খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের
খবর বাংলা২৪ ডেক্স: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, একটি সভ্য দেশে গুম ও অপহরণের ঘটনা ঘটতে পারে না। সমাজে এ ধরনের অন্যায় ও অবিচার মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের পরিস্থিতি চলতে থাকলে রাষ্ট্র তার গণতান্ত্রিক মর্যাদা হারায়। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গুমের শিকার ৮ ব্যক্তির সন্ধানের দাবিতে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মানববন্ধনে এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইসমাঈল হোসেন বেঙ্গল। এডভোকেট সুলতানা কামাল জানান, ‘দেশে যেসব গুমের ঘটনা ঘটছে তাতে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর কথা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য জনগণের নিরাপত্তা দেয়। তারা যে গুম ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত নয় তা জাতির কাছে এখনও পরিষ্কার বার্তা যায়নি। তিনি বলেন, গুম ও অপহরণের সঙ্গে যদি রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত থাকে তাহলে তাদেরকে দেশের নাগরিকের কাছে একদিন অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। দায়িত্বে অবহেলার কারণে তখন তারা কোন ছাড় পাবে না।ড. শাহদীন মালিক বলেন, গুম ও অপহরণের জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। এভাবে চলতে পারে না। রাষ্ট্র যদি গণতান্ত্রিক হয় তাহলে নাগরিকের কথা শুনতে হবে। তানা হলে রাষ্ট্র তার গণতান্ত্রিক চরিত্র হারিয়ে ফেলে। তখন ওই রাষ্ট্র একটি স্বৈরশাসিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তিনি বলেন, পুলিশ জনগণের টাকায় বেতন পায়। কোন শাসক তাদের পকেট থেকে পুলিশকে বেতন দেয় না। এজন্য জনগণের দুঃখ কষ্টের কথা অবশ্যই তাদেরকে শুনতে ও বুঝতে হবে। নইলে তাদের চরিত্র গণবিরোধী বলে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, আজকে যারা গুম, খুন ও অপহরণের শিকার হচ্ছেন তাদের পরিবারে কি অবস্থা বিরাজ করছে তা প্রধানমন্ত্রীকে বুঝতে হবে। যারা গুম হচ্ছেন তারা এক একজন পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তি। তারা না থাকার কারণে ওই পরিবারের মধ্যে দরিদ্রতা নেমে এসেছে। তাদের ছোট বাচ্চারা কান্নাকাটি করছে। এটি মেনে নেয়া যায় না। শাহদীন মালিক বলেন, ‘দেশ যেহেতু গণতান্ত্রিক তাই সবাই যে কোন বৈধ রাজনৈতিক দল করতে পারে। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বিরোধী মতকে দমন করার জন্য গুম ও খুন করা এটি একটি ফ্যাসিজম। একে রুখতে হবে। তিনি গুম হওয়া প্রতিটি নাগরিককে উদ্ধার করার জন্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ঘণ্টা ধ্বনি দল রয়েছে। যখন ওই সব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে কোন লোকজন প্রবেশ করে তখন সেখানকার জনগণ ঘণ্টা ধ্বনি বাজিয়ে এক স্থানে সমবেত হয়। পরে সমবেত ওই জনগণ সেখানে অভিযানে আসা তারা প্রকৃত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন কিনা তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। পরে সেখানে তাদের অভিযান চালাতে দেয়। এর আগে দেয় না। বাংলাদেশের যে বর্তমান পরিস্থিতি বিরাজ করছে তার জন্য প্রতিটি গ্রামগঞ্জে ঘণ্টা ধ্বনির দল গড়ে তুলতে হবে। যেন কোন বাহিনী গুম ও অপহরণ করতে না পারে। এজন্য তিনি দেশের জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। মানববন্ধনে গুমের শিকার আসাদুজ্জামান রানার বড় বোন মিনারা বেগম বলেন, গত বছরের ৪ঠা ডিসেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে র্যাব পরিচয়ে তার ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, তার ভাই কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে যদি আইনের চোখে অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে তার বিচার করা হোক। কিন্তু, এভাবে দিনের পর দিন সে নিখোঁজ থাকবে তা মেনে নেয়া যায় না। গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের স্ত্রী নাসিমা বেগম বলেন, ‘তার স্বামী ঢাকা সিটি করপোরেশনে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। তাদের নিজের বাসা শাহীনবাগ এলাকায়। কিন্তু, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলা ও হামলার ভয়ে বসুন্ধরার বারিধারার তার খালার বাসায় থাকতো। গত বছরের ৪ঠা ডিসেম্বর বসুন্ধরা এলাকা থেকে র্যাব ডিবি পুলিশের পরিচয়ে একদল যুবক তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার কোন খোঁজখবর নেই।