আগামী নির্বাচনে না গেলে বিএনপির অবস্থা ন্যাপ হবে- জিয়াউদ্দিন বাবলু
খবর বাংলা ২৪ডেক্স: জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের মাধ্যমেই রাজনীতির মূল স্রোতে থাকতে হয়। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তারা এখন মূল স্রোতের বাইরে। পরবর্তী নির্বাচনের জন্য তাদের পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। এর আগে নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। বিএনপি আগামীতে দলীয় সরকারের অধীনে অংশ না নিলে তাদের অবস্থা হবে ন্যাপের মতো। রাজপথে সন্ত্রাস করে সরকারের পতন ঘটানো যায় না। ডাকসুর এক সময়ের নন্দিত জিএস সাবেক মন্ত্রী ও মেধাবী রাজনীতিবিদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এরশাদ সরকারের শুরুতেই যোগ দেন। জাতীয় পার্টির জন্মলগ্ন থেকেই এরশাদের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে পথ চলছেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলে আসীন হয়েছে কি-না জানতে চাইলে নতুন মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নই আসে না। জাতীয় পার্টি নিজস্ব সত্তা নিয়ে রাজনীতি করে। জনগণের রায় নিয়ে আমরা বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আসীন হয়েছি। আমাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আদর্শগত বিভাজন আছে। চলার পথে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা কোনো কোনো সময় একসঙ্গে কাজ করেছি। তবে যখনই আওয়ামী লীগ জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করবে তখনই জাতীয় পার্টি তার প্রতিবাদ করবে। জাপার সদস্যরা মন্ত্রিপরিষদে থাকায় সত্যিকার অর্থে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারছে কি-না জানতে চাইলে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘৯১ সালের পর থেকে বিরোধী দলবিহীন জাতীয় সংসদ চলেছে। নবম সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া মাত্র ১০ দিন উপস্থিত ছিলেন। অথচ বেগম রওশন এরশাদ নিয়মিত সংসদে যাচ্ছেন। সরকারের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরছেন। আমরা বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেছি। সত্যিকার অর্থেই জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে এবং করবে। সংসদ বর্জনের রাজনীতি জাতীয় পার্টি করে না। সংসদে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করলেই সত্যিকার অর্থে বিরোধী দল হয় না। আমরা সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করব। জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করব। সংসদের বাইরেও সোচ্চার থাকব। সরকার জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত নিলে মন্ত্রিসভায় আমরা বিরোধিতা করতে পারব। বিরোধী দল থেকে মন্ত্রী নেওয়ার বিষয়টি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। নেলসন ম্যান্ডেলা এ পদ্ধতির প্রবক্তা। সরকারি দলের সঙ্গে সুসম্পর্কের ব্যাপারে জানতে চাইলে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে জাপা মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ভালো সম্পর্ক থাকার মানে এই নয় আমি ওই দলের সমর্থক। ৩০ বছর ধরে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করে যাচ্ছি। আমি জাতীয় পার্টির লোক। আমার কাছে প্রতিটি নেতা-কর্মীর গুরুত্ব সমান। তিনি বলেন, এক দলের নেতা বা কর্মীরা অন্য দলের কারও কথা বলতে পারবেন না, এ সংস্কৃতি ঠিক নয়। সবার সঙ্গে সবার সুসম্পর্ক থাকবে। সব দলই জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করে। তবে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা অবশ্যই থাকবে। দলের নেতা-কর্মীরা নতুন মহাসচিবকে কীভাবে নিচ্ছেন জানতে চাইলে জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান ১৩ এপ্রিল আমাকে নিয়ে পার্টি অফিসে গিয়েছিলেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য, মন্ত্রী, এমপি, নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে দেখা গেছে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। নেতা-কর্মীরা পার্টি চেয়ারম্যানের এ সিদ্ধান্ত সাদরে গ্রহণ করেছেন। আমাকে মহাসচিব মনোনীত করায় পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে কৃতজ্ঞ। সরকারি দলের চাপে পার্টির মহাসচিব পরিবর্তন_ এমন আলোচনার জবাবে নতুন মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপি জাতীয় পার্টি