অস্তিত্ব সংকটে ইসলামপুরের মৃতশিল্প

IIIIII-220x178খবর বাংলা২৪ ডেক্স: প্রাচীন কাল থেকে অদ্যাবধি মৃতশিল্পীদের নিপুণ হাতের তৈরি নিত্যব্যবহার্য মাটির তৈজসপত্র মানুষের চাহিদা পূরণের ব্যাপক ভুমিকা রাখলেও সম্প্রতি প্লাষ্টিক, মেলামাইন ও  কাঁচের তৈরি নানা সামগ্রীর ভিরে এবং অর্থের অভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ইসলামপুরের  ঐতিহ্যবাহি মৃতশিল্প।
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ইসলামপুর শহরের কুমারপাড়া আজ থেকে কমপক্ষে দু’শ বছর আগে গড়ে উঠে মৃতশিল্প পল্লী। প্রাচীন যুগে পাল বংশীয় মৃতশিল্পীদের নিপুণ হাতের তৈরি মাটির বাসন কোসন সমাজের সর্বস্তরেই সমাদৃত ছিল। তখনকার দিনে মানুষের নিত্য সঙ্গী ছিল মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিল, ঢাকুন, পুসুন, ঝাজর, কইড়া, সরা, সুরাহি, ঘটি-বাটি, কাদা, কলস ও চাড়ীসহ বিচিত্র তৈজসপত্র। এছাড়াও হুক্কা, কলকি, দিপালি, মলকে, কোলা, পুতুল, জালের কাঠি, ফুলদানী ও ফুলের টব সহ শিশুদের খেলার সামগ্রীর প্রয়োজনীয়তাও তখন মৃতশিল্পীদের সম্মানিত করেছে। ওই সময় মৃতশিল্পীদের ঘরে ছিলনা কোন পূঁজি সংকট। এছাড়াও কাঁচা মালের সহজ লভ্যতা, তৈরি মালামাল সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকায় এ শিল্পে শ্রম দিয়ে তখন সুখেই দিনাতিপাত করেছেন মৃতশিল্পীরা। সম্প্রতি কাঁচামাল ও পূঁজি সংকটে এবং প্লাষ্টিক, মেলামাইন ও কাঁচের তৈরি নানা সামগ্রীর ভিরে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ইসলামপুরের মৃতশিল্প। আর অস্তিত্ব সংকটে পড়ায় এ শিল্পের উপর নির্ভরশীল ইসলামপুর শহরের কুমার পাড়া দেড়শ পরিবারের ৫শতাধিক মানুষ বেকার হয়ে পড়ায় বিপন্ন হতে বসেছে তাদের জীক্ষনমান।
ইসলামপুর পৌর শহরের কুমার পাড়া বিমল চন্দ্র পাল জানান, আজ থেকে দুই যুগ আগেও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ইসলামপুর শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সকাল থেকে সন্ধা অবধি মৃত শিল্পের হাট বসত। ওই সময় প্রতিদিন বৃহত্তর ময়মনসিংহ এর শতশত মানুষ এই বাজার থেকে  মৃতশিল্পীদের নিপুণ হাতের তৈরি মাটির বিচিত্র তৈজসপত্র ও খেলার সামগ্রী সহ হরেক রকমের নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী পাইকারী ও খুচরা মুল্যে ক্রয় করে নিয়ে যেত। তখন মৃত শিল্পীদের দিন ভাল কাটলেও এখন সংকটে পড়েছেন তারা। কারণ স¤প্রতি মৃত শিল্পের চাহিদা পূরণ করছে স্বল্প মুল্যের প্লাষ্টিক, মেলামাইন ও কাঁচের তৈরি নানা সামগ্রী। এতে মৃতশিল্পের কদর অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
অপরদিকে প্রাচীন যুগের ঐতিহ্য বহনকারী জামালপুরের মৃতশিল্প উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধিসহ সংরক্ষণ ও বাজারজাত করনের জায়গার সংকট, কাঁচা মালের দুষপ্রাপ্যতা এবং সরকারী কোন প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় পুঁজি সংকটে দিশেহারা হয়ে এ পেশার সক্ষম শিল্পীদের অনেকই এখন তাদের বাপ দাদার পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। তবে বেকায়দায় পড়েছেন জন্ম থেকে এপেশার নিয়োজিত দেবনাথ পাল , মিলন রাণী পাল ও সত্য নারায়ন পালসহ অর্ধশতাধিক প্রবীণ মৃতশিল্পীরা। তারা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তাদের বাপ দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে চান। তাই বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া ওইসব মৃতশিল্পীরা প্রাচীন যুগের ঐতিহ্য বহনকারী জামালপুরের মৃতশিল্প বিলুপ্তির কবল থেকে রক্ষার্থে বর্তমান সরকারে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের জরুরী পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করেছেন।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend