ভাগ্যবতী রিজওয়ানা অশ্রুজলে লুনা, পীর হাবিবুর রহমান

ভাগ্যবতী রিজওয়ানা অশ্রুজলে লুনা,   পীর হাবিবুর রহমান
 

ভাগ্যবতী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ৩৫ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর অপহরণ নাটকের অবসান ঘটিয়ে তার স্বামী আবু বকর সিদ্দিক স্ত্রীর বুকে নিরাপদ আশ্রয় নেবার পর সুন্দর মুখশ্রীজুড়ে হাসির ঝলকানি দেখা গেছে। দেশবাসীও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। রিজওয়ানা পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গণমাধ্যম এবং দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। গণমাধ্যম আইনশৃংখলা বাহিনীর ভূমিকা ও জনমতের চাপ সত্যি অতুলনীয়। রিজওয়ানার স্বামী আবু বকর সিদ্দিককে দিন-দুপুরে যানজটকবলিত এলাকা থেকে যেমন তুলে নিয়ে গেছে অপহরণকারীরা তেমনি যেমন করে তাদের ভাষ্য অনুযায়ী ফিরিয়ে দিয়েছে তাতে ফিল্মি স্টাইলকেও হার মানিয়েছে। এখানে সাধারণ মানুষের মধ্যে যত প্রশ্ন আর রহস্যের যলবল যলবল করছে। নাকের ওপর চোখবাঁধা কাপড়ের দাগ ছাড়া কোনো নির্যাতনের চিহ্ন শরীরে নেই। কোনো মুক্তিপণ দাবি নেই। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান যে কোনো শর্তে তাদের পরিবারের প্রিয় সদস্যকে ফেরত চাইলেও নিঃশর্তভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপহরণকারীদের হাতে পড়ে এমন আশ্চর্যজনক প্রত্যাবর্তন দেশের মানুষ কখনো দেখেনি। কারা অপহরণ করল, কেন করল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তার জোর তদন্ত চালালেও এখনো উদ্ঘাটন করতে পারেনি। অপহরণের পর আবু বকর সিদ্দিকের গাড়ি চালককে সৈয়দা রিজওয়ানার তত্ত্বাবধানে নিয়ে যাওয়া হলেও কেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হলো না সেই প্রশ্ন দিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে সর্বত্র। বিএনপির প্রভাবশালী সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী গুমের দুই বছর পার হয়ে গেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সবসময় অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ইলিয়াস আসতেন। এবার বিমর্ষচিত্তে তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদি লুলা তাদের কন্যা ফাইয়ারা নাওয়ারকে নিয়ে এসেছিলেন। লুনা ভাবীর চোখের নিচে স্বামীর জন্য পথ চাইতে চাইতে কালো ছায়া পড়েছে। বাবার আদরের মেয়ে ফাইয়ারা নাওয়ারের হাসি চলে গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আবু বকর সিদ্দিকের ফিরে আসার পরদিন শ্রমিক দলের সভায় বলেছেন, সরকার পতনের ভয়ে সিদ্দিককে মুক্তি দিয়েছে সরকার। তাকে ছেড়ে না দিলে এখান থেকেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হতো। নিজ দলের ইলিয়াস আলীসহ এত নেতাকর্মীর গুম-খুনের প্রতিবাদে যে বিএনপি নেত্রী গণমানুষ ও সিভিল সোসাইটিকে নিয়ে আন্দোলন করতে পারেননি বা আন্দোলনের অব্যাহত ধারায় সরকারকে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেওয়া দূরে থাক ঝাঁকুনি পর্যন্ত দিতে পারেননি, সেখানে আবু বকর সিদ্দিক ফিরে না এলে সরকার পতন ঘটে যেত এ বক্তব্য কি যৌক্তিক? এর নেপথ্যে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক ছক ছিল? সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ বাবুকে গুম করা হয়েছিল। বাবু আর কোনোদিন তার মায়ের কোলে ফিরে আসেনি। আমরা আনন্দিত এ বি সিদ্দিকের অপহরণের প্রতিবাদে দেশের মানবাধিকার কর্মী, সিভিল সোসাইটি প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, দুঃখ বাবুর জন্য তারা সেদিন যেভাবে নামেননি তেমনি একালে ইলিয়াস আলীদের জন্যও তাদের ভূমিকা ছিল না। রাজনৈতিক কর্মি হলে যার যার দল প্রতিবাদ করবে আর কেউ নয়- এ কেমন কথা! আর গরীব সাধারণ মানুষ হলে কেউই পাশে নেই। নাগরিকের জানমালের নিশ্চয়তা