ধর্ম হজরত ইব্রাহীম (আ.) ও ভিক্ষুক
মুফতি মাও. আব্দুর রশিদ তত্ত্ববাদী:
হজরত ইব্রাহীম (আ.) এত অতিথিপরায়ণ ছিলেন যে, প্রতিদিন অন্তত একজন অতিথিকে সঙ্গে না নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতেন না। এক দিনের ঘটনা, সারা দিনেও তিনি কোনো অতিথি পেলেন না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সময় তিনি যখন হতাশ হয়ে গৃহের ভেতরে প্রবেশ করতে যাবেন এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে হাজির হলো। তিনি অতি আনন্দে ভিক্ষুককে বসালেন এবং খাবার দিলেন। সারা দিন ক্ষুধার্ত ভিক্ষুকটি খাবার পেয়েই গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করল। হজরত ইব্রাহীম দেখলেন, বিসমিল্লাহ না বলেই ভিক্ষুকটি খাওয়া শুরু করেছে এবং বুভুক্ষের মতো গিলছে। আল্লাহর প্রিয় নবী ইব্রাহীম (আ.)-এর এটা সহ্য হলো না। তিনি ক্রুদ্ধ স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি হে! তুমি খাওয়ার আগে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করলে না যে।’ ভিক্ষুক বলল : (নাউজুবিল্লাহ) আমি বাপু আল্লাহ-টাল্লাহ মানিনে। খাবার পেলে খাব, না পেলে উপোস করব। এর সঙ্গে আবার আল্লাহর নাম নেওয়ার কি সম্পর্ক?
হজরত ইব্রাহীম (আ.) রেগে আগুন হয়ে বললেন : ‘তবে রে হতভাগা! এর একটি দানাও তুই স্পর্শ করতে পারবি না, এক্ষনি দূর হ আমার সামনে থেকে।’ বেচারা ভিক্ষুক আর কি করবে। এক গ্রাস কি দুই গ্রাস খেয়েছিল। আর খেতে পারল না। হজরত ইব্রাহীম (আ.) ততক্ষণে তার খাবারের থালাটিও কেড়ে নিয়েছেন। অগত্যা সে একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বিদায় নিল। কিছুক্ষণ পরেই ওহি এলো। আল্লাহ ধমকের সুরে হজরত ইব্রাহীমকে বললেন : ‘হে ইব্রাহীম! দীর্ঘ আশি বছর ধরে এ অবিশ্বাসী নাস্তিককে আমি আমার পৃথিবীতে বসবাস ও চলাফেরা করতে দিয়েছি, খাবার সরবরাহ করছি। আর তুমি কি-না একটিবারও তাকে সহ্য করতে ও খাওয়াতে পারলে না।’ অনুতপ্ত হয়ে হজরত ইব্রাহীম (আ.) ভিখারিটিকে খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলেন না। সেই থেকে হজরত ইব্রাহীম (আ.) মুমিন ও কাফের নির্বিশেষে সব অভাবি মানুষকে দয়া প্রদর্শন করতেন এবং সব রকমের অতিথির সমাদর করতেন।
লেখক : খতিব, সারুলিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ঢাকা।