বিয়ে করেছে রেশমা
খবর বাংলা২৪ ডেক্স সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আটকে পড়ার প্রায় ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল পোশাকশ্রমিক রেশমা আক্তারকে। টানা ১৭ দিন অন্ধকারের ভেতর খাবার ও পানি ছাড়াই বেঁচে থাকার পর সুস্থভাবে ধ্বংসস্তূপ থেকে রেশমার বেরিয়ে আসার ঘটনা পৃথিবীর বুকে জন্ম দিয়েছিল আরেকটি অলৌকিক ঘটনার।
পোশাকশিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল বাংলাদেশে, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর অদূরে সাভারে তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কারখানা নিয়ে বহুতল ভবন রানা প্লাজা সেদিন ধসে পড়েছিল। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে সেদিন অসংখ্য পোশাকশ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, তাৎক্ষণিকভাবে অভিযানের মাধ্যমে জীবিতদেরও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। এরপর থেকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসছিল শুধুই লাশের মিছিল। ভবনটির নিচে চাপাপড়া শ্রমিকদের বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়ে তাদের স্বজনরা যখন শুধু প্রিয়জনের মৃতদেহটি পাওয়ার আশাতেই বুক বেঁধেছিলেন, তখনই ভেঙে পড়া ভবনটির নিচ থেকে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রেশমাকে।
এই ঘটনা শুধু যে দেশের মানুষকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিল তাই নয়, চমকে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। কারণ যে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৩৮ জন নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, সেই দুর্ঘটনার ১৭ দিন পর পর্যন্ত খাবার ও পানি ছাড়া ধসেপড়া ভবনের নিচ থেকে বেঁচে ফেরাটা সম্ভব নয় কিছুতেই, অন্তত আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান তো তাই বলে। তাই সেদিন রেশমা পেয়েছিলেন ‘অলৌকিক কন্যা’র আখ্যা।
আর সেই ‘অলৌকিক’ ঘটনার পর পালটে গেছে রেশমার জীবনও। এক দরিদ্র পোশাকশ্রমিকের জীবন থেকে রেশমা উঠে এসেছেন স্বচ্ছল মধ্যবিত্তদের কাতারে। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর একজন জীর্ণ, বিধ্বস্ত পোশাকশ্রমিক থেকে রেশমা জাতীয় নায়কের পদে আসীন হয়েছেন, উঠে এসেছেন সংবাদপত্রের প্রথম পাতার শিরোনামে।
তবে ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে ফেরা বাকি হাজারো শ্রমিকের মতোই সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার স্মৃতি আজো রেশমাকেও কাঁপিয়ে তোলে, নিদ্রাহীনতা আর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ব্যথার যন্ত্রণায় তিনিও এখনো ভুগছেন।
কিন্তু তাও তার জীবনেও এসেছে বেশকিছু পরিবর্তন, আর তা অবশ্যই ইতিবাচক। উত্তরবঙ্গে নিজ গ্রামে গিয়ে ছোট আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেমিককে বিয়ে করেছেন রেশমা। রাজধানীতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে নিজের নতুন কাজও দারুণ উপভোগ করছেন তিনি। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ‘অলৌকিক কন্যা’ এই কাজটি পেয়ে এখন আর সেই হাড়ভাঙা খাটুনির জীবনে নেই, বরং বেশ স্বাচ্ছন্দ্যকর জীবনযাপন করছেন।
আর কখনো পোশাক কারখানায় ফিরে যাবেন না উল্লেখ করে রেশমা বলেন, ‘আমার এখনকার কাজটা অনেক ভালো লাগে। গার্মেন্ট কারখানায় যে কাজ করতাম আমি, তার ঠিক উল্টো কাজ করি এখন। আমার এখনকার কাজ অনেক আরামের আর সম্মানের।’
সেই দুর্ঘটনাস্থল থেকে কয়েক মিটার দূরেই অবস্থিত নিজের বোনের বাসায় বসে রেশমা জানান, দুর্ঘটনাটি ঘটার মাত্র ২২ দিন আগেই রানা প্লাজায় অবস্থিত পাঁচটি পোশাক কারখানার একটি কাজে ঢুকেছিলেন তিনি। দৈনিক ১০ ঘণ্টা কাজের বিপরীতে তখন তার মূল বেতন ছিল মাসিক ৪ হাজার ৭০০ টাকা।
দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান ও পুনর্বাসনের জন্য তহবিল গঠনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি পশ্চিমা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো। ৪০ মিলিয়ন ডলারের বদলে মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে তারা। তবে সেখান থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ নেননি রেশমা।
তিনি বলেন, ‘শুধু প্রধানমন্ত্রী এবং কিছু বেসরকারি উৎস থেকে কিছু টাকা পেয়েছি আমি।’
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তারপর থেকে অনেকটাই ধার্মিক জীবনযাপন করছেন রেশমা। প্রাত্যহিক জীবনে নামাজ পড়ার সময় পোশাক খাতে কর্মরত মানুষ এবং তার নিহত সহকর্মীদের জন্য নিয়মিত প্রার্থনাও করেন জানিয়ে রেশমা বলেন, ‘আমি দোয়া করি, আমাদের পোশাক কারখানাগুলো নিরাপদ হয় এবং আর কাউকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে না হয়।’ সূত্র : এএফপি
পোশাকশিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল বাংলাদেশে, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর অদূরে সাভারে তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কারখানা নিয়ে বহুতল ভবন রানা প্লাজা সেদিন ধসে পড়েছিল। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে সেদিন অসংখ্য পোশাকশ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, তাৎক্ষণিকভাবে অভিযানের মাধ্যমে জীবিতদেরও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। এরপর থেকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসছিল শুধুই লাশের মিছিল। ভবনটির নিচে চাপাপড়া শ্রমিকদের বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়ে তাদের স্বজনরা যখন শুধু প্রিয়জনের মৃতদেহটি পাওয়ার আশাতেই বুক বেঁধেছিলেন, তখনই ভেঙে পড়া ভবনটির নিচ থেকে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রেশমাকে।
এই ঘটনা শুধু যে দেশের মানুষকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিল তাই নয়, চমকে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। কারণ যে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৩৮ জন নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, সেই দুর্ঘটনার ১৭ দিন পর পর্যন্ত খাবার ও পানি ছাড়া ধসেপড়া ভবনের নিচ থেকে বেঁচে ফেরাটা সম্ভব নয় কিছুতেই, অন্তত আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান তো তাই বলে। তাই সেদিন রেশমা পেয়েছিলেন ‘অলৌকিক কন্যা’র আখ্যা।
আর সেই ‘অলৌকিক’ ঘটনার পর পালটে গেছে রেশমার জীবনও। এক দরিদ্র পোশাকশ্রমিকের জীবন থেকে রেশমা উঠে এসেছেন স্বচ্ছল মধ্যবিত্তদের কাতারে। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর একজন জীর্ণ, বিধ্বস্ত পোশাকশ্রমিক থেকে রেশমা জাতীয় নায়কের পদে আসীন হয়েছেন, উঠে এসেছেন সংবাদপত্রের প্রথম পাতার শিরোনামে।
তবে ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে ফেরা বাকি হাজারো শ্রমিকের মতোই সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার স্মৃতি আজো রেশমাকেও কাঁপিয়ে তোলে, নিদ্রাহীনতা আর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ব্যথার যন্ত্রণায় তিনিও এখনো ভুগছেন।
কিন্তু তাও তার জীবনেও এসেছে বেশকিছু পরিবর্তন, আর তা অবশ্যই ইতিবাচক। উত্তরবঙ্গে নিজ গ্রামে গিয়ে ছোট আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেমিককে বিয়ে করেছেন রেশমা। রাজধানীতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে নিজের নতুন কাজও দারুণ উপভোগ করছেন তিনি। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ‘অলৌকিক কন্যা’ এই কাজটি পেয়ে এখন আর সেই হাড়ভাঙা খাটুনির জীবনে নেই, বরং বেশ স্বাচ্ছন্দ্যকর জীবনযাপন করছেন।
আর কখনো পোশাক কারখানায় ফিরে যাবেন না উল্লেখ করে রেশমা বলেন, ‘আমার এখনকার কাজটা অনেক ভালো লাগে। গার্মেন্ট কারখানায় যে কাজ করতাম আমি, তার ঠিক উল্টো কাজ করি এখন। আমার এখনকার কাজ অনেক আরামের আর সম্মানের।’
সেই দুর্ঘটনাস্থল থেকে কয়েক মিটার দূরেই অবস্থিত নিজের বোনের বাসায় বসে রেশমা জানান, দুর্ঘটনাটি ঘটার মাত্র ২২ দিন আগেই রানা প্লাজায় অবস্থিত পাঁচটি পোশাক কারখানার একটি কাজে ঢুকেছিলেন তিনি। দৈনিক ১০ ঘণ্টা কাজের বিপরীতে তখন তার মূল বেতন ছিল মাসিক ৪ হাজার ৭০০ টাকা।
দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান ও পুনর্বাসনের জন্য তহবিল গঠনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি পশ্চিমা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো। ৪০ মিলিয়ন ডলারের বদলে মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে তারা। তবে সেখান থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ নেননি রেশমা।
তিনি বলেন, ‘শুধু প্রধানমন্ত্রী এবং কিছু বেসরকারি উৎস থেকে কিছু টাকা পেয়েছি আমি।’
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তারপর থেকে অনেকটাই ধার্মিক জীবনযাপন করছেন রেশমা। প্রাত্যহিক জীবনে নামাজ পড়ার সময় পোশাক খাতে কর্মরত মানুষ এবং তার নিহত সহকর্মীদের জন্য নিয়মিত প্রার্থনাও করেন জানিয়ে রেশমা বলেন, ‘আমি দোয়া করি, আমাদের পোশাক কারখানাগুলো নিরাপদ হয় এবং আর কাউকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে না হয়।’ সূত্র : এএফপি