ঝটপট সেলফোন চার্জ করতে তরুণী এশা খারের দারুণ উদ্ভাবন!
প্রযুক্তির যুগে একে অপরের সাথে যোগাযোগ যেমন সহজ, একদিক দিয়ে কিন্তু আবার কঠিনও। এ ব্যাপারটা সে-ই ভালো বুঝতে পারবে, প্রয়োজনের সময়ে যার মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে গেছে, সাথে চার্জার নেই অথবা কাছাকাছি কোনো বিদ্যুৎ নেই! এমন সময়ে নিজেকে পুরো পৃথিবী থেকে আলাদা মনে হয়। প্রায়ই দেখা যায়, সময়ের অভাবে মোবাইল চার্জ করা যায় না এবং তা নিয়ে পরে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এই ভোগান্তি থেকে যদি কেউ আপনাকে মুক্তি দিতে পারে, তবে সেই মানুষটির ব্যাপারে তো আপনার জানতে ইচ্ছে করতেই পারে, নয় কি?
প্রযুক্তি এখন হয়ে পড়েছে যেন আমাদের হাত-পায়ের মতোই জরুরী! শখের ট্যাব অথবা স্মার্টফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলে আমাদের মেজাজ খারাপ হয়ে পড়ে সাথে সাথেই। এই অযথা মেজাজ খারাপের কবল থেকে আমাদের উদ্ধার করতেই এসেছেন উনিশ বছর বয়সী ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণী এশা খারে। সারাটোগা, ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসরত এই তরুণী হলেন 2013 Intel International Science and Engineering Fair (ISEF) প্রতিযোগিতার রানার-আপ। ব্যক্তিগত জীবনে তিনিও আমাদের মতো ভুক্তভোগী। একবার তিনি এমন এক জায়গায় আটকা পড়েন যেখানে তার সেলফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে যায় এবং বাসায় যোগাযোগের কোনো উপায় ছিলো না। অনেক খুঁজে খুঁজে একটা পে-ফোন বের করে তারপর বাসায় জানাতে সক্ষম হন। এই ঝামেলা থেকেই তিনি হাড়ে হাড়ে টের পান ফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলে কতো বড় বিপদ হতে পারে। এ থেকেই তিনি মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য পোর্টেবল ডিভাইসের চার্জের ব্যাপারে কিছু কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রকৌশলী এবং জীববিজ্ঞানীর কন্যা এশা সব সময়েই বিজ্ঞানের প্রতি উৎসাহী ছিলেন। মোবাইলের চার্জ নিয়ে এই গবেষণার মতো এমন কিছুই তিনি খুঁজছিলেন, যার মাধ্যমে নিজের মস্তিষ্ককে ভালোভাবে খাটানো যায়। শুধু তাই নয়, নিজের মতো ভুক্তভোগী মানুষের কাজে লাগানো যায় এমন কিছুই তৈরি করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাহলে শেষমেষ তার হাতে কী তৈরি হলো?
এশা তৈরি করেন একটি সুপার ক্যাপাসিটর এনার্জি স্টোরেজ ডিভাইস। বিভিন্ন ধাতুর অক্সাইডেরর সাথে কার্বন ফাইবার মিলিয়ে একে তৈরি করা হয়, যার মাঝে ছিলো মূলত টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড এবং পলিঅ্যানিলিন। ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে এই যন্ত্রকে ছোট করে আনা সম্ভব হয়।
পুরনো প্রযুক্তির পক্ষে যতটা সম্ভব ছিলো, তারচাইতে অনেক দ্রুত মোবাইল চার্জ করা যায় একে দিয়ে। শুধু তাই নয়, অনেক অনেক বার মোবাইল চার্জ করা যায় এই এক যন্ত্র দিয়েই অর্থাৎ এটি টেকে অনেক দিন। শুধু সেলফোন এবং ট্যাবলেটই নয়, এশার উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক সময়ে গাড়িও চালানো সম্ভব হতে পারে। এখন তিনি চেষ্টা করছেন এমন কিছু তৈরি করতে যার মাধ্যমে এক মিনিটের কম সময়ে একটি মোবাইল চার্জ করে ফেলা যাবে!
নিজের এই প্রোজেক্ট, যার নাম —”Design and Synthesis of Hydrogenated TiO2-Polyaniline Nanorods for Flexible High-Performance Supercapacitors”, একে নিয়ে তিনি হাজির হন 2013 Intel ISEF প্রতিযোগিতায় এবং ১,৬০০ প্রতিযোগীর মাঝে দ্বিতীয় হয়ে যান। “Intel Foundation Young Scientist Award” জেতেন এবং পান পঞ্চাশ হাজার ডলারের পুরষ্কার। বড় বড় সব প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানিগুলো তার মাঝে দেখতে পাচ্ছেন অনেকটাই সম্ভাবনা। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে সদ্য প্রবেশ করা এশা সর্বক্ষণই ইনটেলে চালিত ডিভাইস ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের রিসার্চ।
শুধু প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনাই নয়, তিনি এর পাশাপাশি বিভিন্ন হবি যেমন সনাতন ভারতীয় নাচের পেছনেও সময় দিয়ে থাকেন। এই হলো এশা খারের কাহিনী। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ একজন তরুণী যার মাঝে লুকিয়ে আছে অসাধারণ প্রতিভা আর সম্ভাবনা।