রানা প্লাজা ধসের এক বছর: কাজে ফেরেননি ৭৪% শ্রমিক
এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেছে সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনার। কিন্তু এ দুর্ঘটনায় জীবিত শ্রমিকদের ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশই এখনো কাজে ফিরতে পারেননি। এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহতদের ৭৮৬টি পরিবারের ৬৭ দশমিক ৭ শতাংশই দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করছে। আবার কাজের প্রতি অনীহা চলে এসেছে সাড়ে ৭ শতাংশ শ্রমিকের। বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইডের এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপ প্রতিবেদনটি গত রোববার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে প্রকাশ করা হয়। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ-এর ‘রানা প্লাজা ধসের বছরান্তে ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থার ওপর প্রাথমিক সমীক্ষা’ শীর্ষক সমীক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জরিপকারী দলের প্রধান আমানুর রহমান। এ থেকে জানা যায়, রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের মধ্যে জীবিত ১ হাজার ৪৩৬ ও নিহত ৭৮৬ জনের পরিবারের ওপর এ সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষায় বলা হয়, দুুর্ঘটনার শিকার জীবিতদের ১ হাজার ৫৮ জন বা ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক পুনরায় কাজে ফিরতে পারেননি। কারণ হতাহত শ্রমিকদের বেশির ভাগই এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি। আহত শ্রমিকদের ৬৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ শারীরিকভাবে অসুস্থ ও ২৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ অস্থিমজ্জাসংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছেন। আর ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ বিভিন্ন কারণে কাজ পাচ্ছেন না। সমীক্ষায় জীবিতদের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির ভয়াবহতা আরো যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করা হয়।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, আহত শ্রমিকদের ৬৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ এখনো নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। আঘাতগ্রস্ত (ট্রমা) ২৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এক বছরেও শারীরিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি ২২২ জন শ্রমিকের (১৫.৫%)। অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে ১৩০ জনের (৯%)। ২১ জন আছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। আর এক হাজার ৬৩ জনের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে।
নিহতদের পরিবার প্রসঙ্গে সমীক্ষায় দেখানো হয়, গত ১২ মাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৫টি পরিবার তাদের আয়ের উত্স খুঁজে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এখনো ৬৭ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিকের পরিবার তাদের নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে নানা সমস্যা মোকাবেলা করছে। ২৬ শতাংশ পরিবার কিছু সমস্যায় ভুগছে, ৪ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে সক্ষম নয়। মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ পরিবারকে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। উপস্থাপনায় আরো জানানো হয়, এ মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দাবি ৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৫ টাকা। তবে কোনো কোনো পরিবারের জন্য দরকার ৬ লাখ টাকা। ৬২ দশমিক ৬ শতাংশ নিহত শ্রমিকের প্রতিনিধিরা ১ থেকে ৫ লাখ টাকা এ মুহূর্তে দাবি করেছে। কেউ কেউ ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেছেন বলে অ্যাকশনএইডের জরিপে বলা হয়।
উল্লেখ্য, পাঁচ হাজার শ্রমিক কর্মরত থাকা অবস্থায় গত বছরের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১ হাজার ১৩৪ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২ হাজার ৪৩৮ জনকে। এখন পর্যন্ত ১৬৮ জন শ্রমিকের খোঁজ পাওয়া যায়নি।