দেবে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার। আমাদের দুর্ভাগ্য জাতি রাজনৈতিকভাবে দুই শিবিরে বিভক্ত। পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানগুলোও। জ্ঞানী-সুশীলরা গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট বলয়। সেই বলয়ের বাইরে কারও জন্য তাদের হৃদয় কাঁদে না। রিজওয়ানার উদ্বেগ তাদের যতটা নাড়া দিয়েছে দিনের পর দিন লুনার কান্না তাদের প্রতিবাদী করে না। আমরা এক অদ্ভুত সমাজে বাস করছি। কারও জন্য কাঁদি, কারও জন্য কাঁদি না। কারও জন্য প্রতিবাদ করি, কারও বেলায় করি না। কারও জন্য প্রতিবাদে রাস্তায় নামি। কারও জন্য নামি না। আমরা সব অপকর্মের, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চাই। সব নাগরিকের জানমাল রক্ষার জন্য কথা বলতে চাই। সব নাগরিকের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ও স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। গুম, খুন, অপহরণ আইনের চোখে সর্বোচ্চ অপরাধযোগ্যই নয়, নিন্দনীয় ও অমানবিক তো বটেই। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী এ বি সিদ্দিকের অপহরণ যেমন নিন্দনীয় অপরাধ তেমনি তার ফিরে আসা আনন্দের। দেশের সব মানুষের জন্য খুশির খবর। গণমাধ্যমে যখন একটি ইস্যু আসে তখন তার রেশ ধরে তলিয়ে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ উঠে আসে। দেশের সাংবাদিকতা জগতে সাগর-রুনি দম্পতির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য আজো উন্মোচিত হয়নি। তাদের শিশুসন্তান এ কোন রাষ্ট্রে বেড়ে উঠছে, যেখানে বাবা-মার হত্যাকারীদের বিচার হবে না। কারওয়ান বাজার থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী চার বছরে ২৬৮ জন অপহৃত হয়েছে। ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। ফিরে এসেছে ২৪ জন। এখনো নিখোঁজ ১৮৭ জন। এ তালিকায় ব্যবসায়ী-সাধারণ মানুষসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী রয়েছেন। রিজওয়ানার স্বামী অপহরণের পর আমরা সবাই উদ্বিঘ্ন হয়েছি। আবেগাপ্লুত হয়েছি। দেশের নাগরিক সমাজকে যাদের বড়র মতো দেখায় এবং মানুষ তাদের সুশীল সমাজ বলে জানে, তাদের এককাতারে বসে উদ্বেগ জানাতে দেখেছি। দেশের সাংবাদিক সমাজ সাগর-রুনির জন্য প্রতিবাদমুখর হলেও, সাধারণ মানুষের হৃদয় এই হত্যাকাণ্ড স্পর্শ করলেও তারা নীরব থেকেছেন। এখনো হারিয়ে যাওয়া নাগরিকদের জন্য তাদের বিচলিত হতে দেখা যায় না। সমাজের সুশীলদের বলয়ে চলাফেরা, ওঠাবসায় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের মতো ভাগ্যের বর নিয়ে সবাই আসেন না। সাধারণ মানুষের পক্ষে নাগরিক সমাজ বা সুশীলদের সিন্ডিকেটে প্রবেশাধিকারের সুযোগ থাকে না। তাই বলে তাদের পরিবারের শোকের মাতম কি তারা দেখবেন না? এ বি সিদ্দিক ফিরে আসার পর আমরা সবাই স্বস্তি ফিরে পেয়েছি। কিন্তু আমাদের জানার অধিকার রয়েছে। এই অপহরণের নেপথ্যে কী রহস্য লুকিয়ে রয়েছে? কারা অপহরণ করেছেন? বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে দায়ী করেছেন। সরকারের উচিত তার জবাব দেওয়া এই রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে। এই অপহরণ ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এক. তার পাশে সরকার-বিরোধী দল, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে পাশে পেয়েছেন, যা আর কোনো সন্তানহারা মা বা স্বামীহারা স্ত্রীর বেলায় এভাবে ঘটেনি। রাষ্ট্রযন্ত্র ও সিভিল সোসাইটি এবং রাজনৈতিক শক্তির বিবেক কারও জন্য সাড়া দেবে, কারও জন্য দেবে না তা হতে পারে না। রিজওয়ানা সেই ভাগ্যবতী তার স্বামীর অপহরণ নাটক না অন্য কিছু সেই রহস্যের জন্ম দিলেও সবাই পাশে দাঁড়িয়েছেন। গণমাধ্যম সবসময়ই মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আসছে। এখানেও সবার বেলায় একইভাবে দাঁড়িয়েছে কিনা সেই প্রশ্নও থেকে যায়।

