১০৫তম আসরেও চ্যাম্পিয়ন দিদার বলী
খবর বাংলা২৪ ডেক্স: স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলায় এবারো চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কক্সবাজারের রামু উপজেলার দিদার বলী। তিনি নারায়ণগঞ্জের হাবিব বলীকে পরাস্ত করে ১০৫তম আসরের বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে নিলেন। এবারসহ দিদার বলী শতবর্ষী এ বলীখেলায় ১১বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন।
এবার তৃতীয় হয়েছেন রাঙ্গুনিয়ার ইউসুফ বলী ও কুতুবদিয়ার সিকদার বলী চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। এবছর বলী খেলায় অংশ নেয়ার জন্য ১০৩জন প্রতিযোগী নাম নিবন্ধন করেছিলেন।
বিকেল ৩টার পর বলীখেলার উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। এসময় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম মনজুর আলম এবং বিশেষ অতিথি সিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম, সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক ও বিসিবির পরিচালক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও বাংলালিংক এর রিজিওনাল হেড মো. ফরহাদ হোসেন উপিস্থত ছিলেন।
টানা উত্তেজনা আর বৈশাখের প্রখর রোদ উপেক্ষা করে দর্শকদের তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে সরাসরি ফাইনাল রাউন্ডে খেলতে নেমে মাত্র তিরিশ সেকেন্ডেই নারায়ণগঞ্জের হাবীল বলীকে পরাস্ত করেন দিদার বলী। তিনি এ নিয়ে ১২বার মতো অংশ নিয়ে ১১বার চ্যাম্পিয়ন হলেন।
বিজয়ের পর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘যে আশা নিয়ে এখানে এসেছিলাম, সেই আশা পূর্ণ হয়েছে। ১২বার এই জব্বারের বলী খেলায় অংশ নিয়ে ১১ বার চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। জব্বারের বলীখেলায় চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখার জন্য আমি সারা বছরই ব্যায়াম করি। নিয়মিত ভালো খাবার খাই।’
এদিকে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার থেকে চলছে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর শত বছরের ঐতিহ্য এ প্রাণের মেলাকে ঘিরে লালদীঘির ময়দানকে ঘিরে প্রায় তিন কিলোমিটারব্যাপী বসেছে এই লোকজ মেলা।
২৪ এপ্রিল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা শুরু হলেও গত তিন-চার দিন আগে থেকেই দূরদূরান্ত থেকে দোকানিরা হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
বৈশাখের তীব্র তাপদাহ এড়াতে অনেকেই গতকাল মেলা ঘুরে গেছেন। তবে বাতাসের উল্কা হাওয়ার মধ্যেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মেলায় ভিড় করছেন হাজার হাজার উৎসব প্রিয় মানুষ।
সেই ১৯০৯ সাল থেকে আবদুল জব্বারের বলীখেলার সূচনা। তাই এ খেলা ও বৈশাখী মেলা চট্টগ্রামের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও অহঙ্কারে পরিণত হয়েছে বহু আগেই। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব হিসেবে পরিণত হয়েছে এ মেলা ও বলীখেলা। তারই ধারাবাহীকতায় ২৫ এপ্রিল ১২ বৈশাখ বৃহস্পতিবার বসে বলীখেলার ১০৫ তম আসর।
বৈশাখী মেলাকে ঘিরে লালদীঘি ময়দানে নাগরদোলা, সার্কাস ও বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। লালদীঘি ময়দান থেকে আন্দরকিলা, সিনেমা প্যালেস, কোতোয়ালী মোড় পর্যন্ত দোকানিরা বসে গেছেন পসরা নিয়ে। বিক্রি হচ্ছে হাতপাখা, শীতলপাটি, মাটির কলস, চুড়ি, ফিতা, রঙ্গিন সুতা, হাতের কাঁকন, নাকের নোলক, মাটির ব্যাংক, ঝাড়ু, খেলনা, ঢোল, বাঁশি, বাঁশ ও বেতের নানা তৈজসপত্র, কাঠের পুতুল, নকশীকাঁথা, প্লাস্টিক সামগ্রী।
এছাড়াও বিক্রি হচ্ছে মুড়ি মুড়কি, লাড্ডুসহ হরেক রকম উপাদেয় ও মুখরোচক খাবার পন্যও।
সারাবছর ধরে চট্টগ্রামের মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন এ মেলার জন্য। কারণ এতে পাওয়া যায় নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী আর ঘর সাজানোর সব উপকরণ।
তবে ঐতিহাসিক এ মেলাকে ঘিরে সুযোগসন্ধানী চক্র দোকানিদের নাজেহাল করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকারদলীয় ছাত্র ও যুব সংগঠনের লোকজন মেলায় জায়গা দখলে দেয়ার নামে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দোকানিদের কাছ থেকে কয়েক দফা টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ১০৩ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরীর বদরপাতি এলাকার আবদুল জব্বার সওদাগর আয়োজন করেছিলেন প্রীতি কুস্তী নামক এ বলীখেলার।
মূলত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ ও শারীরিকভাবে সক্ষম করে তুলতে ১৯০৯ সালে তিনি এ খেলার আয়োজন করেছিলেন।
তারপর থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে জব্বার মিয়ার বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা উপমহাদেশের বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম ধারক-বাহকে পরিণত হয়েছে।
দেশের আরো কিছু স্থানে এখন বলীখেলা অনুষ্ঠিত হলেও কালের পরিক্রমায় সেসব আয়োজন বন্ধ হয়ে গেছে, তবে কোনো কোনো এলাকায় ক্ষুদ্র পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।কিন্তু জব্বার মিয়ার বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা এখনো ধরে রেখেছে তার কীর্তিময় ইতিহাস।
মেলা পরিচালনা কমিটির সম্পাদক স্বপন মহাজন বলেন, ‘বলীখেলা ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হলেও ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত মেলা চলবে। প্রতিবছরের
ন্যায় ১০৫ তম আসরও সফল করে তুলতে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’