সাবেক পাক সেনা কর্মকর্তার ঔদ্ধত্য : বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ‘ভাঁওতাবাজি’

সাবেক পাক সেনা কর্মকর্তার ঔদ্ধত্য : বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ‘ভাঁওতাবাজি’
খবর বাংলা ডেক্স: বাংলাদেশে চলমান যুদ্ধপরাধীদের বিচারকে ‘ভাঁওতাবাজি’ বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা। তিনি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক বাহিনীর হাতে হত্যা এবং ধর্ষণসহ নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ‘বাঙালি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার রাজনৈতিক সংঘাত’ বলেও দাবি করেছেন।
 কর্নেল (অব.) এম হামিদ নামের ওই সেনা কর্মকর্তা ‘সেইম ট্রায়ালস ইন বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশে ভাঁওতাবাজির বিচার) শীর্ষক একটি নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধটি গতকাল শনিবার পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
 ওই নিবন্ধে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে বেশ কিছু আপত্তিকর, কটূ ও গর্হিত মন্তব্য করেছেন।
 বর্তমানে ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে কর্মরত হামিদ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত নৃশংসতম গণহত্যাকে ‘অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব’ বলে অভিহিত করেছেন।
হামিদের দাবি, একাত্তরে নৃশংসতা এবং ওই ঘটনার বিচার নিয়ে কথা বলার জন্য জামায়াতে ইসলামী, বিহারি, বিএনপি ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করে আওয়ামী লীগ। এ জন্য তাদের বিচারের কথাও বলছে দলটি। কিন্তু সে সময় যেসব বাঙালি পাকিস্তান ভাগের বিরোধিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লোকজন নৃশংসতা চালিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ওই পাকিস্তানি সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
 তিনি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধকে একটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন. ‘ভারতের মদদে ওই আন্দোলন হয়েছিল।’ আওয়ামী লীগকে বিচ্ছিন্নতাবাদী উল্লেখ করে ওই পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা দাবি করেন, ভারতের হস্তক্ষেপে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে।
 তিনি বলেন, ‘ভারত চায় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে সবসময় উত্তেজনা বজায় থাকুক।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো ছিল। কিন্তু আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নয়নে আন্তরিক নয়।
 আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করায় তিনি বাংলাদেশের বিরোধী দল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গঠন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
 তিনি তার নিবন্ধে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক বাহিনীর ভূমিকার সাফাই গেয়ে বলেন, ‘তারা কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন করেনি এবং তাদের হাতে কোনো নিরীহ মানুষ নিহত যায়নি।’ ১৯৭১ সালে হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন হামিদ। তার দাবি, পাকিস্তান ভাগের বিরোধিতাকারী বাঙালিদের সমর্থন পেতে আওয়ামী লীগের কর্মীরা অন্ধভাবে মানুষ মেরেছেন, নির্যাতন করেছেন।
আর পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে। পরে তারা ‘ভারতের সৃষ্টি আওয়ামী লীগের বিচ্ছিন্নতাবাদী’দের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে।
তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, ভারতের প্ররোচনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাক বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ণ করতেই তারা পাক সেনা কর্মকর্তাদের বিচার করতে চেয়েছিল। যুদ্ধ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে নিশ্চুপ ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend