যেভাবে উদ্ধার হন এবি সিদ্দিক
খবর বাংলা ২৪ ডেক্স: বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী অপহৃত আবু বকর সিদ্দিক উদ্ধার হয়েছেন বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে। প্রায় ৩৪ ঘণ্টা পর ধানমণ্ডির কলাবাগান খেলার মাঠের পাশে স্টাফ কোয়ার্টারের কোণায় বসানো পুলিশ চেকপোস্ট থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারের পর আবু বকর সিদ্দিক, তার স্ত্রী রিজওয়ানা হাসান ও ধানমণ্ডি থানার ওসি (তদন্ত) অশোক চৌহানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে আলোচিত এ অপহরণের উদ্ধার কাহিনী।
এবি সিদ্দিকী বলেন, ‘অপহরণের পর তিনঘণ্টার মতো সময় লেগেছে আমাকে আটককৃত স্থানে নিয়ে যেতে। যাওয়ার পথে কিছুটা ফেরির শব্দ টের পেয়েছিলাম। তবে আসার পথে তেমন কিছু আঁচ করতে পারিনি। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমাকে মিরপুর আনসার ক্যাম্পের সামনে এনে ছেড়ে দেয়া হয়। তখনও চোখ বাঁধা। গত ৩৫ ঘণ্টায় আমার চোখ এক সেকেন্ডের জন্যও খোলা হয়নি। তারা আমাকে নামিয়ে দিয়ে ৩০০ টাকাও দেয় বাসায় যাওয়ার ভাড়া হিসেবে। পরক্ষণেই তারা হাওয়া হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘এরপর চোখ খুলে একটি ঠেলাগাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞেস করি এটা কোন জায়গা? মিরপুর আনসার ক্যাম্প নিশ্চিত হয়ে রিকশা ডাকি। রিকশাওয়ালা ছেঁড়া জামাকাপড় দেখে নিতে অস্বস্তি করলেও আমি জোর করেই রিকশায় ওঠি। এরপর কাজীপাড়া পর্যন্ত আসি। কাজীপাড়ার কাছাকাছি থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য একটি সিএনজিতে ওঠি। কলাবাগান মাঠের কাছ থেকে পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে আসে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অপহৃত অবস্থায় অপহরণকারীরা আমাকে কোনো প্রকার মারধর করেনি। তবে পুরো সময় আমার চোখ বাঁধা ছিল। ফলে আমি কোথায় ছিলাম সে সম্পর্কে কিছুই জানতে পারিনি। এমনকি আমাকে কী উদ্দেশ্যে অপহরণ করা হয়েছে, সে সম্পর্কেও তারা কিছু বলেনি।’
তবে মুক্তি পাওয়ার পরে প্রথমে থানায় না গিয়ে বাসায় কেন বাসায় যাচ্ছিলেন এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি এবি সিদ্দিকের কাছ থেকে।
ধানমণ্ডি থানার ওসি (তদন্ত) অশোক চৌহান খবর বাংলাকে বলেন, ‘আমি রাতের ডিউটি তদারকি করছিলাম। ধানমণ্ডি মাঠের পাশে স্টাফ কোয়ার্টারের কোণায় আমাদের একটা চেকপোস্ট ছিল। সেখানে একটি সিএনজি থামানো হয়। এ সময় আমি সেখানেই উপস্থিত ছিলাম। সিএনজির ভেতরে লোকটির গায়ের জামা ছেঁড়া দেখতে পেলাম। হাতে একটা গামছাও ছিল। আমি তার পরিচয় জানতে চাইলাম। তিনি তখন কাঁদছিলেন। কাঁদতে কাঁদতেই বললেন- আপনারা যাকে উদ্ধারের জন্য খুঁজছেন আমিই সে। টিভিতে পেপারে যার কথা শোনা যাচ্ছে আমি সেই আবু বকর সিদ্দিক।’
অশোক আরো বলেন, ‘তার এমন উত্তরে আমার সন্দেহ হয়। আমি সঙ্গে সঙ্গে ডিসি স্যারকে কল দেই। স্যার তখন আবু বকর সিদ্দিকের স্ত্রী রিজওয়ানা হাসানের নম্বর আমাকে দেন। পরে ক্রস চেক করে নিশ্চিত হতে পেরেছি। তারপরই তাকে থানায় নিয়ে আাসি।’
