ডালিম চাষের উজ্জল সম্ভাবনা
ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে: ডালিম আমাদের একটি সুপরিচিত ফল। ডালিম ফল চিনে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে এ ফলটি আামদের দেশীয় ফল নয়। এটি ভূ-মধ্য সাগরীয় অঞ্চলের গ্রীষ্ম কালিন সময়ের একটি ফল। অবশ্য আমাদের দেশের গ্রামগঞ্জে, শহরে সর্বত্রই এ ফল দেখা যায়। ডালিম দেখতে খুব সুন্দর। খোসাযুক্ত দানাদার ফল। এ ফলের দানায় খাবার উপযোগী। দানা চিবিয়ে রস খেয়ে ছুবরা ফেলে দেয়া হয়। ডালিমের পুষ্টিগুন অনেক বেশি। এতে ভিটামিন এ বি সি এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে প্রচুর পরিমানে। আমাদের দেশের প্রায় সব অঞ্চলের মাটিই বিশেষ করে শেরপুর জেলার পাহাড়ী এলাকার মাটি এ ফল চাষে বিশেষ উপযোগী। ঝিনাইগাতী উপজেলার পাহাড়ী এলাকাতে প্রচুর অনাবাদি জমি পড়ে আছে। এসব জমিতে আম জাম কাঁঠালসহ বিভিন্ন জাতের গাছগাছরা প্রাকৃতিক ভাবে জন্মে থাকে। তবে পরিকল্পিতভাবে ডালিম গাছ লাগানো হলে প্রচুর ডালিম ফল উৎপাদন করা সম্ভব। ডালিম ফলের চাহিদার তুলনায় আমদানী খুবই কম। কেন না এ ফলটি আজ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ভাবে আবাদ করা হয়নি শুধু নিত্যান্তই শখের বসে বাড়ীতে ২/১টি গাছ লাগানো হয়। তাতেই প্রচুর ফল ধরে। যদি আধুনিক পদ্ধতি অনুসরন করে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হলে তাতে প্রচুর মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। ডালিম গাছ মধ্য মেয়াদী গাছ। এ গাছ রোপনের ২/৩ বছর পর গাছে ফল আসে। গাছের আকার খুব বড় নয়। গাছে গঠন সরু ও ডালাপাল যুক্ত। পাতা দেখতে অনেকটা মেহেদী পাতারমত। খুব বেশি জায়গা দখল করে না। ফল আসার আগে গাছে লাল রঙ্গের ফুল ফোটে। তখন গাছটি খুব সুন্দর দেখা যায়। পরে স্ত্রী জাতীয় ফুল থেকে ফল ধরে। ডালিম গাছের বংশ বিস্তার ফল থেকে করা হয়। ডালিম ফল জুলাই আগষ্ট মাসের মধ্যেই পাকে। ফলের দানাকে বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। মার্চ এপ্রিল মাসে বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের আগে ভালো করে মাটি আলগা করে ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। মাটির সাথে গোবর বা পচা আবর্জনা মিশিয়ে বীজতলা তৈরী করে বীজ ছিটিয়ে দিয়ে হালকা করে উপরে মাটির আবরন দিতে হবে। মাটির হাঁড়ি, টব বা ড্রামের মধ্যেও বীজতলা তৈরী করা যায়। ডালিমের বীজ থেকে অঙ্কুর উদগমনে সময় লাগে ৭/১৫ দিন। বীজতলায় চারা যখন ২ ফুট বড় হবে তখন চারা নির্দিষ্ট গর্তে লাগাতে হয়। ৬০ ৬০ ৬০ সে.মি আকারে ৮/১০ মিটার দুরত্বে গর্ত করে ১০ কেজি গোবর বা আবর্জনা পচা কেজি খৈল ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম টিএসপি ৩০০ গ্রাম এমপিও ৩ কেজি ছাই মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে ১০/১৫ পর চারা লাগাতে হয়। চারা লাগানোর ২ থেকে আড়াই বছর পর থেকে ফল ধরা শুরু করে। ফল পাকতে সময় লাগে আরো ৩/৪ মাস। ডালিম গাছের তেমন কোন পরিচর্যা করতে হয় না। তবে ছাগল গরু যাতে গাছ না ক্ষেতে পারে তার জন্য বেড়া দেয়া প্রয়োজন। গাছ হেলে গেলে খুঁটি দিতে হবে। ফল উঠানোর পর পর আবার সার প্রয়োগ করতে হবে। পোকার আক্রমন দেখা দিলে কীটনাশক দিতে হবে। এভাবে ডালিম গাছ লাগিয়ে পরিচর্যা করতে পারলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে বাড়তী আয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব। তবে বাণিজ্যিক ভাবে ডালিম চাষ করতে হলে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে সঠিক পরামর্শ নিয়ে কাজ করলে লাভবান হওয়া সম্ভব।