মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্র বা এন আই ডি কার্ডের সুফল সমান ভাবে ভোগ করবে। বর্তমানে জমি রেজিষ্ট্রেশন করার সময় বিক্রেতা এবং ক্রেতার উভয়েরই জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেটা শুধু মাত্র কাগজ বা ডকুমেন্ট হিসাবে কাজীর গরুর মতো ( কেতাবে আছে গোয়ালে নেই) ব্যবহৃত হয়। ভুমি/ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাব রেজিস্ট্রার অফিসে যদি ক্রেতার এন আই ডি কার্ড টি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের টিকিট ক্রয় করা সিস্টেমের মতো ব্যবহার হতো তাহলে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার যে কোন স্থানেই কোন ব্যাক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র বা এন আই ডি কার্ডের নাম্বারের বিপরীতে কতটুকু জমি নিবন্ধন করা আছে বা ক্রয় করা আছে সেটা সরাসরি সাব রেজিস্ট্রার অফিসের ওয়েবসাইটে সার্চ দিলেই সাব রেজিস্ট্রার খুব সহজেই জানতে পারতেন। এতে করে একই ব্যাক্তির এন আই ডি কার্ড দিয়ে ( সরকার নির্ধারিত জমির পরিমাণ) নির্দিষ্ট পরিমান জমির অতিরিক্ত জমি রেজিষ্ট্রেশন বা মালিক হওয়া সম্ভব হবে না । কোন এন আই ডি কার্ড নাম্বার দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমান জমি কেনার কোটা যদি পুর্ন হয়ে যায় তাহলে সেই এন আই ডি কার্ড দিয়ে নতুন করে জমি রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবে না এবং সাব রেজিস্ট্রার অফিসের ওয়েবসাইটে এন্ট্রি করার সময় রেড মার্ক বা এরর দেখাবে। এমন সিস্টেম চালু থাকলে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদেরও এন আই ডি কার্ড দিয়ে অঢেল সম্পত্তির মালিকানা হওয়া সম্ভব হতো না। এটা শুধু সাব রেজিস্ট্রার অফিসে নয় সকল মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অফিসে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বীমা, সঞ্চয়পত্র সব ক্ষেত্রেই চালু করতে হবে এতে করে ১৮ কোটি মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্র বা এন আই ডি কার্ডের সুবিধা ভোগ করবে। পেশা অনুযায়ী কোন ব্যাক্তির ইনকাম কত এবং তিনি কত টাকার মালিক হতে পারেন সেটা এন আই ডি কার্ড নাম্বার দিয়েই বোঝা যাবে। কেও হটাৎ তার অবৈধ ইনকামের অতিরিক্ত টাকা ব্যাংকে জমা রাখতে গেলেই তার একাউন্ট এ রেড সিগনাল দিবে ( দেশের সব ব্যাংকের নিকট সকল এন আই ডি নাম্বারের সংযুক্তি থাকবে যা অলরেডি আছে ) এবং খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও সেই ব্যাক্তির অবৈধ ইনকামের টাকা ব্যাংকে জায়েজ করতে পারবে না। আর নামই সিস্টেম এতে করে একজন পিওন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হওয়া তো অনেক দুরের ১ কোটি টাকা লেনদেন করার সময়েই ধরা পরবে। এই জাতীয় পরিচয়পত্র বা এন আই ডি কার্ড সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের সকল নাগরিকদের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য খুব সহজেই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। বর্তমানে দেশের প্রচলিত নিয়মে বিদ্যমান সিস্টেমে এই দেশের এক হাজার একর জমির মালিকের ভুমি রেজিষ্ট্রেশন ফি এবং কোন ভুমিহীনের ( যার কোন জমি নেই) জমি রেজিষ্ট্রেশন ফি একই। যা কখনো হতে পারে না। যেহেতু তাদের সম্পদের পরিমাণ ভিন্ন তাহলে জমি রেজিষ্ট্রেশন ফি সমান হবে কেন? এমন অনেক নাগরিক আছেন যার কোন জমি বা বাসা বাড়ি কিছুই নেই কিন্তু তিনি তার চাকরির সারা জীবনের ইনকাম দিয়ে ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করতে চাচ্ছেন, এই নাগরিকের জমি ক্রয়ের রেজিষ্ট্রেশন ফি এবং একজন শিল্পপতি যিনি কিনা ১০০ একর জমির মালিক তার জমি ক্রয়ের রেজিষ্ট্রেশন ফি অবশ্যই ভিন্ন করতে হবে। এই দেশের অনেক নাগরিক আছেন যিনি মধ্য প্রাচ্যের কোন দেশে ক্লিনার হিসাবে বিদেশে চাকরি করতে যাবেন তার জন্য পাসপোর্ট ফী, এবং একজন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজারের পাসপোর্ট ফী অবশ্যই ভিন্ন হতে হবে। এন আই ডি কার্ড নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট অফিসে সার্চ করলেই বুঝতে পারবেন তার পেশা কি এবং কোন নাগরিকের আর্থিক অবস্থা কেমন, কে কোন কাজে পাসপোর্ট করতে চাচ্ছেন। কিন্তু প্রচলিত নিয়মে দু জনেরই পাসপোর্ট ফি সমান। তাদের যেহেতু ইনকাম সমান নয় তাহলে পাসপোর্ট ফি কেন সমান হবে? অনুরুপ ভাবেই সকল সরকারি সুযোগ সুবিধা পাবে প্রত্যেক নাগরিকের আর্থিক বিষয় বিবেচনা করে। আর সেটার মানদন্ড জাতীয় পরিচয়পত্র বা এন আই আই ডি কার্ড যেটা নির্মোহ ভাবে ব্যবহৃত হবে। এতে করে বাংলাদেশের জনগণের আর্থিক বৈষম্য কমে আসবে। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ানোর ক্ষেত্রেও মা বাবার পেশা এবং ইনকামের হিসাব বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নির্ধারণ হবে। একজন রিকশা ওয়ালা এবং একজন সচিবের ছেলে একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হলেও তাদের টিউশন ফি অবশ্যই ভিন্ন হতে হবে। এতে করে সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের মুল স্পিরিট বাস্তবায়িত হবে।

প্রকৌশলী এম মোকাদ্দেছ বিল্লাহ (কাওছার)
এম ৪০৫৫৭, আই ই বি, ঢাকা।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend