এরশাদের একমাত্র লক্ষ্য সরকারকে খুশি করা!
খবর বাংলা২৪ ডেক্স: কিছুদিন আগেও বেশ জোর গলায় সরকারের সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে নিজের প্রভাব সমুন্নত রাখতে ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক তাঁকে সরকারের সমালোচনা করতে হয়েছে।
কিন্তু মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডের পুনঃ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে এরশাদ বদলে গেছেন। সরকারকে চটালে পরিণতি ভালো হবে না—এমনটা হয়তো তিনি আঁচ করতে পারছেন। আর সে কারণেই তাঁর এখন একটাই লক্ষ্য, সরকারকে খুশি রাখা। জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্য এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা বলছেন, সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্যই এরশাদ মহাসচিব পদে রদবদল এনেছেন। এখন তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একটি পদ সৃষ্টির তোড়জোড় করছেন। এ পদের জন্য সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নাম।
জাতীয় পার্টিতে জিয়াউদ্দিন বাবলু ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সরকার ঘেঁষা অংশ বলে ব্যাপক প্রচার আছে। মূলত এ দুজনের নেতৃত্বেই জাতীয় পার্টির একটি অংশ নির্বাচনে যায়।
তবে এরশাদের মুখপাত্র ববি হাজ্জাজ বলেছেন, হাজারো গুজব তাঁরাও শুনছেন। মহাসচিব পদে রদবদলের খবর তাঁদের কাছে ছয় মাস ধরে ছিল।
এমন হাজারো গুজব ও আলোচনার মধ্যেই কাল রোববার গুলশানের স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টির যৌথ সভা। এতে অংশ নেবেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাংসদেরা। এ নিয়েও দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক সাংসদ ও এরশাদের ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডটি পুনঃ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় দলের চেয়ারম্যান চিন্তিত। তিনি এখন সরকারকে চটাতে চাচ্ছেন না। তবে আমরা মনে করি সরকারও এরশাদকে ছাড়তে চাইবে না। কেন্দ্রে সরকার যতটা শক্তিশালী, মাঠপর্যায়ে ঠিক ততটা নয়। জাতীয় পার্টির সমর্থন এখনো সরকারের প্রয়োজন রয়েছে।’
দলে দুই ভাগ—এরশাদের ভূমিকায় দলের অনেকেই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। সূত্রগুলো বলছে, এরশাদ এখন প্রায় প্রতিদিনই কাকরাইলের দলীয় কার্যালয়ে আসছেন। তাঁর আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে মামলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। এরশাদ দলের নেতা-কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তিনি খুব বিপাকে আছেন। এ অবস্থায় সরকারকে খুশি রাখা জরুরি।
দলের অন্যতম একজন মুখপাত্র প্রথম আলোকে বলেছেন, এরশাদ যে অবস্থায় পড়েছেন, সে অবস্থায় যে কারও অস্থির হওয়ার কথা। একদিকে তাঁর দলে মারাত্মক বিভক্তি, অন্যদিকে তাঁর মনে মামলার ভয়। সব মিলে তিনি শক্ত কোনো অবস্থান নিতে পারছেন না। যে দলের যত বেশি সীমাবদ্ধতা, সে দল তত বেশি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।
জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মহাসচিব নিয়োগ দিয়ে এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ওপরও তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
কিন্তু দলের নেতা-কর্মীদের সহানুভূতি আকর্ষণের চেষ্টা করলেও অনেকেই এরশাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ। এ ক্ষোভের কারণেই উপজেলা নির্বাচনে এবার জাতীয় পার্টির ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করেন মন্ত্রিসভার একজন সদস্য ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
কেন্দ্রীয় কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলেছেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব বলেছিলেন, যারা তাঁর নিষেধ অমান্য করে নির্বাচনে গিয়েছে, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু আদতে তিনি তাদেরকেই কাছে টানছেন। থানা কমিটির সদস্য ছিল, এমন অনেকে এবার সাংসদ হয়েছেন। তাঁদেরকে ডেকে তিনি যৌথসভা করছেন। এভাবে দল চলতে পারে না।’
জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদ তৈরি করা হবে, এ খবর রটে যাওয়ার পর থেকেই তত্পর হয়েছে দুটি পক্ষ। সূত্রগুলো বলছে, একটি পক্ষ এরই মধ্যে লিফলেট-পোস্টার দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ পদে’ জি এম কাদের, ববি হাজ্জাজ, আসিফ শাহরিয়ারকে দেখতে চান। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে এঁরা সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়ে সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন।
অন্যদিকে অপর একটি পক্ষ মনে করছে, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এরশাদকে রক্ষা করতে পারবেন। কিছু কর্মী-সমর্থক এঁদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।