ধর্ষণের পর তরুণী হত্যা করাই পিচ্চি বাবুর নেশা

এপর্যন্ত ৫ তরুণীসহ ৭ জনকে হত্যা

download (2)খবর বাংলা২৪ ডেক্স:

তরুণীদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রেম। এরপর তরুণীদের ধর্ষণ করার পর হত্যা। না কোন বিদেশি গোয়েন্দা উপন্যাসের স্যাডিস্ট সিরিয়াল কিলারের কথা বলা হচ্ছে না। রসু খাঁর মতই আরেক জন ঠান্ডা মাথার খুনিকে রাজধানীর উত্তরখান থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যার ধর্ষণের পর তরুণীদের হত্যা করাই প্রধান নেশা। এ পর্যন্ত পাঁচ জন তরুণীকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে মোমিন ওরফে বাবু মণ্ডল ওরফে পিচ্চি বাবু নামে এই খুনি। নিজের মুখেই বলেছে, ‘একজনকে কয়েকবার ভোগ করার পর তার আর ভাল লাগত না। তাই মেরে ফেলতাম।’

যেভাবে গ্রেফতার :জানা গেছে, বগুরার শিবগঞ্জ উপজেলার মহব্বত নন্দীপুর গ্রামের ধানক্ষেত, আখক্ষেতে প্রায়ই তরুণীদের লাশ পড়ে থাকত। তরুণীদের হত্যার ধরণ দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। বুঝতে পারে এগুলো কোন সাধারণ হত্যাকান্ড নয়। পেছনে রয়েছে একজন ঠান্ডা মাথার খুনি। অনুসন্ধান চালাতে থাকে পুলিশ।

সর্বশেষ ঢাকা থেকে শিবগঞ্জে নেয়া কথিত স্ত্রী নিপা আকতারকে (২০)হত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় বাবু। নিপা বেঁচে গেলেও তার ভাগ্নে সুজন মিয়াকে (১৫) হত্যা করে বাবু। নিপাই ফাঁস করে দেয় পিচ্চি বাবুর লোমহর্ষক কাহিনী।

অবশেষে পুলিশ গত মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার উত্তরখান এলাকা থেকে বাবু ও তার বাসার বাবুর্চি পারুলকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে বগুরা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নেয়া হয়। পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে পিচ্চি বাবুকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় সে স্বীকার করে ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত সে ৫ জন তরুণীসহ ৭ জনকে খুন করেছে।

আগামীকাল পিচ্চি বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমাণ্ড চেয়ে আদালতে আবেদন জানাবে পুলিশ।

বগুরার পুলিশ সুপার জানান, শিবগঞ্জে প্রায় অজ্ঞাত তরুণীর লাশ ধানক্ষেত আখক্ষেত ও ভুট্টা ক্ষেত থেকে উদ্ধার হতো। এতেই আমাদের সন্দেহ হয়। ধারণা করছি পিচ্চি বাবু শুধু তার স্বীকার করা ৫ তরুণীকে নয়, আরও অনেক তরুণীকে খুন করেছে। নিখোঁজ অনেক তরুণীর আত্নীয়স্বজন পুলিশের কাছে আসছে। বাবুর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপকর্মে জড়িত আরও ৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

যেভাবে শিকার ধরত পিচ্চি বাবু

পিচ্চি বাবু শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়নের মহব্বত নন্দীপুর গ্রামের বাসিন্দা শামসুল আলমের ছেলে। পিচ্চি বাবু জানায়, মায়া নামে এক জনের সঙ্গে প্রেমে ব্যর্থ হয় তিনি। এরপর থেকে নারী বিদ্বেষী হয়ে পড়ে সে। এলাকায় তাকে বখাটে হিসেবে জানে। তাই পরিবারের সাথেও তার সম্পর্ক ভাল নয়।

