তীব্র গরমে এক ঘাটের জলে বাঘ-সিংহ
খবর বাংলা২৪ ডেক্স: চলমান আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের প্রভাব এখন আর শুধু বাস, ট্রেন বা শপিংমলেই সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন এই প্রভাব বিস্তার করছে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও, যার মধ্যে রয়েছে ঢাকা চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, শিশুমেলাসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলো। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী দর্শনার্থী হয় ঢাকা চিড়িয়াখানায়। চলুন দেখা যাক এই প্রচণ্ড গরমে চিড়িয়াখানার বর্তমান হালচাল।
চিড়িয়াখানার বাঘ আর সিংহকে যদি এক ঘাটে নামিয়ে দেয়া হতো তবে শিরোনামের মতই দাঁড়াতো ব্যাপারটা। তীব্র গরমে বাঘ-সিংহের এক ঘাটে জল খাওয়া ছাড়া কোন উপায় থোকতো না। চিড়িয়াখানায় পৌঁছে দেখা গেলো সব ধরনের প্রাণী একটু স্বস্তি পেতে যার যার খাঁচার ভেতর জলে নেমে গেছে। পশু-পাখিরা গরমে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এখানে। একটু প্রশান্তি পেতে ঘন ঘন গা ভেজাচ্ছে পানিতে। তবে পানির অবস্থা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। খাঁচার ভেতর আবদ্ধ এ পানি প্রাণীদের অতিব্যবহারে এঁটো হয়ে গেছে বহু আগেই। খোদ কর্তৃপক্ষই রোগব্যাধি হওয়ার আশংকা প্রকাশ করছে।
দাবদাহের প্রভাব পড়েছে লোকসমাগমেও। চিড়িয়াখানার ম্যানেজার জনাব শিপনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা এ চিড়িখানাটি এর আগে কখনোই এমন দর্শনার্থী খরায় পড়েনি। এখন চিড়িয়াখানার দর্শনার্থী মৌসুম চলছে। কিন্তু আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে গড়ে দৈনিক ৫শ’ এর মত দর্শনার্থী এখানে আসছেন, যেখানে ২০১২ সালের এসময়ে দর্শনার্থী আসতো ৩ থেকে ৫ হাজারেরমত।
তিনি আরও জানান, চিড়িয়াখানার গেটটি একবছরের জন্য ‘ডাক’ হয়েছে সাড়ে ৬ কোটি টাকা। প্রতিদিন ২লাখ টাকার ওপরে উপার্জন হওয়ার কথা থাকলেও দর্শনার্থী কম হওয়ায় এখন প্রতিদিন লোকসান গুণতে হচ্ছে লাখ টাকার ওপরে। বেশ ক্ষোভের সাথেই ম্যানেজার বলেন, ‘তীব্র গরমের কারণে দর্শনার্থী একেবারে নেই বললেই চলে। এই চিড়িয়াখানায় কর্মচারী রয়েছে ২২ জন, যাদের সংসার চলে এই চিড়িয়াখানা থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে যে দর্শনার্থী খরা চলছে তাতে কর্মচারীদের বেতনের ব্যাপারটিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’
চিড়িয়াখানার অন্য এক কর্মচারী জলিল হোসেনও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্যান্য বছরে এই সময়ে সবচেয়ে বেশী ব্যবসা হতো। কিন্তু এ বছর একদমই মন্দা চলছে। এভাবে চললে পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।’
এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তর এই চিড়িয়াখানাটিতে বর্তমানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দু’শরও বেশি প্রাণী, যার বেশিভাগই বিরলপ্রজাতির। তাই বরাবরই এখানে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। কিন্তু এবারের মৌসুমের চিত্রটি ছিল পুরো উল্টো। নেই তেমন দর্শনার্থীর ভীড়, যারা আসছেন তারাও রয়েছেন বাড়ি ফেরা নিয়ে ব্যস্ততায়। সবমিলে অনেকটা স্থবিরতা নেমেছে ঢাকা জাতীয় চিড়িয়াখানায়।
৭৫ হেক্টরের ওপর প্রতিষ্ঠিত এ চিড়িয়াখানাটির মূল উদ্দেশ্য প্রাণী সংরক্ষণ, প্রাণী কল্যাণ, গবেষণা, শিক্ষা ও বিনোদন হলেও ঠিকঠাক মত এর কোনটিই বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ দর্শনার্থীদের। রাজধানীর উত্তরা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছেন বেশ ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছেন কাওছার আলী। তিনি বাংলামেইলের কাছে তুলে ধরেন চিড়িয়াখানার নানা অসঙ্গতি।
তিনি বলেন, ‘এখানে আর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসার মত পরিবেশ নেই। একে তো গরম, তারওপর পশু-পাখিদের ঠিকমত গোসল করানো হয়না, এসমব মিলে দূর্গন্ধে হাটা যায়না। বাচ্চারা প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে পারেনা, শিশুদের জন্য তৈরী করা শিশুপার্কটিরও বেহাল দশা, বসার জন্য তৈরী করা বেঞ্চগুলোতেও ময়লার জন্য বসা যায় না। সবমিলে এই চিড়িয়াখানাটির আর দর্শনার্থীদের দর্শনের জন্য খুব একটা উপযোগী পরিবেশ নেই।’ এমনই নানা অভিযোগ দর্শনার্থীদের।