বাংলাদেশের ক্ষত সারিয়ে তোলা দরকার

বাংলাদেশের ক্ষত সারিয়ে তোলা দরকার

খবর বাংলা২৪ ডেক্স: ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার শাহবাগে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী সমবেত হয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে। প্রতিবাদী এসব মানুষের বেশির ভাগেরই জন্ম ১৯৭১ সালের পরে। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়েছে তা তাদের মনে জাগরূক হয়ে আছে। বাংলাদেশ সরকার ওই সব ধর্ষিতার মধ্যে যারা এখনও বেঁচে আছেন তাদের চিহ্নিত করার একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যদিও বিচার সুদূরপরাহত তবুও এর মাধ্যমে তারা কমপক্ষে ওইসব অপরাধের শিকার হয়েছেন সেই স্বীকৃতি পাবেন। গতকাল অনলাইন হিন্দুস্তান টাইমসে লেখা ‘১৯৭১ উন্ড: বাংলাদেশ নিডস এ হিলিং টাচ’ শীর্ষক নিবন্ধে এ কথা লিখেছেন স্মিতা শর্মা। তিনি আরও লিখেছেন, শাহবাগের ওই প্রতিবাদের সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। সেখানে সাক্ষাৎ হয়েছিল ৭০ বছর বয়সী মালেকা খানের সঙ্গে। আঘাত পাওয়া নারীদের জন্য থেরাপি দিতে তিনি একটি বৃত্তিমূলক সংগঠন চালু করেছিলেন ১৯৭০-এর দশকে। ১৯৭১ সালে কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংস্থা ধর্ষিত ও নির্যাতিত নারীদের জন্য যে ক্যাম্প করেছিল সেখানে গোপনে স্বেচ্ছায় কাজ করতেন মালেকা খান। কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংস্থার প্রধান ছিলেন তখন কবি সুফিয়া কামাল। মালেকা খানের স্মৃতি থেকে এখনও সেইসব দিনের বেদনাবিধূর দিনগুলোর কথা মুছে যায় নি। তিনি বলেন, অপ্রত্যাশিতভাবে যুবতীরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন। তার মধ্যে যারা অনুমতি পেতেন তারাই গর্ভপাত করাতে পারতেন। অন্যরা নীরবে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সেই জ্বালা সয়েছেন। ‘আমরা পাকিস্তানিদের রক্ত চাই না’-এ কথা বলে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান ধর্ষিতাদের হতাশ করেন। এখন মালেকা খানের ধারণা নিয়েছে বাংলাদেশ। এখন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ধর্ষিতদের তথ্য সংগ্রহ করছে। এখন পর্যন্ত ২০ হাজার নারী তাদের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে এগিয়ে এসেছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, ধর্ষিতদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন তাদেরকে স্বীকৃতি দিতে চায় বাংলাদেশ। তাদেরকে জাতীয় বীরাঙ্গনা হিসেবে তুলে ধরতে চায়। তাদেরকে আবাসন অথবা আর্থিক সুবিধা দিয়ে পুরস্কৃত করতে চায়। বাংলাদেশের হিসাবে দু’ লাখের বেশি নারীকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা ধর্ষণ করেছে। এ সংখ্যা নিয়ে পাকিস্তানের দ্বিমত আছে। নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এ সংখ্যা অনেক কম। সিডনির এক চিকিৎসক জিওফ্রে ডেভিস স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গর্ভপাত করিয়েছিলেন। তিনিও মনে করেন, আনুষ্ঠানিক যে সংখ্যা দেয়া হয়েছে তা অনেক কম। যেসব নারী তাদের নির্মমতা সম্পর্কে সত্য বলতে চান তাদের বিরোধী শক্তি অনেক শক্তিশালী। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিন সন্তানের জননী ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর বয়স ছিল ২৩ বছর। তিনি প্রকাশ্যে তার কাহিনী বলে দিয়েছেন। কিন্তু তাকে নিয়ে তার সমাজ অনেক বিদ্রূপ ও হয়রানি করেছে। পুরনো এক বন্ধু আহসানুল্লাহ তাকে গ্রহণ করেছেন। কয়েক বছর পরে তিনি তাকে বিয়ে করেছেন। এতে তার পরিবার তাকে দূরে রাখে। মালেকা বেগম একজন ছাত্রী নেত্রী। তিনি বলেন, একটি টিভি শোতে ৪০ ঊর্ধ্ব এক পুরুষকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখে তিনি বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়েন। ওই ব্যক্তি কেঁদেছিলেন কারণ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। তার গর্ভে জন্ম নিয়েছেন তিনি। তাই এখন লোকজন তাকে ‘পাঞ্জাবি’দের ছেলে বলে বিদ্রূপ করে। নারী নেত্রী সুলতানা কামাল দুঃখ প্রকাশ করেন যে, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পরই এই ক্ষত শুকিয়ে যায় নি। কারণ সমাজ ছিল গোঁড়া। নারীরা বাইরে বেরুতে ভয় পেতেন। তিনি বলেন, নিজেদের জীবনের ওইসব ঘটনা প্রকাশ করে তাদের অনেকেই বর্তমান জীবনে ঝড় তুলতে চান নি। কিন্তু অন্য অনেকেই তা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। সত্য আঘাত করবেই। তাই বাংলাদেশকে খুব বেশি করে তার ক্ষত সারিয়ে তোলার কাজ শুরু করা দরকার।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend