সাঈদীর আপিলের রায় যে কোনো দিন
খবর বাংলা ২৪ডেক্স: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামাতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায় যে কোনো দিন ঘোষণা করা হবে। গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের আপিল বিভাগ নথি তলবের আবেদন খারিজ করে এই আদেশ দেন। উভয়পক্ষের করা আপিল শুনানি শেষে যেকোনো দিন রায় দেয়া হবে মর্মে অপেক্ষমাণ রেখে দেয়া হয় মামলাটি। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
গতকাল বুধবার নথি তলবে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের দুটি আবেদন খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। এই আদেশের পর চূড়ান্ত রায়েও সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি বজায় থাকবে বলে আশা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে সাঈদীকে আইনগতভাব শাস্তি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার অভিযোগে স্বাধীনতার পর দায়ের হওয়া মামলার দালাল আইনে গঠিত স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের নথি তলবের আবেদন করে। অপরদিকে আসামিপক্ষ ওই মামলার (জিআর) রেজিস্ট্রার তলবের আবেদন করে। এর আগে মঙ্গলবার জামাত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করা হয়। তার আগে গত বৃহস্পতিবার এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়।
প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদ- দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২৮ মার্চ সাঈদী ও সরকারপক্ষ পৃথক দুটি আপিল (আপিল নম্বর : ৩৯ ও ৪০) দাখিল করে। এরপর গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে আপিল শুনানি শুরু হয়। প্রথমে শেষ হয় সাঈদীর করা আপিল আবেদনের শুনানি। সাঈদীর প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও এডভোকেট এ এস এম শাহজাহান এতে অংশ নেন। ট্রাইব্যুনালের ১২০ পৃষ্ঠা রায় পড়ে শোনানো শেষে তারা রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের সাক্ষ্য ও জেরা পেপারবুক থেকে উপস্থাপন শেষ করেন গত ২১ জানুয়ারি। এরপর গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এডভোকেট এ এস এম শাহজাহান সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা ২০টি অভিযোগের বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারির থেকে শুরু করে ১১ মে পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণের মতো আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দুটি অপরাধে সাঈদীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-াদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠন করা অভিযোগে একাত্তরের
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিন হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা, নয় জনেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ, বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, ভাঙচুর এবং ১শ থেকে ১৫০ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো ২০টি ঘটনার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে সন্দেহাতীতভাবে ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাঈদীকে মৃত্যুদ-াদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে অর্থাৎ ৮ ও ১০ নং অপরাধে সাঈদীর মৃত্যুদ- হয়েছে। এছাড়া ৬, ৭, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯ নং অভিযোগ প্রমাণিত হলেও এগুলোতে কোনো সাজার কথা ঘোষণা করেননি ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল জানান, দুই অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় বাকিগুলোতে আর সাজা দেয়ার প্রয়োজন নেই। আর বাকি ১২টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় সেগুলোতেও কোনো সাজা ঘোষণা করা হয়নি। সাজা ঘোষিত না হওয়া ওই ৬টি অভিযোগে শাস্তির আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আর ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস চেয়ে আসামিপক্ষ আপিল করেন।