খবর বাংলা২৪ ডেক্স :‘আমার পোলাডারে বালা কইরা কোলেও নিতে পারলো না। দেখতেও পারলো না। আমার পোলাডারে এতিম কইরা থুইয়া গেলো।’ এসব কথা বলে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মত্ত (পাগলা) হাতির আক্রমনে নিহত শিবু পান্ডের স্ত্রী ইতি পান্ডে। বুধবার গভীর রাতে কোন এক পথে ভারতের গারো পাহাড় থেকে এসে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার পৌরএলাকার সাধুপাড়ায় প্রবেশ করে হাতিটি বিভিন্ন এলাকায় আক্রমন চালায়। এসময় দুই ব্যক্তি নিহত ও দুই ব্যক্তি গুরুতর আহত হন।
পুলিশ এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে,শিব চরণ পান্ডে শিবু গত বুধবার রাত আটটার দিকে কুয়েত থেকে দুর্গাপুরে সাত বছর পরে জন্ম নেওয়া ছেলেসহ পরিবারের লোকজনকে দেখতে আসেন। সকাল বেলা শিব চরণ পান্ডে শিবু হাঁটতে বের হয়েছিলেন। বন্য হাতির আগমনের কথা শুনে কৌতুহলবশতঃ তিনিও হাতি দেখতে ছুটে যান।তখন তিনি মুঠোফোনে ভিডিও করতে চেয়েছিলেন। চারদিক দিক থেকে জনসাধারণ ঘিরে ফেলায় হাতিটি বেপরোয়া হয়ে আক্রমন শুরু করে। শিবু বাঁচার জন্য চেষ্টা করছিলেন দৌড়ানোর সময় মাটিতে পড়ে যাওয়াতে হাতি পাদিয়ে শিবুর মাথা বুক সহ শরীরের অন্যান্য জায়গায় আঘাত করে।পরে তাকে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে বিরিশিরি এলাকায় পর্যন্ত নেওয়ার পর মারা যান। এর আগে পৌর এলাকার সাধু পাড়ার হরি দে‘র বাড়িতে ভাঙচুরের সময় তার (হরি দে’র স্ত্রী ) গীতা রাণী (৫৫) আহত হন হাঁতি শুড় দিয়ে পেছিয়ে তার হাত পা ভেঙ্গে পেলে। তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। হাতিটি সোমেশ্বরী নদীর চর দিয়ে পৌরএলাকায় ঢুকে পড়ে। এবং পরে চক লেংগুরা গ্রামে ঢুকলে সেখানেও মানুষ চারদিক থেকে চিৎকার শুরু করে এবং ঘিরে ফেললে ঐ গ্রামের তাহের উদ্দিন (৭০) নামের এক বৃদ্ধকে হাতি শুর দিয়ে আটক করে আছার দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। তিনি ফজরের নামাজ পরে মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পরে তাকেও দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে মৃত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। এ সময় একই গ্রামের আব্দুর রহিম (৩৫) আহত হন। তাকে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে চক লেংগুরা এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে জেলা প্রশাসকের পরামর্শে নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের নির্দেশে এসআই সাইদুর রহমান এবং কনষ্টেবল ইব্রাহীম যৌথ ভাবে ১৬ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে হাতিটিকে মেরে ফেলেন। খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস, জেলা প্রশাসক ড. আবুল কালাম আজাদ,এডিসি ইউসুফ আলী,নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রনয় চাকমা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমদাদুল হক খান সহ বিভিন্ন স্তরের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, হাতিটির প্রাকৃতিক কারণে জনপদে ঢুকে পড়েছিল। বের হতে না পেরে মানুষকে আক্রমণ করে। জানমাল রক্ষার্থে হাতিটিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে এর কোন বিকল্প ছিলনা। এবং নিহতদের পরিবারবর্গকে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে । মৃত হাতিটি বিধি অনুযায়ী শেরপুর বন বিভাগ ব্যবস্থা নিবেন।