বিচারবঞ্চিত ধর্ষিতা, বিচারকের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ
ধর্ষণের সুস্পষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ঘুষ নিয়ে আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বলে বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার ঢাকার ৪নং নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আরিফুর রহমান তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা সুস্পষ্ট অভিযোগ ও সাক্ষীদের সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকা সত্ত্বেও ধর্ষক মো. মাহবুবুল হাসান তানভীরকে (২৮) অব্যাহতি দিয়েছেন। ফলে গর্হিত অপরাধ করেও পার পেয়ে গেলেন অপরাধী, বিচারবঞ্চিত হলেন ধর্ষিতা (২০)। অব্যাহতিপ্রাপ্ত ধর্ষকের বাড়ি সপ্তক গোধূলী অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ফ্ল্যাট নং সি-১, লালমাটিয়া, থানা-মোহাম্মদপুর। তার বাবার নাম মো. আব্দুল খালেক।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২০০৭ সালে কম্পিউটার কেনার সূত্রে ওই আসামির সঙ্গে ধর্ষিতার পরিচয় হয়।পরিচয় ধীরে ধীরে গভীর প্রেমে রূপ নেয়। আসামি ও ধর্ষিতা পরস্পরের বাসায় আসা-যাওয়া করতে থাকেন। একসময় আসামি তার বন্ধু-বান্ধবের কাছে ধর্ষিতাকে তার স্ত্রী বলে পরিচয় দিতে থাকেন। এরপর আসামি ধর্ষিতাকে বিয়ের প্রলোভনে ফেলে গত ২০০৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে নিজ বাসায় ডেকে ধর্ষণ করেন। শুধু তা-ই নয় কৌশলে পুরো ধর্ষণের ঘটনা ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করেন তিনি।
এরপর ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ধর্ষিতাকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে আরো বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করেন। একসময় ধর্ষিতা আসামিকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে তিনি আবারও ওইসব ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেন। অনন্যোপায় হয়ে ধর্ষিতা আসামির সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরপর আসামি ধর্ষিতার বাসার টিঅ্যান্ডটি ফোনে জানান যে, তিনি ধর্ষিতার বাবা-মা-বোনসহ অন্য সদস্যদের ছবি বিকৃত করে ই্ন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছেন। ওইসব ছবি ও ভিডিও যেসব সাইটে আপলোড করা হয়েছে তার ঠিকানাও ধর্ষিতাকে জানান বলে এজাহার থেকে জানা গেছে।
ধর্ষিতা ওইসব ওয়েবসাইটে গিয়ে বর্ণনা মতে সত্যতা পান। তখন আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে গত ২০১৩ সালের ১ জুলাই মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর গত বছরের ১৬ জুলাই মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ আসামি মাহবুবুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে তিনটি কম্পিউটার ডিস্ক, যার একটিতে সেই ধর্ষণ দৃশ্য, আরেকটিতে ধর্ষিতার বিকৃত ছবি এবং অপরটিতে ফেসবুকে আপলোড করা ছবি আলামত হিসাবে জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় ধর্ষিতার মা ও তাদের বাসার গৃহকর্মী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় সাক্ষ্যও দিয়েছেন। ডা. মেরুনা মাহজাবীন ওই ধর্ষিতার মেডিক্যাল টেস্ট করেন। তিনি তার প্রদত্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
গত বছরের ২২ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ছাইফুল ইসলাম মাহবুবুল হাসানকে অভিযুক্ত করে এবং ৮ জনকে সাক্ষী করে চার্জশিট দাখিল করেন। গত বছরের ২৫ আগস্ট এই আসামিকে বিচারক আরিফুর রহমান মৌখিকভাবে বিয়ে করার শর্ত দিয়ে এবং লিখিত আদেশে মাত্র ১০ হাজার টাকার মুচলেকায় জামিনে দেন। সর্বশেষ ২৩ এপ্রিল বুধবার চার্জ গঠনের দিনে বিচারক আরিফুর রহমান ধর্ষক মো. মাহবুবুল হাসানকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিলেন।
এই বিষয়ে ধর্ষিতার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সবুজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মামলায় অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। এমতাবস্থায় বিচারক পিপি ও আমাদের কথা অগ্রাহ্য করে আসামিকে বেআইনিভাবে অব্যাহতি দিয়েছেন।’ আসামির কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন বলেও ওই আইনজীবী সুস্পষ্ট অভিযোগ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, এই বিচারক তিন লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে এই আসামিকে তাদের বিরোধিতা অগ্রাহ্য করে জামিন দিয়েছেন বলেও জানান।
অবশেষে তিনি বাংলামেইলের প্রশ্নে জানান, খুব শিগগিরই তারা বিচারকের এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাবেন।