দেখা হয় নাই ছোট সোনা মসজিদ
খবর বাংলা ২৪ডেক্স: বাংলাদেশজুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রাকৃতিক আর মনুষ্যনির্মিত দর্শনীয় স্থান। মূলত এই স্থানগুলোর কথা মাথায় রেখেই প্রতি শুক্রবারের আয়োজনে থাকছে একটি করে দর্শনীয় স্থানের বিবরণ। আর আজ এতে প্রকাশিত হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছোট সোনা মসজিদের কথা।
রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থিত ছোট সোনা মসজিদ বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। মসজিদে প্রাপ্ত একটি শিলালিপি থেকে জানা যায়, সুলতান আলা-উদ-দীন শাহের শাসনামলে ওয়ালী মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি প্রাচীন গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে অবস্থিত ফিরোজপুর গ্রামে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সে কারণে অনেকের কাছেই এটির অন্য পরিচয় ছিল ‘গৌরের রত্ন’ হিসেবে। যদিও মসজিদটির বাইরের সোনালি রঙের আস্তরণটিই একে সোনা মসজিদ নামে পরিচিত করে তোলে। এদিকে প্রাচীন গৌড়ে সুলতান নুসরত শাহের তৈরি অপর আরেকটি মসজিদও সোনা মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করায় স্থানীয়রা একে ছোট সোনা মসজিদ নামে অভিহিত করতে শুরু করেন। মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৮২ ফুট লম্বা ও পূর্ব-পশ্চিমে ৫২.৫ ফুট চওড়া। আর উচ্চতায় প্রায় ২০ ফুট। মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় ছয় ফুট পুরু এবং এগুলো তৈরিতে মাঝে ইট ও ভেতরে-বাইরে পাথরের ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে মসজিদের খিলান ও গম্বুজগুলো তৈরিতে শুধুই ইটের ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের চারকোণে চারটি বুরুজ আছে। এগুলোর ভূমি নকশা অষ্টকোণাকার এবং বুরুজগুলোতে ধাপে ধাপে বলয়ের কাজ আছে। মসজিদের পূর্ব দিকের দেয়ালে পাঁচটি খিলানযুক্ত দরজা আছে। খিলানগুলো বহুভাগে বিভক্ত এবং নানা অলংকরণে সমৃদ্ধ। এ ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালেও তিনটি করে দরজা আছে। এ ছাড়া উত্তর দেয়ালের সর্ব-পশ্চিমের দরজাটির জায়গা থেকে একটি সিঁড়ি মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিম দিকে দোতলায় অবস্থিত একটি বিশেষ কামরায় উঠে গেছে। পাথরের স্তম্ভের উপর অবস্থিত এই কামরাটি জেনানা-মহল কিংবা সুলতান বা শাসনকর্তাদের নিরাপদে নামাজ আদায়ের জন্য ব্যবহূত হতো বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটির অভ্যন্তরভাগ কালো ব্যাসাল্টের ৮টি স্তম্ভ দ্বারা উত্তর দক্ষিণে তিনটি আইল ও পূর্ব-পশ্চিমে পাঁচটি সারিতে বিভক্ত। আবার পূর্ব দিকের দেয়ালের পাঁচটি দরজা বরাবর মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে পাঁচটি অর্ধ-বৃত্তাকার নকশার মিহরাব। এদের মধ্যে মাঝেরটি আকারে বড় এবং প্রতিটির মিহরাবেই পাথরের ওপর অলংকরণ রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরের ৮টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের উপর তৈরি হয়েছে মসজিদের ১৫টি গম্বুজ। মাঝের মিহরাব ও পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজার মধ্যবর্তী অংশে ছাদের ওপর যে গম্বুজগুলো রয়েছে সেগুলো মূলত চৌচালা গম্বুজ এবং এদের দুপাশে দুসারিতে তিনটি করে মোট ১২টি গম্বুজ রয়েছে এরা অর্ধ-বৃত্তাকার গম্বুজ। এ মসজিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, বাইরের যে কোনো পাশ থেকে তাকালে কেবল পাঁচটি গম্বুজ দেখা যায়, পেছনের গম্বুজগুলো চোখে পড়ে না। সম্পূর্ণ মসজিদটির অলংকরণে প্রধানত পাথর এবং এরপর ইট, টেরাকোটা বা টাইল ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া কারো কারো বর্ণনা অনুযায়ী একসময় এই মসজিদটির গোটা বহির্ভাগে অথবা গম্বুজগুলোর ওপরে সোনালি রঙের আস্তরণ ছিল বলেও জানা যায়।