বিলুপ্ত সামরিক অধ্যাদেশ পুনরুজ্জীবনের তাগিদ
মন্ত্রিসভা সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশে বাতিল দুই সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশগুলো থেকে প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশগুলো পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছে। আজ সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ নির্দেশ দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ২০১০ সালে সুপ্রীমকোর্ট এক আদেশে জিয়া ও এরশাদের সামরিক শাসনামলে জারি করা সাড়ে ৫০০ অধ্যাদেশ বাতিল ঘোষণা করে। তিনি বলেন, সুপ্রীমকোটের আদেশের আলোকে বাতিল অধ্যাদেশগুলোর মধ্যে যে সকল অধ্যাদেশের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প অব্যাহত রয়েছে, সেগুলোকে দ্রুত সংশোধন, পরিমার্জন ও হালনাগাদ করে আইনে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুই সামরিক শাসনামলের যে সাড়ে ৫০০ অধ্যাদেশ বাতিল করেছিল, তার মধ্য থেকে ২৫৭টি পুনরায় কার্যকর করা হবে। মন্ত্রিসভার সুপারিশে এসব অধ্যাদেশকে পরিমার্জন ও হালনাগাদ করে আইনটিকে বাংলায় রূপান্তরিত করতে মন্ত্রালয়গুলোকে সময় নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১১টি মন্ত্রণালয় এ সব অধ্যাদেশকে ভিত্তি করে ১৬টি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করেছে। এরমধ্যে ৩টিকে নীতিগত ও ১৩টিকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাকি ২৪১টি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করার কাজ এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা পুরনো এসব আইনকে দ্রুত পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করার তাগিদ দিয়েছে।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আজকের সভায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম ৩ মাসের কার্যক্রম ও এর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ১২ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের প্রায় ৩ মাসের কার্যক্রমের অগ্রগতি মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়। মন্ত্রিসভা সরকারের প্রথম ৩ মাসের কাজের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, এ ৩ মাসে মন্ত্রিসভার ১০টি বৈঠক হয়েছে। এতে ৩৭টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে ১৯টি বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিসভায় খসড়া অনুমোদনের পর সংসদে আইন পাশ হয়েছে ২টি। এ সময়ে সরকারের ২টি অনুমোদিত নীতি বা কর্মকৌশল ও ৬টি অনুমোদিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ ৩ মাসে সরকারের কাজের অগ্রগতির হার ৫১ দশমিক ৩৫ ভাগ। আওয়ামী লীগের আগের সরকারের প্রথম ৩ মাসের তুলনায় বর্তমান সরকারের কাজের অগ্রগতির হার ভাল বলে সচিব জানান। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা সরকারের নির্বাচনী ইস্তেহার অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প বা এ্যাকশন প্লান তৈরির তাগিদ দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এ কাজ শুরু করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নিয়মিত এসব কাজ তদারকি করছে।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সরকারের আকার বৃদ্ধির সংগে তাল মিলিয়ে পিএসসি দ্রুত জনবল নিয়োগ বা সুপারিশ করতে পারছে না। এই জনবলের অভাবে মন্ত্রিসভার অনেক সিদ্ধান্ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাওয়ায় নিয়োগের ব্যাপারে নতুন কোন পদ্ধতি খুঁজে বের করার জন্য মন্ত্রিসভা আজ মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের প্রয়োজন অনুযায়ী পদ সৃষ্টি এবং শূন্য পদ বা সৃষ্ট পদে দ্রুত জনবল নিয়োগ দেয়ার জন্য নতুন পদ্ধতি তৈরিতে শিগগিরই অন্যান্য সচিবকে নিয়ে বৈঠকে বসা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ৩ থেকে ৬ মার্চ লন্ডনে অনুষ্ঠিত ‘কমনওয়েলথ আইসিটি মিনিস্টার্স কনফারেন্স ২০১৪’ সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, এ সম্মেলনে ৩টি বিষয়ে আলোচনা হয়। বিষয়গুলো হলো- সাইবার গর্ভনেন্স, শিক্ষায় আইসিটির ব্যবহার এবং আইসিটি ও প্রতিবন্ধী। তিনি আরো বলেন, সম্মেলনে মন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে বর্তমান সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরেন।