উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়াই সব দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী
রাজনৈতিক প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারাদেশে সুষ্ঠুভাবে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেই জনগণ তাদের পছন্দ মতো প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পেরেছে। তিনি বলেন, আমরা চেয়েছি নির্বাচনগুলো যাতে যেন তেন মতো না হয়। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতসহ সব সবদলের সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে আসতে পেরেছেন। একটি সরকার যে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে পারে সেটি এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আজ শনিবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইসচেয়ারম্যানদ্বয় এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ চাইলে জামায়াতে ইসলাম একটি আসনেও নির্বাচিত হতে পারতো না। তিনি বলেন, ৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বলেছিল তারা উপজেলা পদ্ধতিতে বিশ্বাস করে না, আমরা ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে উপজেলা নিয়ে একটি কমিটি গঠন করি। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকারকে কিভাবে শক্তিশালী করা যায়, তার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে উপজেলা পদ্ধতিতে আর যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সরকারের বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা। প্রতিটি উপজেলায় একটি মাস্টার প্ল্যান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোথায় হাসপাতাল হবে, কোথায় বিদ্যুৎ যাবে, কোথায় স্কুল প্রতিষ্ঠিত হবে তার একটি প্ল্যান এমনভাবে করতে হবে যাতে আবাদী জমি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
মহাজোট নেতা বলেন, আমাদের জমি রক্ষা করতে হবে, ১৬ কোটি মানুষকে খাবার দিতে হবে, খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে শহর গড়ে তুলতে পারলে এ সব করা কঠিন কাজ নয়।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর মেহনতি মানুষের জন্য কাজ করছি। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যে কোনো পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে পরিকল্পনাটি কার্যকর হয়। টাকা-পয়সা যা দেই তা যেন মানুষের কাজে লাগে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি। যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানে সোলার প্যানেল করে দিচ্ছি। যাতে করে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতো আজে-বাজে কথা বলতো না। মুক্তিযুদ্ধ এবং যে সংবিধান সারা বিশ্বের মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছে, তা নিয়ে কটাক্ষ করার মত দুঃসাহস তারা দেখিয়েছে।
অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী ব্যক্তির হাতে যে দল গঠন হয়েছে সে দলও অবৈধ’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য সে অবৈধ দল থেকে ছবক শুনতে হয়। যারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদেরকে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কাজেই সেই জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিও অবৈধ।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা হাইকোর্টের রায় মানে না। প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে কে প্রশ্ন উঠালো? যার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন মেজর ছিলেন। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমোশন দিয়ে যাকে মেজর জেনারেল করেছিলেন। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী খন্দকার মোশতাকের হাতে জিয়া হলেন সেনা প্রধান। সেনা প্রধান হয়ে তিনি তাহের, খালেদ মোশাররফসহ বহু মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খন্দকার মোশতাককে বিদায় দেয়ার পর সায়েম সাহেবকে রাষ্ট্রপতি করা হয়। পরে তাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন জিয়া। তিনি বলেন, আর্মি রুল ও সংবিধান ভঙ্গ করে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। পরে তিনি হ্যাঁ-না ভোট করেন। সে সময় থেকে ভোট কারচুপি শুরু হয়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ইতিহাস কেউ বিকৃতি করতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে সমস্ত রাজাকার, আলবদর ও যুদ্ধাপরাধীর হাতে জিয়াউর রহমান জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন তাদের বিচার হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, লাখো কণ্ঠে আমার সোনার বাংলা গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান করে নিয়েছে। এ রেকর্ডের মাধ্যমে বাঙালি জাতি আবার প্রমাণ করেছে দেশ প্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ দেশ একদিন বঙ্গবন্ধুর কাক্সিক্ষত সোনার বাংলায় পরিণত হবে। টুঙ্গিপাড়ার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন হয়ে গেছে, পরস্পরের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলতে হবে, মিলেমিশে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
অনুষ্ঠানে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফা, ভাইস চেয়ারম্যান অসীম কুমার বিশ্বাস ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফসানা বেগম মিমি বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ। অনুষ্ঠান শুরুর আগে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া প্রদান করা হয়।