আমাকে মেরে বলবে, শর্ট সার্কিট না হয় এক্সিডেন্ট : মমতা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জি মনে করেন তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাকে মেরে ফেলার জন্যে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, আমাকে মেরে দিয়ে বলবে, শর্টসার্কিট হয়েছে বা এক্সিডেন্ট হয়েছে। এসব আজকাল খুব ইজি হয়ে গেছে। কিন্তু ওরা যত খুনের চেষ্টা করবে, আমি তত মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকব। গতকাল শুক্রবার বীরভূমের দু’টি জনসভায় তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন। এদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, ওকে (মমতা) কেন খুন করতে যাবে? আসলে রাজনীতির লড়াইয়ে নীতিভ্রষ্ট হয়ে উনি পিছিয়ে পড়েছেন। তাই এসব বলছেন। উনি তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। নিজেই তদন্ত করুন না।
মমতা জানান, মালদহের হোটেলে এসির ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে তাকে স্যালাইন এবং অক্সিজেন নিতে হয়েছে। গলায় গ্যাস ঢুকে গিয়েছে। তার কথায়, আর একটু হলে মরেই যেতাম। অবশ্য তিনি গতকালও ওই হোটেলেই এসে উঠেছেন। বর্তমান পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে অবশ্য বলা হয়, মালদহের জেলাপ্রশাসক ওই ঘটনার রিপোট পাঠিয়েছেন। সেটি দিল্লীতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টে মমতার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নস্যাত করে দেয়া হয়।
কলকাতার বাংলা দৈনিক এই সময়-এর শনিবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোটেলে গ্যাস বিভ্রাট কাটতে না কাটতেই শুক্রবার বীরভূমে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাস্থলের দেড় কিলোমিটার দূরে সিউড়ি-বোলপুর সড়কে ব্যাটারি, সুইচ, জিলেটিন এবং ডিটোনেটর উদ্ধার হয়। এগুলো কোথা থেকে এল, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। বিস্ফোরক উদ্ধারের পরই মুখ্যমন্ত্রীর মনে হয়েছে, তাকে খুনের চেষ্টা হচ্ছে। একইসঙ্গে তার নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল জানান, একজন সিপিএম কর্মীকে এ ঘটনায় হাতেনাতে ধরে ফেলা হয়েছে। জনতা মারধর করে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। তার অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর সভায় আসা দলীয় সমর্থকদের মারতেই সিপিএম এসব বিস্ফোরক মজুত করেছিল। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, তৃণমূলের নেতারাই রাস্তায় এসব রেখে মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহভাজন হওয়ার চেষ্টা করেছেন। বীরভূমের দুটি জনসভাতেই মুখ্যমন্ত্রী এদিন আগের রাতের প্রসঙ্গ তোলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর হোটেলের ঘরে বৃহস্পতিবারের গ্যাস বিভ্রাট নিয়ে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক স্তরে ব্যাপক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ওইদিনই রাতে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় লিখিত বিবৃতিতে ওই ঘটনার দায় নির্বাচন কমিশনের উপর চাপিয়ে দেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন কমিশনের। কিন্তু তারা সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। আমরা বিষয়টি কমিশনের গোচরে আনছি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যদিও কমিশন ওই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। বিরোধীরা এ ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চেয়েছে। প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে সিবিআই তদন্ত দাবি করে বলেন, সব সিবিআইকে পাঠিয়ে দিন, কে বা কারা খুনের চক্রান্ত করছে, তা বেরিয়ে আসবে। এটা মারাত্মক অভিযোগ। বাইরের বা ভেতরের কোনও শত্রু এর সঙ্গে জড়িত কি না, সিবিআই তদন্ত করে দেখুক। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু অবশ্য সিবিআই তদন্তের পক্ষে নন। তার মতে, বিচার বিভাগীয় তদন্ত করলেই সব বিষয় জনসমক্ষে আসবে।