দুদকের মামলায় মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন
খবর বাংলা২৪ ডেক্স: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নোটিশের জবাব না দেয়াসংক্রান্ত মামলায় দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার বিশেষ জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায় এ চার্জ গঠনের নির্দেশ দেন। মামলার বিচারিক শুনানির জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৮ মে। উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রিটের নিষ্পত্তি ছাড়াই আইন লঙ্ঘন করে দুদকের দেয়া নোটিশের বিষয়ে এই চার্জ গঠন করা হয়েছে বলে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল দুদকের দায়ের করা এই মামলার চার্জ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারণ করে আদালতে।
আদালতের শুনানিতে মাহমুদুর রহমানের পে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম শাহজাহান, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ। দুদকের পে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মোশররফ হোসেন কাজল। জবাবে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, মাহমুদুর রহমানকে হয়রানি করতে বেআইনিভাবে দুদক একটি নোটিশ জারি করে। এই নোটিশটি আলম নামে এক ব্যক্তি গ্রহণ করেছে বলে দুদকের পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপে আলম নামে মাহমুদুর রহমানের বাসায় কোনো আত্মীয় কিংবা কোনো স্টাফ নেই। হয়রানিমূলক এই নোটিশ সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে অবহিত হয়ে নোটিশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন মাহমুদুর রহমান। উচ্চ আদালত দুদকের ওই নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেন। পরে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে দুদক এই স্টে অর্ডার ভেকান্ট করান। উচ্চ আদালতে মাহমুদুর রহমানের রিটটি আইনি প্রক্রিয়ায় এগুচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় এই আদালতে চার্জ গঠন সাব জুডিস মেটার। এই যুক্তি তুলে ধরে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী উচ্চ আদালতে রিটের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগেই চার্জ গঠন না করার জন্য আদালতের প্রতি অনুরোধ জানান।
অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতকে জানান, দুদকের এই মামলায় মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের কোনো সুযোগ নেই। বরং দুদক বেআইনি নোটিশ দিয়ে মাহমুদুর রহমানের সাথে প্রতারণা করেছে। ২০০৪ সালের দুদক আইন অনুযায়ী ২৬ এর-২ ধারার কথা উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমানকে সম্পত্তির হিসাব দিতে নোটিশ দেয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। চার্জ গঠনের পর দুদকের এই মামলায় বিচার শুরুর বিষয়টি মাহমুদুর রহমানকে অবহিত করেন আদালত। এ সময় মাহমুদুর রহমানের কোনো বক্তব্য আছে কি না জানতে চান বিচারক।
জবাবে মাহমুদুর রহমান দুদক ও সংবিধানের আইনের বিভিন্ন ধারা তুলে ধরে আদালতকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলাটি সরকার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে দায়ের করেছে। আমাকে শায়েস্তা করতে এ পর্যন্ত ৭০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতের বদান্যতায় আমাকে রিমান্ডের নামে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাকে কথা বলার কোনো সুযোগ না দিয়ে চার্জ গঠন হয়ে গেলে এই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে আমার মতো বন্দী, অসহায় আমজনতা কী করতে পারতাম?
পরে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী ও আমার দেশ-এর সাংবাদিকেরা। মাহমুদুর রহমানের আইনজীবীরা জানান, আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারের নির্দেশে আদালত চার্জ গঠন করেছে। এর বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান, তাজুল ইসলাম, মেসবাহ উদ্দিন, সুলতান, আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস কাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, মাহাবুবুর রহমান প্রমুখ।
আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, আদালতের নির্দেশনা থাকলেও মাহমুদুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক হুমকি দিয়েছেন এবং মাহমুদুর রহমানকে হাসপাতালে ভর্তি না করিয়েই প্রতি এক দিন পরপর কাশিমপুর কারাগার থেকে হাসপাতালে এসে ফিজিও থেরাপিসহ বিভিন্ন চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন। মাহমুদুর রহমানকে তিলে তিলে শেষ করতেই এ পদপে নেয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।