প্রত্যেকটি আলাদা আলাদ দল। দলের মহাসচিব পরিবর্তন দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এইচ এম এরশাদ অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, সংস্কারক ও সংগ্রামের প্রতীক। কারও প্রভাবে নয়, দলের স্বার্থে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, সংগঠনের ৩৯ (ক) ধারা অনুযায়ী পার্টির চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং আমাকে নতুন মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। যে আস্থা ও বিশ্বাস থেকে এ গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন আমি সবাইকে নিয়ে তা পালন করার চেষ্টা করব। গত নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে ভোট না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৫৩ আসনে নির্বাচন না হওয়ায় এ সরকার অগণতান্ত্রিক এটা প্রমাণ করে না। তখন মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারত না। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হয়েছে। ৫ জানুয়ারির আগে কেউ মনে করেনি দেশে নির্বাচন হবে। আমরা চেয়েছিলাম ৩০০ আসনে নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপি না আসায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে গেলেন কেন_ এ প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব বলেন, একটা সংকটময় মুহূর্তে নির্বাচন করেছি। পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ গণতন্ত্রমনা মানুষ। ৩০ বছর তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। দ্বিমত পোষণ করলেও কখনোই তিনি বাড়াবাড়ি করতেন না। তার সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সিএমএইচে থাকাকালীন তার সঙ্গে দেখা করেছি। এ জন্য সম্পর্কের অবনতি হয়নি। তবে পার্টির চেয়ারম্যানের ভিন্ন মত ছিল।
বড় দুটি দল জাপার রাজনীতির নিয়ন্ত্রক কি-না জানতে চাইলে জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, ‘৯১ সালের পর কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারেনি। জাতীয় পার্টি একটা বড় শক্তি বলেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি আমাদের নিয়ে টানাটানি করে। দুটি দল মনে করে জাতীয় পার্টির সহযোগিতা ছাড়া ক্ষমতায় যেতে পারবে না। জাপা এ দেশের রাজনীতিতে অপরিহার্য দল।
রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ায় পার্টির নেতা-কর্মীদের মনোভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে দলের প্রধানকেই সংসদে প্রধান হতে হবে, এটা বাধ্যতামূলক নয়। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আমাদের মূল নেতা। আর সংসদে বিরোধী দলের প্রধান বেগম রওশন এরশাদ। এ নিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান ও বেগম রওশন এরশাদের মধ্যে কোনো অনৈক্য নেই। কর্মীদের মধ্যেও কোনো সংশয় নেই। এরশাদের একক সিদ্ধান্তে পার্টি কেমন চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ পার্টির প্রাণ। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেন সবাইকে ডেকেই নেন। দ্বিমত পোষণ করলেও মতের প্রতি সম্মান দেখান। ভিন্ন মত পোষণ করলেও আমাদের নিয়েই কাজ করেন। আওয়ামী লীগ বিএনপিতে দলীয় প্রধানের বাইরে কেউ কি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? ওই কালচার এখনো আমাদের দেশে আসেনি। বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে। পার্টির চেয়ারম্যানের মামলা প্রসঙ্গে জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, ২৪ বছর ধরেই এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। অনুকম্পা নিয়ে এসব মামলা প্রত্যাহার আমরা চাই না। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পার্টির চেয়ারম্যান মুক্ত হবেন। মহাজোট আমলে হাজার হাজার রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার হলেও এরশাদের কোনো মামলাই প্রত্যাহার করা হয়নি। আমরা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য আবেদনও করিনি। জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, জাতীয় পার্টি নতুন উদ্যোমে পথচলা শুরু করেছে। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে বর্তমানে সংসদের প্রধান বিরোধী দল। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে পার্টির আগামীতে প্রধান বৃহত্তম দল হিসেবে আত্দপ্রকাশ ঘটবে। আগামী সংসদে জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করবে।