পোশাকখাত নিয়ে চক্রান্তে একটি বিদেশী গোষ্ঠী সক্রিয়
পোশাক শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, সম্প্রতি এই খাত নিয়ে বিদেশি একটি গ্রুপ সক্রিয়। তাদের ব্যাপক খবরদারি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাই প্রমাণ করে। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে বিবিসি বাংলাদেশের সংলাপে প্যানেল আলোচক হিসেবে তিনি এ কথা বলেন।
বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় এ পর্বের সংলাপে প্যানেল আলোচক ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিজিএমইএ এর সভাপতি আতিকুল ইসলাম এবং সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার। উপস্থিত এক দর্শকের প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশে আইন আছে। আমরা আমাদের মতো করে কাজ করবো। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশিদের নজরদারী মনে হচ্ছে মার চেয়ে মাসির দরদ বেশি। পোশাক কারখানার ভবন তৈরির ক্ষেত্রে বিএনবিসি বা বিল্ডিং নির্মাণ কোড না মানায় নানা সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, বিদেশিরা আমাদের এ শিল্প নিয়ে যড়যন্ত্র করছে তার প্রমাণ হলো পাকিস্তান থেকে ইঞ্জিনিয়ার এনে আমাদের বিল্ডিং পরীক্ষা করার নজির। অথচ পাকিস্তানিরা আমাদের দেশে ইঞ্জিনিয়ানিং এ পড়াশোনা করতে আসে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিদেশিরা তো এমনিতেই খবরদারি করে না। নিশ্চয় কোনো না কোনো সমস্যা আছে, আর এজন্যই তারা খবরদারি করছে। বিদেশিদের খবরদারিত্বের জন্য সরকারকে দায়ী করেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু।
আলোচনায় নাজমা আক্তার বলেন, বিদেশিদের খবরদারি নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে। তবে সরকারকে এ সব ঘটনা তদারকি করতে হবে। সরকার ও মালিক পক্ষকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
দর্শকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, রানা প্লাজায় ধসের পর উদ্ধারে আমাদের সমন্বয়ের কোনো অভাব ছিল না। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার ৭৯৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিককে মোট ২২ কোটি ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। দুর্ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও কেন সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলো না?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, ডিএনএ টেস্ট সম্পন্ন না হওয়ার কারণে এখনও পুরো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় নি। ডিএনএ টেস্ট সম্পন্ন হলে সবার ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া থেকে সরকার পিছপা হবে না। প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে বিজিএমইএ-এর আরও অর্থ দেওয়া উচিৎ। এদিকে এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে না পারাকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে মনে করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে যেভাবে টাকা জমা হয়েছে তা খরচের ক্ষেত্রে কোনো স্বচ্ছতা নেই। রানাপ্লাজা ধসের ঘটনাকে জাতীয় বিপদ আখ্যা দিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, জাতীয় বিপদে সরকারের উচিৎ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া। আতিকুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কোনো অভাব ও ভুল ছিলনা। বিজিএমইএ এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৩০০ শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আরো গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নতুন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের রয়েছে উল্লেখ করে গার্মেন্টস নেত্রী নাজমা আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের অনুদান পাওয়ার অধিকার শ্রমিকদের আছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান নিয়ম সংশোধনেরও দাবি জানান তিনি।