চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পথে সাঈদীর মামলা

চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পথে সাঈদীর মামলা

রাজনৈতিক প্রতিবেদক:
জামায়াতের নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিলে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার।

এরমধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দ্বিতীয় মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের বিচারিক কার্যক্রম একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। যা আগামী সপ্তাহেই শেষ হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আগামী ১৩ এপ্রিল থেকে মামলার পরবর্তী শুনানি শুরু হবে। ওইদিন আসামিপক্ষ রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তির বিরুদ্ধে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। আসামিপক্ষের জবাবের পর প্রয়োজনে রাষ্ট্রপক্ষও বক্তব্য দিতে পারবেন। সব মিলিয়ে আগামী সপ্তাহেই এ মামলার আপিল শুনানি শেষ হতে পারে।

বিধান অনুযায়ী ওইসব শুনানি শেষে আপিল বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে সাঈদীর আপিল খারিজ করে দিলে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে। অথবা ওই আপিল খারিজ না করে রায় ঘোষণার জন্য একটি দিন ধার্য করতে পারেন আপিল বিভাগ।

রায়ে আপিল বিভাগ সাঈদীর আপিল খারিজ করে দিলেও পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করতে কিছুদিন সময় নিতে পারেন।

এর আগে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই দণ্ডের বিরুদ্ধে আবদুল কাদের মোল্লা ও রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে পৃথক আপিল দায়ের করেন।

গত বছরের ১ আগস্ট ওই আপিলের শুনানি শেষ হয়। কিন্তু সংক্ষিপ্ত রায় দেওয়া হয় ১৭ সেপ্টেম্বর। আর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয় ৫ ডিসেম্বরে।

পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়া পর্যন্ত কাদের মোল্লা রিভিউ পিটিশন দায়ের করতে পারেননি। এরপর রিভিউ পিটিশনের শুনানি শেষে ১২ ডিসেম্বর তা খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ওই দিনই সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় এ পর্যায়ে সাঈদীর রায় ঘোষণার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করতে পারেন আপিল বিভাগ।

ন্যায় বিচারের স্বার্থে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড বহাল চায় রাষ্ট্র

ন্যায় বিচারের স্বার্থে আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড বহাল চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আবেদন করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের শেষ দিনে আদালতের কাছে তিনি এমন আবেদন জানান।

যুক্তি উপস্থাপন করতে গিয়ে তিনি বলেন, এক মোমেনার সাক্ষীতে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। মোমেনার মত নির্ভরযোগ্য সাক্ষী এখানেও রয়েছে।

সাক্ষীদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, সাঈদীর অপরাধ আরো ঘৃণ্য ও মারাত্মক। হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, পাক বাহিনীকে আমন্ত্রণ ও অভ্যর্থনা, অগ্নি সংযোগসহ সব ধরনের অপরাধ তিনি করেছেন।

এটর্নি জেনারেল বলেন, হত্যার চেয়েও ভয়ানক আরেকটি অপরাধ তিনি (সাঈদী) করেছেন। সেটা হচ্ছে, জোর করে মানুষকে ধর্মান্তরিত করা।

তিনি বলেন, এই মামলায় ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় যথার্থ হয়েছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে অবশ্যই এই রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকা উচিত।

অন্যদিকে প্রমাণিত হলেও সাজা না হওয়া ছয় অভিযোগে এই জামায়াত নেতার শাস্তি চেয়ে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করেন জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর আপিল আবেদনের শুনানি শুরু হয়। শুনানির ২৫তম দিনে গত ২৯ জানুয়ারি আবেদনের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়।

বিদেশে অবস্থান করায় আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের অনুপস্থিতিতে এডভোকেট এস এম শাহজাহান যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। আসামিপক্ষের পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ২০টি অভিযোগের মধ্যে ৮টি অভিযোগের ওপর যুক্তি পেশ করেন আসামিপক্ষ। অপরদিকে ট্রাইব্যুনাল যে ১২টি অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দিয়েছেন, সেগুলোতেও আপিলে ‘পূর্ণ ন্যায়বিচার’ চায় রাষ্ট্রপক্ষ।

আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছিল। এরমধ্যে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছে। ওইসব অভিযোগের দুটিতে তাকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি ছয়টি অভিযোগে কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend