রানীর হঠাৎ বিয়ে!
রানী ও আদিত্য একাধিকবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করলেও শেষতক নানা কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। অবশেষে ২১ এপ্রিল রাতে ইতালিতে হঠাত্ করেই অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে করেন রানী-আদিত্য। এর পেছনের কারণ সম্পর্কে রানীর বাবা চলচ্চিত্র নির্মাতা রাম মুখার্জির চাচাতো ভাই সাব্বির মুখার্জি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে রানীর বিয়ের ক্ষণ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। আমার চাচাতো ভাই রাম মুখার্জির শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো না। মূলত এ কারণেই এখন হঠাত্ করে রানীর বিয়েটা হয়েছে।’ সাব্বির আরও বলেন, ‘রানী ও আদিত্য একে অন্যকে অনেক ভালোবাসে। তারা দুজনই চমত্কার দুজন মানুষ। তাদের জুটিটাও দারুণ মানিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই খুশি। ওরা দেশে ফিরলে আমরা একটা বড় হাঙ্গামা করব। মহা ধুমধামে ওদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।’ সম্প্রতি এক খবরে এমনটিই জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
এক বিবৃতির মাধ্যমে রানী-আদিত্যর বিয়ের খবর নিশ্চিত করেছে যশ রাজ ফিল্মস কর্তৃপক্ষ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা দিচ্ছি যে, মিস্টার আদিত্য চোপড়া এবং মিস রানী মুখার্জি ২১ এপ্রিল রাতে ইতালিতে বিয়ে করেছেন। তাঁদের পরিবারের সদস্য ও কাছের বন্ধু-বান্ধবদের উপস্থিতিতে অনাড়ম্বর ও ঘরোয়াভাবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে।’
রানী নিজেও এক সংবাদ বিবৃতির মাধ্যমে ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। রানী তাঁর বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ভক্তদের সঙ্গে আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিনটির আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছি। বরাবরই আমার জীবনের যাত্রায় সব সময় তাঁদের ভালোবাসা ও আশীর্বাদ পেয়েছি। আমি খুব ভালো করেই জানি, আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা বিশেষ এই দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। আমি এও জানি, আমার বিয়ের খবর পেয়ে তাঁরা আমার জন্য অনেক বেশি আনন্দিত হবেন।’
রানী আরও লিখেছেন, ‘ইতালিতে চমত্কার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি আর আদি (আদিত্য) বিয়ে করেছি। আমাদের পরিবারের সদস্য ও কাছের কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। একজন মানুষের অনুপস্থিতি আমি ভীষণভাবে মিস করেছি। আর তিনি হলেন প্রয়াত যশ চোপড়া। কিন্তু আমি জানি, সশরীরে না থাকলেও তাঁর অদৃশ্য সত্তা আমাদের সঙ্গেই ছিল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তিনি চিরকাল আমাকে ও আদিকে তাঁর ভালোবাসা ও আশীর্বাদ দিয়ে যাবেন।’
নিজের জীবনকে রূপকথার গল্পের সঙ্গেই তুলনা করেছেন রানী। এ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘শিশুকালে রূপকথার গল্পগুলো সত্য বলেই মনে হতো আমার কাছে। ঈশ্বরের কৃপায় রূপকথার গল্পের মতোই একটি জীবন আমি পেয়েছি। বিয়ের মধ্য দিয়ে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করলাম। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতেও রূপকথার গল্পের মতোই আমার জীবনপ্রবাহ চলতে থাকবে।’
আদিত্যর প্রথম স্ত্রী পায়েল খান্না। ২০০৯ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সেই থেকে রানী-আদিত্যর প্রেম নিয়ে নানা কানা-ঘুষা চলেছে বলিউডে। বছরের পর বছর ধরে প্রেম করলেও, কখনোই তা মুখে স্বীকার করেননি রানী-আদিত্য। বরাবরই নিজেদের প্রেমের সম্পর্ককে গোপন রেখেছেন তাঁরা। বিশেষ করে আদিত্য তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মিডিয়ার সামনে কথা বলতে একদমই রাজি ছিলেন না। কারণ বিষয়টি রীতিমতো অস্বস্তিকর তাঁর কাছে। কিন্তু তার পরও বিভিন্ন সময়ে এ জুটির হাঁড়ির খবর ফাঁস করেছে মিডিয়া।
এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার রানী-আদিত্যর বিয়ের খবর রটেছে। ২০১২ সালেই বিয়ে করে থিতু হওয়ার পরিকল্পনা করেছিল এই জুটি। কিন্তু আদিত্যর বাবা যশ চোপড়ার আকস্মিক মৃত্যুর কারণে বিয়ের সব পরিকল্পনাই বাতিল করা হয়। কারণ হিন্দু রীতি অনুযায়ী পরিবারের কারও মৃত্যু হলে সাধারণত এক বছর কোনো ধরনের উত্সবের আয়োজন করা যায় না। এ ছাড়া গত বছরের জুলাইয়ে আদিত্যর মা পামেলা চোপড়া ছেলের বিয়ের ‘শুভলগ্ন’ জানার জন্য পারিবারিকভাবে পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বলে খবর রটেছিল।
এদিকে রানীর অনামিকায় বিশাল একটি হীরার আংটি দেখা যাওয়ার পর চলতি বছরের শুরুর দিকে আদিত্যর সঙ্গে তাঁর বাগদানের খবর চাউর হয়। শুধু তাই নয়, ১০ ফেব্রুয়ারি যোধপুরের উমাইদ ভবন প্রাসাদে তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন বলেও খবর রটেছিল।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন না হলেও গত জানুয়ারি মাস থেকে এক ছাদের নীচেই বসবাস করছেন রানী ও আদিত্য। এ প্রসঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছিল, প্রিয়তমার কাছ থেকে একমুহূর্তও দূরে থাকতে চান না আদিত্য। এ জন্য তিনি জুহুতে রানীর বাংলোয় উঠেছেন। সেখানে এক ছাদের নিচেই বসবাস করছেন তাঁরা।
রানী-আদিত্যর প্রেম ও বিয়ে নিয়ে এত সব থলের খবর বের হলেও কোনো এক অজানা কারণে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি এই জুটি কিংবা তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিয়ের ঘোষণা দিলেন ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’ তারকা রানী মুখার্জি ও সাড়াজাগানো ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ ছবির নির্মাতা আদিত্য চোপড়া। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর ভালোবাসায় ভর করে সুখী সংসার জীবন কাটাবেন এ নবদম্পতি—এমনটাই প্রত্যাশা সবার।