২. যে কোনো মানুষ খুন বা অপহরণ হলে তার বাড়ির গৃহকর্মী, দারোয়ান থেকে সবাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে যায়। এ বি সিদ্দিকের গাড়ির চালক তার বদলে রিজওয়ানার হেফাজতেই গেছে। রেলের কালো বিড়ালের চালক আজমও লাপাত্তা। কিন্তু সিদ্দিকের গাড়িচালক রিজওয়ানার হেফাজতেই।

৩. এই অপহরণ ঘটনায় এ বি সিদ্দিক যত না ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার চেয়ে গণমাধ্যম, সিভিল সোসাইটি এক কথায় দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি শুরু থেকেই কিছু ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের দিকে সন্দেহের আঙ্গুল তুললেও সচল কারখানায় তার স্বামীর ঊধর্্বতন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং বন্ধ কারখানা সচল করে মালিকানা লাভ ও সেখানকার শিল্প শ্রমিকদের সঙ্গে বিরোধের জায়গা আড়ালেই থেকে গেল। জনগণের সামনে খোলাসা হলো না। সচল কারখানায় যিনি ছিলেন কর্মকর্তা, বন্ধ কারখানা সচল করে তিনি কেমন করে মালিকানার অংশীদার হয়ে গেলেন? এই প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোচিত হচ্ছে। রিজওয়ানা পরিবেশবাদী আন্দোলনের পথে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মামলায় জড়ালেও গেল বছর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে জামায়াতের সহিংস কর্মকাণ্ডের বৃক্ষনিধন নিয়ে কোনো কথা বলেননি। রিজওয়ানা মুক্ত স্বামীকে পাশে বসিয়ে ও বলেছেন, তার কাজের জন্য যারা ক্ষুব্ধ তারাই এমনটি করে থাকতে পারেন। কিন্তু কেন যেখানে তার স্বামীর কর্মক্ষেত আর শ্রমিক অসন্তোষ সেখানে সিদ্দিকের কোন সত্রুই থাকতে পারে না? এই প্রশ্ন উঠছে। মহাত্দা গান্ধীর মতো অহিংসবাদীর ও শত্রু ছিল।

৪. আন্তর্জাতিক দুনিয়া এ বি সিদ্দিককে না জানলেও এই খবর রিজওয়ানা গণমাধ্যমের মাধ্যমে বার বার দিতে সফল হয়েছেন যে, এখানে পরিবেশ আন্দোলনে অবিচল থাকতে গিয়ে অনেক মহলের বিরাগভাজন হয়েছেন। এবং তার কর্মতৎপরতার কারণে তার স্বামীকে অপহরণ হতে হয়েছে বলে তিনি আশঙ্কা করেছেন। এতে বহির্বিশ্ব জানল তার মতো সাহসী পরিবেশবাদীর জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ জায়গা নয়। কোনো নাগরিক অপহরণের পর ফিরে এলে দেশ-বিদেশে সবার দৃষ্টি তার দিকেই থাকে। গণমাধ্যম তাকে ঘিরেই ক্যামেরার লেন্স ঘুরায়। সিদ্দিক ফিরে আসার পর দেখা গেছে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তিনি জবানবন্দি দিলেও গণমাধ্যমের সামনে সীমাহীন কথা বলেছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। নিরীহ স্বামীটি তার পাশে ছিলেন আরও নিষ্প্রভ। মুক্তির পর অপহরণকারীরা পকেটে ৩০০ টাকা দিয়েছে, তারপর তিনি সাড়ে ১১টায় মুক্তি পেয়ে কখনো রিকশায় উল্টো পথে, কখনো-বা সিএনজিতে করে রাত দেড়টায় ধানমণ্ডি এলাকায় এসে পুলিশের কাছে পরে থানায় যাওয়া পর্যন্ত বিষয়টি রহস্যময়ই নয়, রীতিমতো নাটকীয়তায় ভরপুর। রিজওয়ানা স্মার্ট বলেন সুন্দর মানলাম। দেখতে আরও সুন্দর তাও মানলাম। কিন্তু তার স্বামী ও তো কথা বলতে পারেন সুন্দর গুছিয়ে। চোখ বাধা মানুষটির তিনঘণ্টা হিসাব রুম, ফেরি, হেলিকাপটরের শব্দের কথা বলেছেন, এর আসলে কি সত্য? তা জানতেই হবে মানুষকে। অপহরণের পর দিন-দুপুরে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে তাতে শুইয়ে টোল প্লাজা নির্বিঘ্নে অতিক্রম রীতিমতো অবিশ্বাস্য।