২০০৪ সালের শেষ দিকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এলাকার রিক্তা নামে এক তরুণীর সঙ্গে সামাজিকভবে বিয়ে হলেও বাসর রাতে স্ত্রীকে ফেলে রেখে ঢাকায় পালিয়ে যায়। পিচ্চি বাবু জানায়, বড়লোক হওয়ার উত্স খুঁজতে থাকে সে। পরে সে জানতে পারে মাদক ও নারী ব্যবসা করলে দ্রুত বড় হওয়া যায়। শুরু করে সে মাদক, সোনা চোরাচালানী ও নারী ব্যবসা। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ভাড়া করে অসামাজিক কার্যকলাপের ব্যবসা শুরু করে সে। পাশাপাশি চলতে থাকে তার মাদক ব্যবসা। টাকা ও নারী পাগল পিচ্চি বাবু জড়িয়ে পড়ে চোরাচালানি সিন্ডিকেটের সঙ্গে। দৈনিক ২/৩ জন তরুণীর সঙ্গে পিচ্চি বাবু শারীরিক সম্পর্ক গড়ত। ওই তরুণীদের ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করে শিবগঞ্জে নিয়ে হত্যা করত।

এর আগে দেড় বছর আগে পল্টনে দেড় কেজি সোনাসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে পিচ্চি বাবু। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছাড়া পায় সে। মাদক ও সোনাসহ তিনদফা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে প্রতিবারে ১০ লাখ উেকাচ দিয়ে রক্ষা পায় বলে জানায়।

২০০৫ সালে প্রথম পিচ্চি বাবুর যাত্রাবাড়ি এলাকায় তরমুজ ব্যবসায়ী সামাদের সঙ্গে একটি বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। সামাদকে কৌশলে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গা উপজেলায় নিয়ে হত্যা করে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় পিচ্চি বাবু ও তার সহযোগিতরা।

২০১০ সালের জুলাইয়ে সোনিয়া (২০) নামের এক তরুণীকে ঢাকা থেকে শিবগঞ্জে এনে ধর্ষণ শেষে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে লাশ ধানক্ষেতে ফেলে রাখে। ২০১১ সালের অক্টোবরে লাকী আক্তারকে (১৮) ঢাকার এক আবাসিক হোটেল থেকে আনে শিবগঞ্জে। তাকেও আরো কয়েকজনসহ ধর্ষণ ও হত্যা শেষে মোকামতলা মেঘাখর্দ গামের ঈদগাহ মাঠের পাশে ভুট্টা ক্ষেতে ফেলে রাখে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে তানিয়াকে (২২) ঢাকার পল্টন মোড় থেকে শিবগঞ্জ এনে গণধর্ষণের পর হত্যা করে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে লিপিকে (২০) শিবগঞ্জ আনে ঢাকার মহাখালী থেকে। পরে তার কানের দুল, মোবাইর ফোনসহ সঙ্গে থাকা মালামাল লুট করে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ একটি হলুদ ক্ষেতে ফেলে রাখে। একই বছরের নভেম্বরে শাপলাকে (২০) ঢাকা থেকে শিবগঞ্জ এনে ধর্ষণের পর গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে।

পুলিশ জানান, সর্বশেষ গত ৫/৬ মাস আগে পিচ্চি বাবু ঢাকায় একটি এনজিওতে কর্মরত নিসা আক্তারকে বিয়ে করে।

গত ১৮ এপ্রিল দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার মিথ্যা খবর দিযে তার স্ত্রী নিপাকে শিবগঞ্জ আসতে বলে। তার কথামতো নিপা তার ভাগ্নে সুজনকে (১৬) সাথে নিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় বাসে এসে মহাস্থান নামে। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নিপা ও সুজনকে তার নিজের বাড়ি না নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি শিবগঞ্জের ময়দালহাটা ইউনিয়নের মহব্বত নন্দীপুর মাঠে নিয়ে যায়। ওই সময় বাড়ি গেলে গ্রামের লোকজন তাকে ধরে পুলিশে দেবে বলে ভয় দেখায়।

রাত ১১টার দিকে নিপার ভাগ্নে সুজনকে কৌশলে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে। এরপর ফিরে এসে নিপাকে ধর্ষণ করে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে নিপাকে রেখে পালিয়ে যায় পিচ্চি বাবু। এরপর সুজন হত্যার খবর জানাজানি হলে নিপা লাশ শনাক্ত করে।

সুজন হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ নিপার সন্ধান পায়। তার সহায়তায় পিচ্চি বাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত অপর চারজন হচ্ছে, বগুরা শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ইউপির সদস্য আইনুল হক, আব্দুল জলিল, সরোয়ার ও গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বুরুলিয়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী পারুল আকতার। গত বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারা সিরিয়াল কিলার পিচ্চি বাবু ৫ তরুণী ও দুই ব্যক্তিসহ ৭টি হত্যাকাণ্ডে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend