বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ট্র্যাজেডি: শীর্ষ আসামিদের বাদ দিয়েই শুরু হচ্ছে বিচার
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা এসএম মজিবুর রহমানের আদালত আগামী ১৫ মে অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য করেন। এ দিনই আনুষ্ঠানিকভাকে শুরু হচ্ছে এ মামলার বিচার কার্যক্রম। মামলার শীর্ষ আসামিদের বাদ দিয়ে পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রের ওপর কোনো নারাজি আবেদনও করেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ৯ মার্চ রোববার চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম মশিউর রহমান চৌধুরী মামলাটির বিচার নিষ্পত্তি করতে নথি মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। ওই আদালত আদেশে লিখেছেন, ‘দঃবিঃ ৩০৪-ক/৩৩৭/৩৩৮/৩৪ ধারায় চার্জশিটে বর্ণিত আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেয়া হইয়াছে। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত। বিচার নিষ্পত্তির জন্য নথি মাননীয় মহানগর দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হউক।’
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় ফ্লাইওভার ধসের ঘটনায় মারা যান ১৬ জন। বেশ কয়েকজন পঙ্গুত্ববরণ করেন। এরপর ২৬ নভেম্বর চান্দগাঁও থানা পুলিশ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৪ থেকে ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করে। তবে মাত্র আটজন আসামিকে অভিযুক্ত করে বাকি ১৮ জনকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানিয়ে গত বছরের ২৪ অক্টোবর অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করে পুলিশ। এতে প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার অ্যান্ড পারিশা ট্রেড সিস্টেমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক, সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের বাদ দেয়া হয়। অভিযোগপত্র থেকে আরো বাদ দেয়া হয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক এ এ এম হাবিবুর রহমান, হোসাইন আহমেদ পান্না, ডাইরেক্টর অ্যাডমিন প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএআরএমএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মতিন, পরিচালক সৈয়দ আফছার হোসেন, আব্দুল হান্নান, সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার অরুণ কুমার বিশ্বাস, মোস্তাফিজুর রহমান, সিডিএর সহকারী প্রকৌশলী তানজিব হোসেন ও উপসহকারী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।
এছাড়া অভিযোগপত্রভুক্ত আট আসামিও বর্তমানে জামিনে। তারা হলেন- ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. গিয়াস উদ্দিন, সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার মো. মনজুরুল ইসলাম, সাইট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জলিল, আমিনুর রহমান, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাই, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন রিয়াজ, সিডিএর কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহজাহান আলী এবং এজাহারবহির্ভূত আসামি মো. রফিকুল ইসলাম।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে অভিযুক্ত কর্তা ব্যক্তিদের। দুর্ঘটনার পর শুরু থেকেই পুলিশসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলীসহ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হচ্ছিল। জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিতেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার পর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ সম্পন করা হয় এবং গত ৩১ ডিসেম্বর জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।