ইরানে অপহৃত ১২ বাংলাদেশি ফেরত
খবর বাংলা২৪ ডেক্স:
দালালদের খপ্পরে পড়ে ৫৪ বাংলাদেশি নাগরিক ইরানে অপহরণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২ জনকে বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। বাকিদের ফেরত আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম।
উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- ঢাকার নবাবগঞ্জের ফরহাদ হোসেন, দোহারের মেহেদী হাসান, নোয়াখালীর মন্তাজ মিয়া, কেরানীগঞ্জের মাহফুজুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শফিকুল ইসলাম, খুলনার শফিউল আলম, ফেনীর সজিবচন্দ্র নাথ, হবিগঞ্জের ফিরোজ মিয়া, নীলফামারীর আমিনুল হক, ফরিদপুরের জুয়েল মিয়া, কুমিল্লার মুরাদনগরের মহসিন মিয়া ও লাকসামের জাকির হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অপহৃতদের বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে দালালরা দুবাই এবং ওমান থেকে নিয়ে ইরানের বন্দর আব্বাসে আটকে রাখে। প্রথমে তাদের গ্রীসে নেয়ার কথা বলে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা করে চুক্তি করা হয়। একই সঙ্গে বলা হয় নগদ টাকা নেয়া হবে না। গ্রীসে আয় করে টাকা পরিশোধ করলেই হবে। পরে তাদের ইরানে আটকে রেখে বাংলাদেশে স্বজনদের কাছে তাদের দিয়ে ফোন করানো হয়। নির্যাতনের পর শোনানো হয় কান্নার শব্দ। এভাবে দিনের পর দিন তাদের ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন।
বৃহস্পতিবার দেশের ফেরত আসা একজন সজিব চন্দ্র নাথ। তার বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীতে। ২০০৯ সাল থেকে তিনি দুবাইতে ছিলেন।
সজিব জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি দুবাই থেকে গ্রীসে নেয়ার কথা বলে দালালরা তাকে ইরানে নিয়ে যায়। সেখানে একটি রুমে আটকে রেখে তাকে দিয়ে বাড়িতে ফোন করানো হয়। স্বজনদের থেকে দাবি করা হয় ছয় লাখ টাকা। কিন্তু সজিবের পরিবার থেকে টাকা দিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়। এরপর চাবুক ও হাঁতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করা হয়। একই কক্ষে এমন নির্যাতনের শিকার ছিল আরও ২৩ জন।
টানা দুই মাসের নির্যাতনের পর তাদের তত্ত্বাবধানকারী দালালদের একজনকে বদ্ধ কক্ষে পেটায় তারা। এর পর হাতুড়ি দিয়ে তালা ভেঙ্গে পালিয়ে গিয়ে ইরানের পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে সাতজন। বাকিরা অন্য কোথাও চলে যায়।
খুলনার শফিউল আলমের ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিন লিটু জানান, অনেককে ইরানে চাকরিও দেয়া হয়। কিন্তু তাদের বেতন আসে দালালদের হাতে। তা থেকে থাকা-খাওয়ার জন্য কিছু অর্থ দেয়া হয়। বাকিগুলো দালালরা আত্মসাৎ করে।
সিআইডি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, ইরানে অপহৃতদের একজন যশোরের জনৈক ইউনুস। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তাকে দেশে ফেরত আনা হয়। তার বিষয়টি সিআইডি ও ইরান দূতাবাসকে জানায় ‘রাইট যশোর’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। এরপর শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতা।
রাইট যশোর ও সিআইডি বাংলাদেশ এবং ইরানের মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে এমন আরও ৩০ জনের সন্ধান পায়। তাদের ২৯ জনকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দেশে আনা হয়। অন্য একজন নিজেদের মধ্যে ধস্তাধস্তিতে মারা যায় বলে দাবি করে সিআইডি। তার লাশও জানুয়ারিতে দেশে ফেরত আনা হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন থানায় ১২টি মামলা হয়। এসব মামলায় অপহরণকারী দলের ছয় বাংলাদেশি এখন গ্রেপ্তার আছে।
এসব ঘটনার সূত্র ধরে অপহৃত বাংলাদেশিদের উদ্ধারে আরও বেশি তৎপর হয় ‘রাইটস যশোর’ ও সিআইডি। দুই ধাপে ইরানে অপহৃত ২৮ ও ২৬ জনের সন্ধান পাওয়া যায়। ২৮ জনের মধ্যে আটজন এবং আগে ইরানে উদ্ধার হওয়া চারজনকে বৃহস্পতিবার দেশে ফেরত আনা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় একটি ফ্লাইটে (অ্যামিরেটস এয়ার এফজেড-৫৮৩) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তারা নামেন।
অপহৃতদের দেশে ফেরত আনার কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিআইডির এডিশনাল ডিআইজি শাহ আলম ও রাইটস যশোরের পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক।