নিজের সম্পর্কে যে বিষয়গুলো আপনার এখনই ভেবে দেখা উচিত!
। স্বাস্থ্য কথা ডেক্স:
আমরা প্রায়ই বিভিন্ন পত্রিকায় কিভাবে আরও সুখী হওয়া যায়, সম্পর্ক ভালো করা যায়, সফল হওয়া যায় ইত্যাদি সম্বন্ধে নানা রকম লেখা পড়িএতে থাকে অনেক সমাধান, টিপস। অনেক সময়ই আমরা সেই টিপস গুলো নিজের জীবনে প্রয়োগ করি এই আশা নিয়ে যে হয়তো এগুলো সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে। অথচ একটাবার লক্ষ্য করি যে প্রায় প্রতিদিনই এমন কিছু কাজ আমরা করি যা আমাদেরকে নিজের অজান্তেই করে তোলে দুঃখী ও হতাশাগ্রস্থ। সেই ভুলগুলো আমরা সবাই-ই প্রতিদিন করছি, আর বুঝতেও পারছি না যে সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে জীবনের। জীবনে সুখে ও শান্তিতে থাকতে চান? তাহলে এখনোই নিজের এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার দ্বিতীয়বার ভেবে দেখা উচিত।
কারও উপর বিদ্বেষ রাখা
আমরা অনেকেই অন্য কারও উপর বিরক্তি বা রাগ পুষে রাখি। তাকে ক্ষমা করতে পারি না। কিন্তু খেয়াল করে দেখুন, আপনার এই ক্ষমা না করার পেছনে আছে সেই মানুষটাকে কষ্ট দেয়ার একটা প্রচ্ছন্ন ইচ্ছা যা একসময় আপনারই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত রাগ বা ঘৃণার কারনে প্রায়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারা যায় না। তাই একবার নিজেকে তার জায়গায় রাখুন, তার অবস্থা, পারিপার্শ্বিকতা, পারিবারিক আবহাওয়া, তার শিক্ষার পরিবেশ সবকিছু চিন্তা করুন। দেখবেন হয়তো আগের মত বিরক্ত বা রাগ লাগছে না। নিজের স্বার্থের বিপরীতে ক্ষমা করতে পারা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয় ।
নিজের স্বপ্নকে উপেক্ষা করা
আমাদের জীবনের খুবই দুঃখজনক অধ্যায় এটি যেখানে প্রায়শই আমরা প্রয়োজনীয় জিনিসের পিছনে ছুটতে ছুটতে নিজের স্বপ্নের কথা , ইচ্ছার কথা ভুলে যাই। Marie Forleo বলেছেন, “The world needs that special gift that only you have.” কিন্তু আমরা আমাদের সেই বিশেষত্বকে কবর দিয়ে “নিরাপদ” পথ অনুসরণ করি। নিজের মত করে বাঁচার সাহসটাই হারিয়ে ফেলি। কিছু সময় পর কিন্তু ঠিকই আমাদের অনুশোচনা করতে হয় যে হয়তো চেষ্টা করলে আমিও পারতাম আমার স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপ দিতে। আর তাই হয়তো আমরা আমাদের স্বপ্ন উপেক্ষা করে অন্য কারও জীবনে নিজের স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখি।
জীবনে আনন্দময় করে এমন কিছুতে সময় না দেয়া
আপনি হয়তো লিখতে, আঁকতে বা গান গাইতে ভালবাসেন । কিন্তু আপনি কখন ওই এগুলোকে আপনার প্রয়োজনীয় কাজের চেয়ে অগ্রাধিকার দেন না। আপনি কখনো জানবেনই না কত সহজে এই ছোট ছোট আনন্দ গুলোও আপনাকে সুখী করতে পারে। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কাজ হয়তো আপনাকে আর্থিক ভাবে সুখী করবে কিন্তু আপনার জীবন হয়ে যাবে রঙহীন ।
তুলনা
গৌতম বুদ্ধ বলেছেন ” তুলনা আনন্দ কে চুরি করে”। আমরা অন্য লোকের জীবনে কি ঘটছে , তারা কি কিনছে, কেমন জীবনযাপন করছে তা দেখে হিংসা করি, মন খারাপ করি, sense of deprivation এর শিকার হই। কিন্তু আমরা জানি না হয়তো যাকে দেখে হিংসা করছেন তার সন্তান হয়তো ড্রাগে আসক্ত , মেয়ের হয়তো ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। তুলনা শুধু নিজেকে ছোট ভাবতে শেখায়।
অল্পতেই তুষ্ট থাকা
সত্যিকার সুখী মানুষ তার আনন্দ কে কষ্ট করে খুঁজে নেয়। জীবন যেমন চলছে তেমনই ভালো এটা তারা মেনে না নিয়ে নতুন কিছুর অনুসন্ধান করে বলেই তারা কাজ করে আনন্দ পায় ।
সৃজনশীলতার চেয়ে ভয় কে বেশি গুরুত্ব দেয়া
আমরা একটা নতুন কাজের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই কাজ টি সঠিক হবে কিনা টা ভেবে চিন্তিত হই। অনেক সময় নতুন কিছু করতে ভয় পাই। এই ভয় আপনার সৃজনশীলতা কে নষ্ট করে।Jack Kornfield বলেছেন , “Fear is the cheapest room in the house. I would like to see you in better living conditions.” তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনার জীবনে ভয়ের জায়গাটা কোথায় হওয়া উচিৎ।
দানের মনোভাব না থাকা
একটা কথা আমরা সকলেই জানি যে কিছু নেয়ার চেয়ে দেয়ার আনন্দ অনেক বেশি। কিন্তু আমরা দিন দিন এতো বেশি স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি যে সব কিছুতেই হিসাব করছি, লাভের কথা চিন্তা করছি। আমি একজন আইনজীবীকে চিনি যিনি তার অফিসের বাইরে শুক্রবারে শিশুদের গিটার শেখান। এর জন্য কোন অর্থ নেন না। তিনি এটি করেন কারন তিনি এতে আনন্দ পান। এই কিছু দেয়ার মাঝে লাভ শুধু আপনার আনন্দময় কিছু সময় যার মূল্য অর্থ দ্বারা পরিমাপ যোগ্য নয়।
মুহুর্তেই জীবনকে ব্যর্থ মনে করা
আমরা সর্বদা ভবিষ্যৎ চিন্তা ব্যস্ত থাকি এবং সেই মোতাবেক প্লান করে কাজ করি। হঠাৎ যদি একটু ছন্দপতন হয় আমরা মনে করি আমাদের জীবন ব্যর্থ । একবারও ভাবি না সামনে আরও অনেক সুযোগ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
সবশেষে বলা যায়, জীবনে আনন্দ, সুখ, শান্তি সবকিছু আছে আপনারই হাতে। শুধু প্রয়োজন হতাশাগ্রস্থ না হয়ে সাহস করে বর্তমানের মুখোমুখি হওয়া।