বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- হলে বিচার বিভাগ আর রইলো কোথায়?
বাংলাদেশ সফররত ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি আলতামাশ কবীর বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- হলে বিচার বিভাগ আর রইলো কোথায়? যারা আইন হাতে তুলে নেয়, অবশ্যই তাদের বিচার হওয়া উচিত। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারের ডেইলি স্টার সেন্টারের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আয়োজিত ‘সবার জন্য সুবিচার’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। আলতামাশ কবীর বলেন, বিচারপতিদের রাজনৈতিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা নিয়ে বিচারকাজ করতে হবে। রাজনৈতিক চাপ থাকবেই। এটি চলমান একটি বিষয়। এই রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলা করেই সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রাজনৈতিক প্রভাব বলতে গেলে তেমন নেই বলে জানান তিনি। আলতামাশ কবীর বলেন, মানুষ যদি বিচারের কাছে আসতে না পারে, তবে বিচারকে যেতে হবে মানুষের কাছে। এ জন্য প্রয়োজন মানুষের মধ্যে জ্ঞান ও সচেতনতা বাড়ানো। আলোচনা অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে আলতামাশ কবীর বলেন, বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদ-ের বিধান রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন ও অভ্যন্তরীণ আইন যদি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে, তবে অভ্যন্তরীণ আইন প্রাধান্য পাবে। ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, বলিষ্ঠ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করা। কিন্তু বিচারব্যবস্থার প্রসার ছাড়া সুবিচার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আর এ জন্য বিচারব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি নাগরিকের চেতনা জাগ্রত করা, সচেতনতা বাড়ানো ও ক্ষুদ্রতা জয় করতে হবে। তিনি বলেন, ভারতে প্রান্তিক পর্যায়ে বিচারব্যবস্থা ছড়িয়ে দিতে প্রাথমিক আইনি সহায়তা কেন্দ্র এবং গ্রাম্য আদালত গড়ে তুলেছি। বাংলাদেশের আদালতের মামলাজট কমাতে এটা উদাহরণ হতে পারে। এ সময় তিনি ভারতের ঝাড়খ-ের একটি লোক আদালতে এক দিনে ২৯ লাখ মামলা মীমাংসার উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধান এবং ১৯৪৯ সালের ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো প্রায় একই রকম। সংবিধান কর্তৃক স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব সর্বোচ্চ আদালতের। একজন বিচারপতিকে তার ক্ষমতার সবটুকু ব্যবহার করতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য নাগরিকের স্বাধীনতা, সমতা ও সার্বভৌমত্ব থাকতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ রহমান। এ ছাড়া আলোচনা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আইনুন নিশাত। অনুষ্ঠানে সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজমালুল হক কিউসি, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, জানিপপে’র চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বেলা পৌনে তিনটায় ভারতের সাবেক প্রধান বিচারপতি আলতামাশ কবীর বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনসহ আপিল বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবী সমিতির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।