১০০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল
ঢাকায় ১০০০ শয্যার একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ও কোরিয়ার যৌথ উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীনে এ হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক এবং বিএসএমএমইউর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। রাজধানির শাহবাগে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পেছনে সরকারি ১২ বিঘা জমির ওপরে বিশেষায়িত এই হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। হাসপাতাল নির্মাণের জন্য কোরিয়ান সরকারের পক্ষে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারকে ১০০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। বিএসএমএমইউর উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত একথা জানান।
উপাচার্যের অফিস সুত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিএসএমএমইউর মিল্টন হলে বাংলাদেশ-এর পক্ষে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ও এক্সটার্নাল রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব আসিফ উজ্জামান এবং কোরিয়ার পক্ষে এ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি টিম লিডার ইউলজি ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ড. উ হাইউন চোর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত থেকে এ চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। এতে বিএসএমএমইউ এবং ইআরডির কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, এ বিশেষায়িত হাসপাতালটি একটি ‘পূর্ণাঙ্গ গবেষণা কেন্দ্র’ হবে। এখানে সব ধরনের গবেষণার উপযুক্ত আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকবে। বর্তমানে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিদেশে যেতে হয়, এই হাসপাতালটি নির্মিত হলে দেশেই সেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এ হাসপাতাল শুধু রোগিদের উন্নত চিকিৎসা সেবাই নিশ্চিত করবে না। এর মাধ্যমে দেশে চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নততর গবেষণার সুযোগও সৃষ্টি হবে।
দেশে উন্নততর চিকিৎসা বিদ্যা নিশ্চিত, চিকিৎসকদের জন্য অত্যাধুনিক পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা, বায়োমেডিকেল রিসার্চ এবং জনগণের জন্য উচ্চমানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ এই হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিএসএমএমইউ এবং ইআরডি প্রথমে কোরিয়ার কাছে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব উপস্থাপন করে। এর প্রেক্ষিতে দুদেশের গবেষক দল ফিজিবিলিটি স্টাডি করার পর দুদেশের সরকার যৌথভাবে এই হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।
এবছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের সাথে কোরিয়ান সরকারের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হবে উল্লেখ করে ডা. প্রাণ গোপাল বলেন, তিন বছর মেয়াদি এই হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ আগামী নভেম্বরে শুরু করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। হাসপাতাল নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ ও চুক্তিসহ নির্মাণের সব কাজ সরাসরি তত্ত্বাবধানের জন্য কোরিয়ান সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য কোরিয়া যে ঋণ দেবে তা শতকরা .৭ টাকা সুদে ৪০ বছরে শোধ করতে হবে। তিনি বলেন, হাসপাতালের আয় ও সরকারের তহবিল থেকে যৌথভাবে এই ঋণ পরিশোধ করা হবে। তবে প্রস্তাবিত বিশেষায়িত হাসপাতালের নাম কি হবে এ ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
হাসপাতালে ১৮টি বিশেষায়িত ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং গবেষণা করা হবে। এগুলো হলো- লিভার, গল ব্লাডার ও প্যানক্রিস সেন্টার, অরগান ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার, ক্যানসার সেন্টার, ম্যাটারনাল এবং চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, ডেন্টাল সেন্টার, কারডিওভাসকুলার/নিউরোসার্জারি সেন্টার, কমিউনিকেবল ডিজিজ সেন্টার, এনড্রোক্রিনোলজি ডায়াবেটিস সেন্টার, গ্যাসট্রোএনটারোলজি সেন্টার, রেসপিরেটরি সেন্টার, জেরিআট্রিক (বয়স্কদের চিকিৎসা) সেন্টার, জয়েন্ট/স্পাইন কর্ড সেন্টার, হার্ট সেন্টার, বার্ণ ইনজুরি সেন্টার, হেলথ স্ক্রিনিং সেন্টার, ইমারজেন্সি মেডিকেল সেন্টার, এমবুলেটরি সার্জারি সেন্টার এবং কিডনি মেশিন সেন্টার (হিমোডায়ালিসিস সেন্টার)। বিএসএমএমইউ’র ১৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে বর্তমানে ৪২ টি বিভাগে মেডিসিন, সার্জারি, ডেন্টিস্টি এবং প্যারাক্লিনিক্যাল সার্ভিস দেয়া হচ্ছে।