শিরক, দুর্নীতি ও কবীরা গুনাহর ভয়াবহতা জাকির হোসাইন আজাদী 

শিরক, দুর্নীতি ও কবীরা গুনাহর ভয়াবহতা  জাকির হোসাইন আজাদী 

কবীরা গুনাহর সংখ্যা নিয়ে ওলামাদের মাঝে কিছুটা মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন: কবীরা গুনাহ ৭টি। তাদের দলিল হচ্ছে—নবী করীম (স.) বলেন: তোমরা সাতটি পাপ থেকে বেঁচে থাক। ১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। ২) জাদু করা। ৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা। ৪) ইয়াতীমদের মাল-সম্পদ আত্মসাত্ করা। ৫) সুদ খাওয়া। ৬) ধর্মযুদ্ধ থেকে পলায়ন করা। ৭) সতী-সাধ্বী সরলমতি মুমিন নারীর ওপর যিনার অপবাদ দেয়া (বুখারী, মুসলিম)।

 

 

 

যেসব বিষয় আল্লাহ ও রসূল (স.) কর্তৃক হারাম হওয়ার অকাট্য দলিল পাওয়া যায়, সেগুলো কবীরা গুনাহ। শিরক, দুর্নীতি ও কবীরা থেকে বেঁচে থাকতে পারলে আল্লাহ ছগীরা গুণাহসমূহ মাফ করে দেবেন। যেমন—বড় বড় নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে তোমরা যদি বেঁচে থাকতে পার, যেগুলো থেকে দূরে থাকার জন্য তোমাদের বলা হচ্ছে, তাহলে আমি তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব (সূরা নিসা-৩১)।

আর যারা বড় বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধের উত্পত্তি হলে ক্ষমা করে (সূরা আশ-শূরা-৩৭)।

যারা কবীরা গুনাহ এবং প্রকাশ্য ও সর্বজনবিদিত অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে, তবে ছোটখাট অপরাধ করলেও নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত-ব্যাপক (সূরা আন-নাজম-৩২)। রসূল (স.) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায, জুম’আর নামায পরবর্তী জুম’আ পর্যন্ত এবং রমযান মাসের ফরজ রোজা পরবর্তী রমজান পর্যন্ত মধ্যবর্তী পাপসমূহের কাফফরাস্বরূপ, যখন কেউ কবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকবে (সহীহ মুসলিম, জামে’ তিরমিযী)।

কবীরা গুনাহর সংখ্যা নিয়ে ওলামাদের মাঝে কিছুটা মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন: কবীরা গুনাহ ৭টি। তাদের দলিল হচ্ছে—নবী করীম (স.) বলেন: তোমরা সাতটি পাপ থেকে বেঁচে থাক। ১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। ২) জাদু করা। ৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা। ৪) ইয়াতীমদের মাল-সম্পদ আত্মসাত্ করা। ৫) সুদ খাওয়া। ৬) ধর্মযুদ্ধ থেকে পলায়ন করা। ৭) সতী-সাধ্বী সরলমতি মুমিন নারীর ওপর যিনার অপবাদ দেয়া (বুখারী, মুসলিম)।

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন: কবীরা গুনাহ সাতটি নয়, প্রায় সত্তরটি। হাদীসে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা সীমাবদ্ধ করা হয়নি। প্রমাণের ভিত্তিতে সেসব গর্হিত কাজই কবীরা গুনাহ, যেগুলোর জন্য দুনিয়াতে শাস্তির বিধান রয়েছে। যেমন: চুরি, খুন, ব্যভিচার অথবা যেগুলোর জন্য আখেরাতের কঠিন শাস্তির ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে। অথবা রসূল (স.)-এর ভাষায় যেসব অপরাধীর প্রতি অভিশাপ দেয়া হয়েছে, অথবা যেসব গুনাহরত ব্যক্তি উম্মতে মুহাম্মদীর (স.) ভেতর গণ্য নয়, এ ধরনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তা সবই কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রা.) বর্ণনা করেন, একব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাছে অভিমত ব্যক্ত করলো যে, কবীরা গুনাহ তো সাতটি। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন: প্রায় সাতশ’টির কাছাকাছি। তবে তওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে কোন কবীরা গুনাহ আর কবীরা থাকে না অর্থাত্ মাফ হয়ে যায়। ছগীরা গুনাহও বারবার করতে থাকলে ছগীরা থাকে না, বরং তা কবীরা গুনাহের রূপ ধারণ করে। অন্যত্র আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন: কবীরা গুনাহ প্রায় সত্তরটি। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামও গণনার মাধ্যমে তা সত্তর বা তার সামান্য বেশি প্রমাণ পেয়েছেন। এটাও সত্য যে, অপরাধের মাত্রায় কবীরা গুনাহ সবই সমান নয়; বরং একটি-অপরটি অপেক্ষা বেশি গুরুতর অথবা হালকা। যেমন: আল্লাহর সাথে শিরক করাকেও রসূল (স.) কবীরা গুনাহ বলেছেন। অথচ সেটা এত জঘন্য পাপ যে, এতে লিপ্ত অপরাধী অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে এবং তার অপরাধ ক্ষমতার অযোগ্য। আল্লাহ বলেন: নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এরচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন (সূরা নিসা-৪৮)।

আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্যতম কবীরা গুনাহ। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে আল্লাহর সমতুল্য মনে করা এবং তার ইবাদত বা উপাসনা করা। যেমন: পাথর, বৃক্ষ, চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ফেরেশতা, নবী, ওলী, জ্বিন, দেবতা ইত্যাদি যাই হোক না কেন তাকে আল্লাহর সমতুল্য মনে করা এবং তার পূজা করা সবচেয়ে বড় শিরক। বস্তুত: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে বা কোন বস্তুকে শরীক করবে এবং সেই অবস্থায় মারা যাবে, সে নির্ঘাত জাহান্নামে যাবে। যেমন্ল কেউ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলে এবং মুমিন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে জান্নাতবাসী হবে, চাই সে জাহান্নামে যতই আযাব ভোগ করুক না কেন। রসূল (স.) একদিন তিনবার বললেন: আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? সবাই বললেন: জি হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ! তখন তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, মাতা-পিতাকে কষ্ট দেয়া (অবাধ্য হওয়া)।

অতঃপর তিনি হেলান দেয়া থেকে সোজা হয়ে বসে বললেন: ‘মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া থেকে সতর্ক থাক।’ এই শেষোক্ত কথাটা তিনি এতবার পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন যে, বর্ণনাকারী বলেন: আমরা মনে মনে বলতে লাগলাম, রসূল (স.) যদি চুপ করতেন তবে ভালো হতো (বুখারী ও মুসলিম)।

সত্তরটি কবিরা গুনাহ নিম্নরূপ:১. শিরক করা। ২. মানুষ হত্যা করা। ৩. জাদুটোনা করা। ৪. নামাজে অবহেলা করা। ৫. যাকাত না দেয়া। ৬. বিনা ওজরে রমযানের রোযা ভঙ্গ করা। ৭. সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করা। ৮. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। ৯. রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্ন করা। ১০. যিনা-ব্যভিচার করা। ১১. লাওয়াতাত বা সমকামিতা করা। ১২. সুদের আদান-প্রদান। ১৩. ইয়াতিমের মাল আত্মসাত্ করা এবং তাদের উপর জুলুম করা। ১৪. আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি মিথ্যারোপ করা। ১৫. ধর্মযুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন।

[ সংক্ষেপিত ] লেখক :সাংবাদিক

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com