ইতিহাস সংবিধান বিশেষ-অজ্ঞ এবং তথ্য বিকৃতকারীদের অত্যাচার

01-mahbub-rashid1-150x216

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন সত্তা। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে একটি গান প্রচারিত হতো। গানের কথা এভাবে শুরুÑ সাড়ে সাত কোটি মানুষের আর একটি নাম মুজিবর মুজিবর। সেই সময়ের একটি ঘটনা আগেও কয়েকবার উল্লেখ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসীদের পক্ষ থেকে কয়েকটি পত্রিকা প্রকাশিত হতো। এরকম একটি পত্রিকা ‘জয় বাংলা’ এক কিশোর হাওড়া স্টেশনে বিক্রি করছিল। উল্লেখ্য যে, আমাদের সবার একটা পরিচয় আমরা জয় বাংলার লোক। পশ্চিমবঙ্গের এক ব্যক্তি পত্রিকা কিনে ছেলেটিকে প্রশ্ন করলোÑ তোদের মুজিবনগর কোথায়। কেননা লেখা ছিল মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত। এ প্রশ্নে আমি নিজেও বিব্রত বোধ করছিলাম। কিশোরটি ধীরকণ্ঠে বললোÑ গোটা বাংলাদেশ মুজিবনগর, সব বাঙালি শেখ মুজিব। আবেগে আমার চোখের পানি এসেছিল। আজ যারা জেনেশুনে এ সত্যকে অস্বীকার করতে চায়। তাদের সম্পর্কে বলতে হয় যে, তাদের হৃদয়ে গুমরার সিল সেঁেট দেয়া হয়েছে। অতএব তাদের বোঝাবেন কিভাবে। তারপরও কিছু আলোচনা করা প্রয়োজন। বর্তমান তথ্যপ্রবাহের যুগে একটি ঘটনা বিভিন্নভাবে লিপিবদ্ধ হয়। এখন আর কারো একার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সত্য তথা প্রকৃত ঘটনা প্রকাশিত হয়ই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথায় আসি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে কিছুদিন পর তাদের গোপন নথি প্রকাশ করে। এরকম কিছু নথি নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের একটি সিনিয়র সিএসপি। সংকলনটির শিরোনাম ঞযব অসবৎরপধহ চধঢ়বৎ- ঝবপৎবঃ ধহফ ঈড়হভরফবহঃরধষ উড়পঁসবহঃং ১৯৬৫-৭৩। ভূমিকা লিখেছেন মি. জমশেদ মার্কার। তিনি রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তবে আমরা ছেলেবেলায় তার ক্রিকেট ধারাভাষ্য শুনেছি ‘যাতে এ সংকলনে অনেক তথ্য রয়েছে। এর ভেতর এখানে উল্লেখ করতে চাই পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পত্রালাপ সম্পর্ক। সেখানে জেনারেল ইয়াহিয়া বলেছেন যে শেখ মুজিবের একগুঁয়েমির জন্য তিনি সমস্যার সমাধান করতে পারেননি এবং বাধ্য হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে কঠিন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। পাকিস্তানের তৎকালীন বেশ কয়েকজন জেনারেল মুক্তিযুদ্ধের ওপর তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বই লিখেছেন। প্রত্যেকটি বইতে ঘুরে ফিরে একটি নাম তা হলো শেখ মুজিবুর রহমান। কেউ বলেছেন মুজিব প্রাদেশিক মানসিকতার। কেউ বলেছেন তার উদার হওয়া উচিত ছিল। কেউ বলেছেন তিনি একরোখা।
বক্তব্য যাই হোক লোকতো একটাই। বিংশ শতকের সমাপ্তির পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি বিশ্ব ইতিহাস প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে কার নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়েছে ঞযব অসবৎরপধহ ঢ়ধঢ়বৎ এ স্টেট ডিপার্টমেন্টে একটি পত্র ছাপা হয়েছে তার শিরোনাম গঁলরন ঃধশবং ড়াবৎ ঊধংঃ চধশরংঃধহ অতএব গোটা বিশ্ব অবহিত যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যমণি কে? বিশ্বখ্যাত অর্থনৈতিক সাপ্তাহিক ঞযব ঊপড়হড়সরংঃ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঞযব ইষড়ড়ফ ঞবষবমৎধস ঘরীড়হ করংংরহমবৎ ধহফ ধ ঋড়ৎমড়ঃঃবহ এবহড়পরফব ২০১৩ সালের অন্যতম সেরা রাজনৈতিক বই। এর লেখক এধৎু এ ইধংং তিনি এক সময় ঞযব ঊপড়হড়সরংঃ এ কাজ করেছেন। বর্তমানে চৎরহপবঃড়হ টহরাবৎংরঃু-এর রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক। বইটি পড়লে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানোর জন্য নিক্সন এবং কিসিঞ্জার কতো রকমের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করেছেন। গণচীন যেন ভারত সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে তার জন্য নিক্সন কিসিঞ্জার কতোভাবেই না মাও সেতু তুং-কে অনুরোধ করেছেন। একেবারে একাকী পেলে হয়তো পা ধরে বসতেন। