রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি নিয়েও প্রতারকদের প্রতারনা!
গত বছর ২৪ এপ্রিল সাভারে ধসে পড়া রানাপ্লাজা নিয়েও প্রতারকরা প্রতারণা শুরু করেছে। ওই ট্র্যাজেডিতে নিখোঁজ সাবিনা আসলে এখনো নিখোঁজই রয়েছেন। তার পরিবার আসলে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর আগে দৈনিক ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভবন ধসের একবছর দুইদিন পর নিখোঁজ সাবিনা জীবিত আছে।
চৌগাছা থানার এএসআই আব্দুল কুদ্দুস হাওলাদারের বরাত দিয়ে পরবর্তী প্রতিবেদনে পত্রিকাটি জানায়, গত শনিবার রাতে কর্নেল মাসুদ হাসান পরিচয় দিয়ে জনৈক ব্যক্তি রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির শিকার সাবিনা বেঁচে আছেন এবং সিএমএইচে চিকিত্সাধীন আছেন বলে জানান। এজন্য সাবিনার পরিবারকে তার সাথে যোগাযোগ করে দেয়ার জন্য বলেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে তাকে দায়িত্ব দিলে তিনি চৌগাছা উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের গুয়াতলী গ্রামের কৃষক সাবিনার পিতা মঈনউদ্দীন ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। রোববার সকালে সাবিনার পরিবার চৌগাছা থানায় আসলে তিনি ওই ব্যক্তির সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে দেন। প্রতারক চক্রটি দ্রুত ঢাকায় এসে দেখা করতে বলে। যাওয়ার সময় ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসনের প্রত্যয়নপত্র সাথে নিয়ে যেতে বলে।
প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, ওই দিনই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুষমা সুলতানা তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন। রাতেই তারা ঢাকায় রওনা হন। সোমবার ঢাকায় পৌঁছানোর পর থেকেই প্রতারক চক্রের ব্যবহৃত নম্বর দুইটিই (০১৮১১-২৫৫৪৩২ ও ০১৯৫৫-৭৬৯৯১৮) বন্ধ পাওয়া যায়। গতকাল সোমবার দিনভর চেষ্টার পর বিকাল ৪টায় একজন আত্মীয়ের মাধ্যমে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যেয়ে সাবিনার পরিবার তার সন্ধান পেতে ব্যর্থ হন। সেনা সদস্য কর্পোরাল রুহুল আমীন পরিচয়দানকারী ওই আত্মীয় জানান, মেয়েকে নতুন করে ফিরে পাবার আশায় বুক বেঁধে থাকা সাবিনার বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা কাল সারাদিন শুধু চোখের পানিই ফেলেছেন। তিনি জানান, সোমবার রাতেই তারা যশোরে রওনা হবেন।
চৌগাছা থানার এএসআই আব্দুল কুদ্দুস হাওলাদার আরো জানান, পুলিশের ওপর ভর করে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা তিনি তার চাকরি জীবনে দেখেননি।
এর আগে সোমবার দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর অনেকের সাথে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় সাভার ক্যান্টনমেন্টের একটি দল। ৪৫০ জন সদস্যের দলটিতে নেতৃত্বে ছিলেন কর্নেল মারুফ হাসান। দুর্ঘটনার ৪৮ ঘন্টা পর ৩য় তলার একটি বাথরুমে অচেতন অবস্থায় পরিচয়হীন সাবিনাকে পাওয়া যায়। ফেটে যাওয়া মাথা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেতলানো অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। সাভার সিএমএইচে নেয়ার পর চিকিত্সকরা বুঝতে পারেন মেয়েটি জীবিত আছে। ১৫ দিন সাভার সিএমএইচে রাখার পর তাকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ১৩ দিন পর সেখান থেকে পাঠানো হয় পঙ্গু হাসপাতালে। দু’মাস হলো পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয় মিরপুরের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। এখানে পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর দেখা গেছে তার বাম কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। মাথাও ক্ষতিগ্রস্ত। এ সময় কিডনি পরিবর্তনের জন্য ‘ডোনার’ আহ্বান করে পত্রিকাতে বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়। আমেরিকা প্রবাসী এক বাঙালি এবং শেরপুরের এক ব্যক্তি কিডনিদাতা হবার আগ্রহ ব্যক্ত করে সিএমএইচে যোগাযোগ করেন। এ প্রেক্ষিতে গত রোববার বেলা ১২টার দিকে তাকে সিএমএইচ থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গতরাতেই সেখানে তার কিডনি প্রতিস্থাপন এবং ব্রেনের সিটিস্ক্যান করার কথা।
ওই প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, রানা প্লাজা ধসের পর গ্রাম থেকে সাভারে ছুটে যান সাবিনার স্বজনেরা। তারা সাভার থেকে ঢাকার প্রতিটি প্রান্তে খুঁজে ফেরেন সাবিনাকে। কিন্তু কোনো সন্ধান না পেয়ে ফিরে আসেন গ্রামে। দ্বিতীয় দফায় আবারও সাভার আর ঢাকায় ছোটাছুটি করে রণে ভঙ্গ দেন। তবে ডিএনএ পরীক্ষার কথা জেনে রেখে আসেন রক্তের নমুনা। দুর্ঘটনার ৫-৬ মাস পর ডিএনএ পরীক্ষায় সাবিনার পরিচয় সনাক্ত হয়। কিন্তু চিকিত্সার স্বার্থে পরিবারের কাছে বিষয়টি গোপন রেখে চেষ্টা চালানো হয় সাবিনাকে সুস্থ করে তোলার। প্রায় একবছর ধরে সংজ্ঞাহীন সাবিনার জ্ঞান ফিরে আসে ১৫ দিন আগে। আধো আধোভাবে সাবিনা নিজেও তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। এ সময় সিএমএইচ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানানো হলে সেখান থেকে সাবিনাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পরামর্শ দেয়া হয়।
সিএমএইচ থেকে গত শনিবার রাতে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে টেলিফোনে সাবিনার পরিবারের সন্ধান করতে বলা হয়। রোববার সকালে পুলিশ চৌগাছা থানায় সাবিনার বাবা-চাচাকে নিয়ে এসে ঢাকায় যোগাযোগ করিয়ে দেয়।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক