ব্যান্ডসংগীতের ইতিহাসে কালজয়ী ৫টি গান ও গীতিকারেরা
খবর বাংলা২৪ ডেক্সঃ বাংলা ব্যান্ড সংগীতের বিশাল ভান্ডারে রয়েছে অগণিত জনপ্রিয় গান। তার কোনোটা জনপ্রিয় হয়েছে, সময়ের পরিক্রমায় জনপ্রিয়তায় ভাটাও পড়েছে। তবে কিছু গান রয়েছে তার আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছে বছরের পর বছর। সময়কে অতিক্রম করে শ্রোতাপ্রিয় হয়ে থাকা এসব গানের পেছনে অন্যান্য অংশের পাশাপাশি গানের কথার রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। চলুন জেনে আসি এরকম পাঁচটি গান সমন্ধে।
শ্রাবণের মেঘগুলো–আশরাফ বাবু:
মফস্বল কিংবা শহরে ব্যান্ড সংগীতের কনসার্ট হবে অথচ ‘শ্রাবণের মেঘগুলো’ গানটা কোনো ব্যান্ড করবেনা, তা অধিকাংশ সময়ই হয় না। ১৯৯০ সালে ডিফরেন্ট টাচ ব্যান্ডের সেলফ টাইটেলড প্রথম এ্যালবামে স্থান পায় গীতিকার আশরাফ বাবুর লেখা এ গানটি। সহজ-প্রাঞ্জল কথার এ গানটির সাথে শ্রোতারা খুব সহজেই একাত্ম হয়ে যায়। প্রকাশ পাবার পর থেকেই এ গানটি এতো জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, এটি ডিফরেন্ট টাচ-এর সিগনেচার গানে পরিণত হয়। উঠতি ব্যান্ড যারা অন্য ব্যান্ডের গান কভার করে থাকে, তাদের পছন্দের শীর্ষে এখনো রয়েছে এ গানটি। তার জন্য অবশ্য শ্রোতাদের গ্রহণযোগ্যতাটাই মূল কারণ।
গানটি নিয়ে ডিফরেন্ট টাচ-এর প্রধান মেজবা শোনালেন এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার কথা। ১৯৯১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এক কনসার্টে অংশ নেয় ডিফরেন্ট টাচ। বৃষ্টির মুখরতাকে উপজীব্য করে রচিত ‘শ্রাবণের মেঘগুলো’ গানটি শুরুর কয়েক মূহুর্ত পরই সত্যি সত্যি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। খোলা জায়গা হবার কারণে সেদিনের মতো কনসার্ট বন্ধ হয়ে গেল। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো পরের বছর একই জায়গায় আরেকটি কনসার্টে যখনই ডিফরেন্ট টাচ ‘শ্রাবণের মেঘগুলো’ গাওয়া শুরু করলো, তখন আবারও বৃষ্টি শুরু হলো। তাহলে কি এই গানটির সাথে শুধু মানুষ নয়, প্রকৃতিও মেতেছিল?
মেলায় যাই রে– মাকসুদ:
পহেলা বৈশাখের উদযাপন সম্পূর্ণ হয়না কোন গানটি ছাড়া? এক কথায় সবাই জবাব দেবে মাকসুদের লেখা ও ফিডব্যাক ব্যান্ডের জন্য তারই গাওয়া ‘মেলায় যাই রে’ গানটির কথা। অনবদ্য কথার সাথে সাথে গানটিকে অন্যরকম মাধুর্য দিয়েছে বাংলাদেশের প্রথম রিদম প্রোগ্রামার পিয়ারু খানের ভিন্ন স্বাদের রিদম প্রোগ্রামিং। গত বাংলা শতাব্দীর শেষপ্রান্তে নববর্ষ উপলক্ষে প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই গানটি তুমুল সাড়া ফেলে। এরপর থেকে গানটির জনপ্রিয়তা যেন প্রতিবছর বেড়েই চলছে। বাংলা নববর্ষের উদযাপনের সাথে গানটি একেবারে মিলেমিশে একাকার। নববর্ষ উদযাপনের প্রতিটি আয়োজনে এ গানটি অন্যতম একটি অনুসঙ্গ হিসেবেই জায়গা করে নিয়েছে।
কষ্ট পেতে ভালবাসি– লতিফুল ইসলাম শিবলী:
আইয়ুব বাচ্চুর একক এ্যালবাম ‘কষ্ট’ এর শিরোনাম গানটি গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা। গানটি ‘কষ্ট’ এ্যালবামের জন্য লতিফুল ইসলাম শিবলী আর দশটা গানের মতোই লিখেছিলেন, তবে বাংলা গানের একটা দীর্ঘ যুগ ধরে প্রেমের গানে যে ধরণের গতানুগতিকতা চলছিল, তিনি এ গানের বেলায় একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টাকে দেখেন। প্রথা ভেঙে গানের কথায় এ ব্যতিক্রম ভাবনা সংগীত সমালোচক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ভালবেসে সুখী হওয়ার অনুভূতির কামনায় যখন ভুরি ভুরি গান হচ্ছিল, তখন বিপরীত ভঙ্গিতে বলা ‘কষ্ট পেতে ভালবাসি’ একটা নতুন আবেদন সৃষ্টি করে। বলতে গেলে এ গানের মাধ্যমে আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ড সংগীতের শ্রোতাদেরকে ছাপিয়ে সর্বমহলের কাছে পৌঁছে যান। ১৯৯৫ সালে গানটি প্রকাশিত হবার পর দীর্ঘ চার বছর ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকে, যার রেশ ধরে গানটি কালজয়ী একটি গান হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছে।
সরলতার প্রতিমা– তরুন:
১৯৯৮ সালে প্রকাশ পাওয়া ব্যান্ড মিক্সড এ্যালবাম ‘মেয়ে’তে খালিদের গাওয়া গান ‘সরলতার প্রতিমা’। গানটির গীতিকার তরুন তার কল্পনার প্রিয়তমার প্রতি ভালবাসা এবং কষ্টের অনুভূতি নিখুতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই গানে। তাই গানটি শ্রোতাদেরকেও যেন রোমান্টিকতার এক কাল্পনিক জগতে নিয়ে যায় মূহুর্তেই। শুরু থেকেই গানটি শুধুমাত্র ব্যান্ড সংগীতের শ্রোতাদের কাছে নয়, বরং সকল বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে অন্যরকম জনপ্রিয়তা লাভ করে যা এখনো বিদ্যমান। ভীষণ মেলোডিয়াস এ গানটি ব্যান্ড সংগীত সমন্ধে অনেকের ধারণা পাল্টে দেয়। কথা-সুরের অপূর্ব সমন্বয় ‘সরলতার প্রতিমা’কে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের অন্যতম জনপ্রিয় গানে পরিণত করেছে।
মা (সবাই বলে ঐ আকাশে)– প্রিন্স মাহমুদ:
১৯৯৯ সালে প্রকাশিত প্রিন্স মাহমুদের সুরে বিভিন্ন ব্যান্ডের গায়কদের নিয়ে মিক্সড এ্যালবাম ‘এখনও দু’চোখে বন্যা’র অন্যতম জনপ্রিয় গান জেমসের গাওয়া ‘মা’।
গানটির কথাও লিখেছিলেন প্রিন্স মাহমুদ। মাকে নিয়ে গাওয়া এই গানটি জেমসকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে যায়। গীতিকার প্রিন্স মাহমুদ এবং গায়ক জেমস দু’জনেই তখন থেকেই ছিলেন মাতৃহারা। তাই হয়তো প্রিন্স মাহমুদের লেখায় ও জেমসের গায়কীতে মায়ের শূণ্যতায় সন্তানের যে আবেগ, তা যথাযতভাবে ফুটে উঠেছিল। ব্যান্ড সংগীতের নাম শুনলে যারা অনেকটা নাক সিটকানো ভাব করতেন, এমন অনেক মানুষও এই গানটির মনযোগী শ্রোতা। মায়ের প্রতি সন্তানের অনুভূতি প্রকাশক কালজয়ী এই গানটি এখনো পূর্ণ আবেদন নিয়ে মানুষের মন দখল করে আছে।