উদ্ধার প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান খবর বাংলা কে বলেন, ‘ওকে (এবি সিদ্দিক) দুর্বৃত্তরা মিরপুরে যখন ফেলে রেখে যায় তখন তার চোখ বাঁধা ছিল। পরে সে নিজ হাতেই চোখ খুলে একটা রিকশা নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর এসেছে। সেখান থেকে সিএনজি করে বাসায় ফিরছিল। পথে পেট্রোল পুলিশ তাকে থামিয়েছে। তার শার্ট ছেঁড়া দেখে পুলিশ তার পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় পেয়ে তাকে তাৎক্ষণিক থানায় নিয়ে যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘ওকে কোথায় রাখা হয়েছিল সেটাও জানতে পারিনি। তবে তার সঙ্গে কথা বলে যদ্দুর বোঝা গেছে একটা বিল্ডিংয়ের দোতলা বা তিনতলায় তাকে রাখা হয়েছে। অপহরণকারীরা কোনোভাবেই তাদের পরিচয় জানতে দেয়নি। এমনকি তার কাছ থেকে কোনো মুক্তিপণও দাবি করেনি। শুধু এক দুইবার টাকার প্রসঙ্গে তারা নিজেরা নিজেরা কথা বলেছে। ফলে কোনোভাবেই অপহরণের উদ্দেশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
তিনি সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। আনন্দের কোনো ভাষা নেই। আল্লাহ তায়ালার কাছে শোকরিয়া। সমগ্র দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ। তাকে উদ্ধারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমসহ সবাই সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে।’
রাষ্ট্র ও গণমাধ্যমের চাপে পড়েই অপহরণকারীরা তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় বলে মন্তব্য করেন পরিবেশ আন্দোলনের এ নেতা। পরে রাত সোয়া ৩টার দিকে ধানমণ্ডি থানা থেকে নারায়নগঞ্জ থানায় যাওয়া হয় এবি সিদ্দিককে।
যে সিএনজিতে করে আবু বকর সিদ্দিক আসছিলেন তার চালক হাসিবুল বলেন, ‘ওনি রিকশায় মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আসছিলেন। পরে আমার সিএনজি দেখে হাত দিয়ে সিগন্যাল দেন। আমাকে বলেন তিনি সেন্ট্রাল রোড যাবেন। আমি তাকে নিয়ে কাজীপাড়া থেকে সেন্ট্রাল রোড আসছিলাম। পথে কলাবাগান চেকপোস্টের পুলিশ গাড়ি থামায়। সেখান থেকেই ওনাকে থানায় নিয়ে আসা হয়।’
আসার পথেই আবু বকর সিদ্দিক চালককে অপহরণের বিষয়টি বলেন বলেও তিনি জানান। তবে আগে থেকে আবু বকর সিদ্দিকের অপহরণের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, বুধবার বিকেল সোয়া ৩টায় আবু বকর সিদ্দিক তার প্রাইভেটকারে করে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। ফতুল্লার ভূইয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে আসা মাত্র পেছন দিক থেকে একটি নীল রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস দিয়ে তার গাড়িতে ধাক্কা দেয়া হয়। এ সময় গাড়ি থামিয়ে আবু বকর ও তার গাড়িচালক নেমে এলে ওই গাড়ি থেকে ৭ থেকে ৮ জন যুবক লাঠিসোটা ও অস্ত্রের মুখে তাকে তুলে নিয়ে যায়।