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য কতো নিচে না নামতে হয়। নইলে আদর্শ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখলকারী সিপাহসালারের জানি দোস্ত হন কিভাবে। এই বইটি পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে। নিক্সন বেআইনিভাবে পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন। এসব ইতিহাস তো মুছে ফেলা যায় না। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, বইটিতে বাংলাদেশের ৭১ এর হত্যাকা-কে জেনোসাইড বলা হয়েছে। কেননা এই কথাটি একাত্তরে সেভাবে প্রচার করা সম্ভব হয়নি।
এখন আলোচনা করব বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কিছু অর্বাচীন ও হাস্যকর বক্তব্য নিয়ে। আসলে এ কথাগুলো বলা যে উচিত নয় তা তারেক রহমানও জানেন। তবে বলেছেন জামাতে ইসলামীর প্ররোচনায়। যারা বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে এখনো মেনে নিতে পারেনি, তাদের কাছে বঙ্গবন্ধু দুশমন। তাই তার বিরুদ্ধে যতো রকমের কুৎসা রটনো যায়, সেটাই তাদের একমাত্র কাজ। সেই কাজটি হতাশাগ্রস্ত তারেক রহমানকে দিয়ে করাচ্ছে। কয়েকদিন আগে বিএনপি নেতা বলেছেন যে জিয়া ২৬ তারিখে ঘোষণা দিয়েছেন। যেখানে ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালের রাত ৮ টায় তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া জাতির উদ্দেশে ভাষণে একজন রাজনীতিকের নাম বলেছেন, তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু। ইয়াহিয়া আরো বললেন যে, মুজিব দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাকে শাস্তি পেতে হবে। জিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে থাকলে নিশ্চয়ই সেটা পাকিস্তান প্রীতির কাজ হয়নি। ইয়াহিয়া জিয়ার নামতো বলেননি।
১৯৭৮ সালে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন যে ১৯৭১ সালে এর ২৭ মার্চ তিনি যেমন জাতির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন, এখন আবার সে রকম আহ্বান জানাচ্ছেন। ভাষণটি সংগ্রহ করা কঠিন নয়। বাংলা একাডেমি, পাবলিক লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন আর্কাইভে পাওয়া যাবে। তো জিয়া বলেছেন তিনি ২৭ তারিখে বলেছেন। আর গয়েশ্বর সেটাকে ২৬ তারিখে নিয়ে গেলেন কিভাবে। তারেক জিয়া ১০ এপ্রিল ৭১ এর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র মেনে নিয়েছেন। কেননা তার মতে সেটি ভঙ্গ করে বঙ্গবন্ধু বেআইনিভাবে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সেই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে। এই যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন তা এই গণপরিষদ দৃঢ়ভাবে সমর্থন এবং অনুমোদন প্রদান করলো। তাহলে তারেক জিয়া তার সেই বক্তব্য যে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক এবং প্রথম রাষ্ট্রপতি, সেই বক্তব্য থেকে সরে এসেছেন। এটা ঠিক যে সেই ঘোষণায় বলা হয়েছিল যে সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি থাকবেন।
এই ঘোষণায় আরো বলা হয়েছে ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহী এবং আইন প্রণয়নের ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর। ১৯৭২ এর ১১ জানুয়ারি চৎড়ারংরড়হধষ ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ ড়ভ ইধহমষধফবংয ড়ৎফবৎ ১৯৭২ জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে যে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করা হবে। অতএব প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগের প্রশ্ন এসেছে। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। অতএব অবৈধের প্রশ্নটি অবান্তর।
পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ১৯৫১ সালের অক্টোবরে আততায়ীর হাতে নিহত হলে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন ঐ পদ ছেড়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ফিরেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পাকিস্তানি শাসকরা বঙ্গবন্ধুর বিচার করে মৃত্যুদ-ের রায় ঘোষণা করেছিল। কার্যকর করা হয়নি। ইয়াহিয়া যখন ভুট্টোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তখন একটি বন্ধ খামে এই রায়টি তাকে দেন। ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে অনেক ভাবে বোঝাতে চেয়েছেন কোনোভাবে এক পাকিস্তানে থাকা যায় কিনা। বঙ্গবন্ধুকে রাজি করানো সম্ভব হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা তিনি পাকিস্তানের হাতে বন্দী। অতএব পাসপোর্ট না বিনা পাসপোর্টে তাকে প্লেনে উঠিয়ে দিয়েছিল সেই প্রশ্নও অবান্তর। একমাত্র উন্মাদ ছাড়া আর কে ভাবতে পারে যে পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুর জন্য বাংলাদেশের পাসপোর্ট জোগাড় করবে। তখন বাংলাদেশের পাসপোর্ট ই–স্যু করার সুযোগ বা সময় আসেনি। এই খবর নিশ্চয় সবার জানা আছে যে, সকল রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভঙ্গ করে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ বঙ্গবন্ধুকে ডাউনিং স্ট্রিটে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন কেননা তখনো কিন্তু ব্রিটেন বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার বেশ কয়েক মাস পাকিস্তানি মুদ্রা চালূ ছিল। তাহলে তখনকার সব লেনদেন কি অবৈধ হয়েছিল। একটি দেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর অনেক কিছু পরিবর্তন করতে সময় লাগে। ভারতের গণপরিষদ সংবিধান প্রণয়ন করার পর নিজেদের সংসদে রূপান্তরিত করে ২ বছর ক্ষমতায় ছিল।
১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতে সংবিধান গৃহীত হয়। ১৯৫২ সালের মার্চে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হয় এবং বলা হয় যে ১৬ ডিসেম্বর থেকে এটি কার্যকর হবে। এরপর গণপরিষদ ভেঙে দেয়া হয়। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস এবং সেই জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত গনপরিষদ সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এসব কাজ অবৈধ? বৈধ হলো রাতের আঁধারে অস্ত্র দ্বারা নৃশংস হত্যাকা- চালানো এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের জন্য শপথ নেয়া যায়? মোশতাক, জিয়া, এরশাদ এদের সরকার যে অবৈধ, তাতো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে। ১৯৭৮ সালে জেনারেল জিয়া যখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তখন তো তিনি প্রজাতন্ত্রের চাকরি করতেন। কেবিনেট সচিব কিংবা আইজিপি কর্মরত অবস্থায় কি কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন? জেনারেল জিয়া তখন সেনাপ্রধান হিসেবে চাকরি করছিলেন। অতএব এই নির্বাচনে অংশ নেয়াটা শতকরা একশ ভাগ বেআইনি।
একইভাবে বিএনপি গঠনও অবৈধ ছিল। কেননা প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারেন না কিংবা অংশগ্রহণ করতে পারেন না। অতএব কোনটা বৈধ কোনটা অবৈধ সেটা সংবিধান এবং রাষ্ট্র বিজ্ঞানের রীতিনীতি বিশ্লেষণ করে বলা উচিত। অবশ্য এ ধরনের মিথ্যাচারে যা সত্য তা মিথ্যা হবে না। সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা না থাকা সত্ত্বেও সে সম্পর্কে যারা কথা বার্তা বলেন, তখন তাদের প্রতি করুণা করা ছাড়া আর কী করার থাকে। হাজার বছরের সেরা বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্থান বিশ্বের ইতিহাসে যেখানে হওয়ার দরকার সেখানে হয়েছে। তবে পূর্বে বলেছি যে, যারা বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে মেনে নিতে পারেনি তারা তো এ ধরনের কথা বলে যাবে। এতে কিছু আসে যায় না। বরঞ্চ এর ফলে ক্রমাগত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
লেখক: সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ : সাবেক ইপিসিএস ও কলাম লেখক।
(সূত্র: ভোরের কাগজ)

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend