মুক্ত, তবে মিলছে না অনেক প্রশ্নেরই জবাব
দীর্ঘ ৩৫ ঘণ্টার অপহরণের শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনার অবসান হলেও অনেক প্রশ্নেরই জবাব মিলছে না। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিককে যারা অপহরণ করেছে তাদেরকে অতি সাবধানী এবং পেশাদার বলেই মনে হয়েছে।
নিখুঁত পরিকল্পনায় আবু বকর সিদ্দিককে অপহরণ করা হয় বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, অপহরণকারীরা অভিজ্ঞও। সকালে এবি সিদ্দিককে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নেয়ার পর তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। তিনি জানান, অপহরণের বিষয়ে ১৬ই এপ্রিল ফতুল্লা থানায় অপহরণ মামলা হয়েছে। এ জন্য তাকে মেডিকেল চেকআপের পর আদালতে নেয়া হবে। এরপর তদন্ত কাজের অংশ হিসেবে তাকে তার কর্মস্থল হামিদ ফ্যাশন এবং যেখান থেকে তিনি অপহরণ হয়েছিলেন সেখানে নেয়া হবে। এছাড়া অপহরণকারীদের কাছে থাকা অবস্থায় তার ‘সিক্স সেন্স’ এর অভিজ্ঞতা অনুয়ায়ী অপহরণ থাকাকালীন অবস্থার বর্ণনা শোনা হবে। এরপর সব আনুষ্ঠানিক কাজ শেষে তাকে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
৩৫ ঘণ্টার এই লম্বা সময়ে অপহরণকারীরা সংখ্যায় পাঁচ/ ছয় জন থাকলেও একটি বারের জন্যও নিজেরা কারো নাম ধরে ডাকেননি। অপহরণ করার পর পুরো সময়টা আবু বকরকে চোখ বাঁধা অবস্থা একটি ঘরে বন্দী করে রাখা হয়।
তবে অপহরণ উত্তর প্রশাসনযন্ত্রের প্রতিটি শাখার সক্রিয় হয়ে ওঠা থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজ ও সংবাদ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়ার দিকেও ছিলো অপহরণকারীদের তীক্ষ্ণ নজর। তাইতো অপরণকারীরা আবু বকরকে বলেছেন, তোর স্ত্রীতো তোলপাড় সৃষ্টি করে ফেলেছে। তোকে হয় মেরে ফেলবো নয়তো ছেড়ে দেব।
শুধু বাথরুমে যাওয়ার সময় ছাড়া বাড়িটির একটি কক্ষে সারাক্ষণ চোখ বেঁধে রাখা হয় তাকে। যে কক্ষে আবু বকরকে বন্দী অবস্থায় রাখা হয় সেখানে অপহরণকারীরা নিজেরা নানা রকম কথা বার্তা বললেও কারা এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত, তা এক বারের জন্য বুঝতে দেয়া হয়নি আবু বকর সিদ্দিককে।
কেনইবা তাকে অপহরণ করা হলো? তারা কি মুক্তি পণের জন্যই এটা করেছে? নাকি রিজওয়ানা হাসানকে শিক্ষা দেয়ার জন্যে এটা করেছে? রিজওয়ানা হাসানকে যদি শিক্ষা দেয়ার জন্য করা হয় তাহলে তারা কারা? এই অপহরণের মধ্যদিয়ে গোটা জাতিকে তারা কি বার্তা দিতে চাইলো? এসব প্রশ্নই এখন মানুষের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
অপহরণকারীরা একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিয়ে মুক্তিপন হিসাবে টাকা চাওয়ার কথা বললেও দীর্ঘ এই ৩৫ ঘণ্টার মধ্য এক বারের জন্যও তাঁর পরিবারের কাছে ফোন করেননি তারা।
মুক্ত হওয়ার পর আব বকর সিদ্দিককে যখন ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে উপস্থিত বেলা’র প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসান সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, অপরহণকারীরা ছিলেন পেশাদার এবং নানামুখী প্রচণ্ড চাপে পড়েই তারা আবু বকরকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।
তবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কারা তাকে অপহরণ করেছে সে রহস্য রয়েই গেল। এর আগে অপহরণের পরপরই রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন, আমার স্বামীর কোনো শত্রু নেই, আমার পেশাগত কাজে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কোনো মহল হয়তো এ কাজ করে থাকতে পারে।
বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুরে আনসার ক্যাম্পের সমানের রাস্তায় ৩০০টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে আবু বকরকে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।
পরে অটোরকিশায় ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল রোডের বাসায় ফেরার পথে রাত দেড়টার দিকে কলাবাগানে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে পরিচয় নিশ্চিত করার পর তাকে ধানমণ্ডি থানায় নেয়া হয়।
খবর পেয়ে রাতেই ধানমণ্ডি থানায় ছুটে যান রিজওয়ানা হাসান, নারায়ণঞ্জের পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম, ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আখতার হোসেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে এবি সিদ্দিক তাকে অপহরণ ও পরের অবস্থা জানান।
আবু বকর সিদ্দিকের জবানবন্দি অনুযায়ী অপহরণের পর প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে অপহরণকারীরা তাকে (এবি সিদ্দিক) একটি উঁচু বাড়িতে নিয়ে যায়।সেখানে সারাক্ষণই তার চোখ বেঁধে মেঝেতে ফেলে রাখা হতো বলে জানান পোশাক কারখানার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সিদ্দিক।