ফাস্টট্রাকে ৬ মেগা প্রকল্প: প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজরদারি
পদ্মা সেতু, গভীর সমুদ্রবন্দর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও মেট্রোরেল প্রকল্পকে ফাস্টট্রাক মনিটরিং কমিটির আওতায় নিয়ে নিবিড় পরিচর্যার সুফল মিলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ফাস্টট্রাক মনিটরিং কমিটির সদস্য, ফাস্টট্রাক ডিপিপি টিপিপি কমিটির সভাপতি ও পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পগুলোকে ফাস্টট্রাকের আওতায় নিয়ে আসাটাই সরকারের একটি কমিটমেন্টের বহির্প্রকাশ। এ সব প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী নিজেই মনিটরিং করছেন। সুতরাং এর একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে জবাবদিহিতার বিষয়টি চলে আসে তখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও প্রকল্পের পরিচালকরা অবশ্যই যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করবেন- এটিই স্বাভাবিক। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বেড়েছে এবং সুন্দরভাবে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ৬টি মেগা প্রকল্প ফাস্টট্রাক প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। বাস্তবায়ন দ্রুততর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও সভাপতিত্বে একটি ফাস্টট্রাক মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত ফাস্টট্রাক প্রজেক্ট মানিটরিং কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৬ জুন। ওই সভায় গঠন করা হয় ফাস্টট্রাক প্রজেক্ট মনিটরিং টাস্কফোর্সসহ আরও কয়েকটি কমিটি। পরবর্তীতে আরও কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফাস্টট্রাক প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির।
এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের চুক্তি হচ্ছে শীঘ্রই। এবিষয়ে আগামী ২৯ এপ্রিল এ বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ।
পদ্মা সেতু বিষয়ে সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থছাড় হয়েছে ১ হাজার ৩৮৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। কাজের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে জাজিরা এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজের ২২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। মাওয়া এ্যাপ্রোচ সড়কের আর্থিক অগ্রগতি ১৫ শতাংশ। সার্ভিস এরিয়া-২ এ আর্থিক অগ্রগতি ১৫ শতাংশ। নদী শাসনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে প্রি-কোয়ালিফায়েড ৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫ প্রতিষ্ঠান কারিগরি দরপত্র দাখিল করেছে।
অপরদিকে রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট প্রকল্পের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে ভারত ও বাংলাদেশ। ভারত এবং বাংলাদেশ প্রকল্পটিতে ৩০ ভাগ অর্থ বিনিয়োগ করবে। বাকি ৭০ ভাগ অর্থ ঋণ নেয়া হবে।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির জন্য মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী জুলাই মাসে প্রাথমিক চুক্তি অনুস্বাক্ষর করতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা। প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানির জন্য টার্মিনালটি নির্মাণ করা হচ্ছে। টার্মিনালটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে অর্থছাড়ের তাগিদ দেয়া হয়েছিল চলতি বছরের শুরুতেই। সূত্র জানায়, নানা জটিলতায় প্রকল্পটি ফাইলবন্দী হয়ে পড়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ নেয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সার্বিক দিকনির্দেশনা প্রদান ও বাস্তবায়ন কার্যাবলী মনিটরিংয়ের জন্য ২০১০ সালের ৯ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন বিষয়ক একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়।
কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে ডেনমার্ক। গত ২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করে দেশটির এপিএম টার্মিনাল নামক সংস্থা। এখন পর্যন্ত ডেনমার্ক ছাড়া যে সব দেশ কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে বড় ধরনের বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে এগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানি। তবে কোন দেশের আর্থিক সহযোগিতায় এটি তৈরি করা হবে, সে বিষয়ে দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে না সরকার।
মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়টিও নিশ্চিত হয়েছে। এখন চলছে কারিগরি কাজ। ইতোমধ্যেই মেট্রোরেলসহ চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জাইকার সঙ্গে অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। এর আওতায় প্রথমপর্যায়ে প্রায় ৬ হাজার ২৩৯ কোটি ৩০ লাখ টাকার ঋণ এবং ৭২ কোটি টাকার অনুদান প্রদান দেবে সংস্থাটি।
জাইকার আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পটি হচ্ছে জাইকার অর্থায়নে প্রথম এত বড় প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর প্রায় ৪ লাখ মানুষ প্রতিদিন চলাচলের সুবিধা ভোগ করবে। সহজ শর্তে দেয়া জাইকার এই ঋণের সুদ হচ্ছে শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এ ছাড়া ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, রাজধানীর যানজট নিরসনে প্রায় ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাইকা ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দেবে সরকার।