শিশুর ডায়রিয়া হলে
সারাদেশে এখন প্রচণ্ড গরম। এ সময় নবজাতক ও শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়রিয়া একটি পানি বা খাদ্যবাহিত রোগ। ডায়রিয়ার রোগজীবাণু খাদ্য বা পানির মাধ্যমে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। শিশুর দিনে দু-তিন বার পাতলা পাখায়ানা বা সবুজ পায়খানা হলে বা মলের সঙ্গে মিউকাস থাকলে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান, ওষুধ খাওয়ান। ভাইসরাজনিত ডায়রিয়ায় সাধারণত কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। শিশু দুই-তিন দিনের মধ্যে ক্রমান্বয়ে ভালো হতে থাকে। ডায়ারিয়ার জটিলতা হল দেহে পানিশূন্যতা। এর ফলে শিশু দুর্বল হয়ে পড়ে, অস্থিরতা দেখা দেয়, প্রসয় এমনকি শিশু অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন শিশুর পানিশূন্যতা হয়েছে
* অস্থির ভাব,* খিটখিটে মেজাজ বা নিস্তেজ হয়ে যাওয়া,* চোখ ভেতরে ঢুকে যাওয়া,
* তৃষ্ণার্ত ভাব বা একেবারেই খেতে না পারা,* চামড়া ঢিলে হয়ে যাওয়া। এসব লক্ষণ থাকলে শিশুকে হাসপাতালে নিতে হবে। না হলে বাড়িতেই শিশুর চিকিৎসা করা সম্ভব।
বাড়িতে কী করবেন
পানিশূন্যতা রোধ করার জন্য খাবার স্যালাইন ও অন্যান্য তরল খাবার শিশুকে বারবার দিন। পানি, ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, ডাবের পানি, টক দই, ঘোল, ফলের রস ও লবণ গুড়ের শরবত খেতে দিতে হবে। অনেকে মনে করেন স্যালাইন খাওয়ালেই ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এ ধারণা সত্য নয়। শরীর থেকে যে পানি ও লবণ বের হয়ে যায় তা স্যালাইন পূরণ করে মাত্র, সঙ্গে অবশ্যই স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে।
শিশুর বয়স ছয় মাসের কম হলে তাকে বারবার মায়ের দুধ খেতে দিন। এ ক্ষেত্রেও স্যালাইন অবশ্যই দিতে হবে এবং স্যালাইন ধীরে ধীরে খাওয়াতে হবে। শিশুর বয়স ছয় মাসের বেশি হলে বুকের দুধের পাশাপাশি হাত ধুয়ে খাবার তৈরি ও পরিবশেন করতে হবে। খিচুড়ি, ডালভাত, মাছ, মাংস, ডিম সবজি, পাকা কলা, তাজা ফল এবং পরিষ্কার সব ধরনের খাবার শিশু খেতে পারবে।
অন্যান্য খাবারের সঙ্গে কাঁচকলা সেদ্ধ করে গরম ভাতের সঙ্গে চটকিয়ে খাওয়ান। কাঁচকলা ডায়রিয়ার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।
খাবার রান্না করার সময় তেল দিতে ভুলবেন না। সারা দিন কমপক্ষে ছয়বার খেতে দিন।
৩-৪ ঘণ্টা পরপর অল্প অল্প করে বারবার খাবার দিলে শিশুর পক্ষে তা হজম করা সহজ।
১৫ দিনের জন্য জিংক সিরাপ বা বড়ি দিতে পারেন।
কখন শিশুকে হাসপাতালে নিতে হবে
* বেশি পরিমাণে পানির মতো পাতালা পায়খানা হলে* বারবার বমি হলে, স্যালাইন খেয়ে না রাখতে পারলে* স্যালাইন বা অন্যান্য খাবার খেতে না পারলে* অতিরিক্ত তৃষ্ণা ভাব থাকলে* ডায়রিয়ার সঙ্গে জ্বর থাকলে
* পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে* ১৪ দিনের বেশি ডায়রিয়া থাকলে।
ডায়রিয়া চিকিৎসায় সাধারণত কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। তবে জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল দিন, বমি হলে ডমপেরিডন জাতীয় ওষুধ দেবেন।
ফোটানো পানি দিয়ে শিশুর মুখ-হাত ধোয়াবেন। বাটি, চামচ ধোবেন, প্রয়োজনে ফোটানো পানি দিয়ে শিশুকে গোসল করাবেন। বাসি বা বাইরের খাবার শিশুকে খাওয়াবেন না। ফলমূল ধুয়ে খাওয়াবেন। জন্মের পর শিশুকে শালদুধ দিন। বুকের দুধ দিন, বোতলে দুধ খাওয়াবেন না। বোতলের মাধ্যমে জীবাণু ছড়ায়। খাবারের আগে শিশুর হাত ধুয়ে দিন। শিশুকে খাওয়ানোর আগে আপনার নিজের হাতও ধুয়ে নিন।