৫. অপহরণকারীদের হাতে ছিল অস্ত্র, চুল ছিল ছাঁটা। বিষয়টি আরও রহস্যময়। এরা তাহলে কারা? সরকারের সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে অবশ্যই এই রহস্য উদ্ঘাটন করা সময়ের দাবি। একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী যখন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তখন সরকারেরও উচিত এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করা। আমরা একটি নিরাপদ স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সমাজে বাস করতে চাই। আমাদের সব সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। এ বি সিদ্দিক সেই ভাগ্যের বরপুত্র যার স্ত্রী একজন বহুল আলোচিত পরিবেশবাদী, যিনি সমাজের উঁচুদরের মানুষদের সঙ্গে উঠাবসা করেন। আবু বকর সিদ্দিকের জন্য যতটা না, তার স্ত্রী রিজওয়ানার জন্য এই অপহরণের প্রতিবাদে সরকার, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম সবাই সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। আমরা এ বি সিদ্দিক ফিরে আসায় আনন্দিত। কিন্তু এই রহস্যের সত্য উদ্ঘাটনের ওপর জোর দিচ্ছি। সত্য জানার অধিকার দেশের নাগরিকদের রয়েছে। না হয় প্রশ্ন সবদিকেই ঘুরপাক খাবে। এমনকি এটি কোনো সাজানো ঘটনা কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা জরুরি। আমাদের এক সাংবাদিক বন্ধু ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বের মেয়াদকালের শেষদিকে সেগুনবাগিচার অফিস থেকে বেরিয়ে কিছু পথ গিয়েই চিৎকার করে দৌড়ে ফিরে আসেন। তার অভিযোগ রাস্তায় তাকে নাকি কারা গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় থানায় জিডি করেছিলেন। সেটি ছিল শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামল। ওই রাতেই তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মরহুম আবদুল মান্নান ভূইয়া এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছিলেন। মিথ্যা নাটকীয়তার আশ্রয় নিয়ে আমাদের ওই বন্ধু সংবাদকর্মী পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে বউ-বাচ্চাসহ বেড়াতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতার অজুহাত দেখিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন এবং বর্তমানে গ্রিনকার্ড নিয়ে সুখের জীবনযাপন করছেন। প্রিয় পাঠকরা, আমি বলছি না বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার জন্য রিজওয়ানা এমনটি ঘটিয়েছেন। আমি বলছি সত্য উদ্ঘাটনের জন্য সব চোখ খুলেই তদন্ত সাপেক্ষে আবেগবহিভর্ূতভাবে এই রহস্য উন্মোচনের জন্য। একইসঙ্গে সরকার, রাজনৈতিক শক্তি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম এবং সিভিল সোসাইটি আর মানবাধিকার কর্মীদের কাছে হৃদয় নিসৃত আবেদন সব নাগরিকের জন্যই সমান দৃষ্টি রাখুন। সব নাগরিকের বিপদে সমান ভূমিকা রাখুন। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় ও আগে ব্যাংকের দারোয়ানকে বাধা হয়। বাসাবাড়িতে কেয়ারটেকার। গাড়ি চালককে কেন প্রথমদিন থেকেই বাইরে রাখা হলো? ঘরে বাইরে সর্বত্রই কি গোয়েন্দা বা তদন্তকারিদলের চোখ রাখা জরুরি নয়?

(সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন)

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend