প্রতারণাই তাদের পেশা: চট্টগ্রামে পুলিশ কনস্টেবলসহ আটক ৩
খবর বাংলা২৪ ডেক্স: চট্টগ্রাম নগর পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের কনস্টেবল মো.খলিলুর রহমান (৩০)।
চাকুরির পাশাপাশি তার আরেক কাজ মানুষকে বিভিন্ন কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে জিম্মি করে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়া। সম্প্রতি নিজেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক পরিচয় দিয়ে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে জিম্মি করে হাতিয়ে নেন দুই লক্ষ টাকা।
ওই মামলায় রোববার রাতে কনস্টেবল খলিলুর রহমানসহ তিনজনকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রকাশ্যে কোন কথা বলতে রাজি হচ্ছেনা।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কুসুম দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এ মুহুর্তে কথা বলতে চাইনা। আমি পুরোপুরি বিষয়টি জানিনা।
এরপর নগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলেও তারা কিছু বলতে রাজি হননি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল বুধবার রাত ১০টার দিকে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ওমর হান্নান বিআরটিসি ফলমন্ডিতে তার বন্ধুর আড়ত থেকে বের হয়ে একটি সিএনজি অটোরিক্সা ভাড়া করেন খুলশীতে নিজ বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সিএনজি অটোরিক্সাটি টাইগারপাস হয়ে মামা-ভাগিনা মাজারের সামনে এলে পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেল অটোরিক্সাকে ধাক্কা দেয়। অটোরিক্সাটি থেমে যায়। এসময় মোটর সাইকেল চালক সিএনজি অটোরিক্সা চালককে গালাগাল দিতে থাকে।
অটোরিক্সা আরোহী ওমর হান্নান ছিনতাইকারির কবলে পড়েছেন ভেবে আগেভাগেই তার মোবাইল ও হাতের ঘড়ি খুলে মোটরসাইকেল আরোহীকে দিতে যান। মোটার সাইকেলে থাকা দু’জন সেগুলো না নিয়ে ওমর হান্নানকে জেরা শুরু করেন।
জেরার ফাঁকে একজন জানান, তার নাম উত্তম। তিনি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক। সিএনজি অটোরিক্সা তল্লাশি করা হবে। এই বলে একজন অটোরিক্সায় উঠে বসলেন। মানিব্যাগ দেখতে চাইলে হান্নান বের করে দেন। মানিব্যাগে ৫-৬টা এটিএম কার্ড পাওয়া যায়। এবার ঐ ব্যক্তি সরাসরি হান্নানকে জেরা করেন। আপনি বিআরটিসি ফলমন্ডি থেকে মদের বোতল নিয়ে আসছেন, সেটা কই? হান্নান প্রতিবাদ করেন। বলেন, আমি জীবনে কখনো মদ খাইনি। আমি কেন মদের বোতল আনতে যাবো?’
ওই ব্যক্তি হান্নানের কপালে রিভলবার ঠেকান। বলেন, মদের বোতল আপনি এনেছেন, তাই না?’ প্রাণভয়ে স্বীকার করেন হান্নান। কোথ্া থেকে কত দামে এনেছেন, সে সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানান তাকে।
এরপর মাদকের মামলা দেবার ভয় দেখিয়ে ওমর হান্নানকে নিয়ে যাওয়া হয় আগ্রাবাদ লাকি প্লাজার সামনে। হান্নানকে পাঠানো হয় ইস্টার্ন ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এটিএম বুথে। দু’টি বুথ থেকে এক লক্ষ করে মোট দু’লক্ষ টাকা আনেন হান্নান।
এরপর হান্নানকে নগরীর অলংকার মোড়ে নামিয়ে দেয়া হয়। হান্নান অলংকার মোড় থেকে তার ছোট ভাইকে ফোন করেন। সেখান থেকে মোটর সাইকেলে ছোট ভাই তাকে বাসায় নিয়ে আসেন।
এ ঘটনার পরদিন ওমর হান্নান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে গিয়ে বুঝতে পারেন, উত্তম নামে একজন পরিদর্শক থাকলেও তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তিনি আসলে প্রতারণার শিকার হয়েছে।
এ ঘটনায় নগরীর খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ওমর হান্নান। পাশাপাশি তিনি নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছেও অভিযোগ করেন। পুলিশ তদন্ত চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে কনস্টেবল খলিলুর রহমানের সম্পৃক্ততার তথ্য পান।
এরপর কনস্টেবল খলিলুর রহমানসহ তিনজনকে আটক করা হয়। আটক হওয়া বাকি দু’জন হল, খলিলুরের সহযোগী জাহাঙ্গীর আলম (৩২) ও মো.আরমান (২২)।
আটক কনস্টেবল খলিলুর ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার উজিরপাড়া এলাকার মৃত লাল মিয়ার ছেলে বলে জানা গেছে। তার কনস্টেবল নম্বর ১৬৬০।