নির্বাচনী সহিংসতা: ১১০ মামলায় গ্রেপ্তার ৬০৮
খবর বাংলা২৪ ডেক্সঃ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় ১১০টি মামলা দায়ের করেছে নির্বাচন কমিশন। সেসব মামলায় এ পর্যন্ত ৬০৮ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এছাড়া রিটার্নিং অফিসারদের দেয়া তথ্যে ভিত্তিতে কমিশন সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের সময় দুর্বৃত্তরা ১১৭টি ভোটকেন্দ্রে হামলা ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, নির্বাচনে ৫শর বেশি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতটি ভোটকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত, কতটি মামলা ও কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানতে চেয়ে গত ২২ এপ্রিল একটি চিঠি রিটার্নিং অফিসারদের বরাবর পাঠানো হয়। চিঠিতে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে তথ্য পাঠাতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
সূত্র আরো জানায়, ৩০ এপ্রিল বুধবার কমিশন বৈঠক রয়েছে। বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। এ জন্যই এই তথ্য সংগ্রহ করা।
জানা জায়, ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৯ জেলার ১৪৭টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাথী না থাকায় ৫টি জেলায় ভোটগ্রহণ হয়নি।
এ নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা ছিল ভয়ানক। নির্বাচনের আগের রাত ও নির্বাচনের দিন ভোট জালিয়াতি, ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স পোড়ানো, কেন্দ্র দখল ও জোরপূর্বক ভোটদানের মতো ঘটনা ঘটে। প্রায় ১৫টি জেলায় ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনায় ঘটে।
জানা জায়, নির্বাচনকালে প্রতিটা আসনেই একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। মামলাতে ২০ থেকে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং শতাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। সে সময় অনেকে অভিযোগ করেন, সহিংসতার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মামলাগুলো করা হয়েছে।
ইসির তথ্য মতে, ১৪৭টি আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ সহিংসতার ঘটনা ঘটে ঝিনাইদহে। সেখানে ৪টি আসনে ২২টি ভোটকেন্দ্র আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়। এ ঘটনায় মামলা করা হয় ২২টি এবং গ্রেপ্তার করা হয় ১৪৩ জনকে। তবে তারা বিভিন্ন সময় জামিন নিয়েছেন।
এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সহিংসতার ঘটনা ঘটে দিনাজপুরে। সেখানে ৫টি আসনের ১৮টি কেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে ব্যালট বাক্স এবং পেপার পোড়ানো হয়। এসব ঘটনায় মামলা করা হয় ১৮টি এবং গ্রেপ্তার করা হয় ৯৪ জনকে।
জানা যায়, বিএনপিকে ছাড়াই গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা আর নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও মনোনীত প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণেই সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নির্বাচনের দিন ১১ জেলায় ১৯ জন নিহত হয়। এদের মধ্যে বেশির ভাগ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। আহত হন সহস্রাধিক সাধারণ মানুষ।
নির্বাচনের দিন সাধারণ মানুষ ছাড়াও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সদস্যসহ প্রায় ২৭৩ জন আহত হন। এদের মধ্যে দুজন নিহত হন। সহিংসতার কারণে ১৫টি আসনের ৫৯৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
তালিকার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে কোন আসনে কতটি ভোটকেন্দ্র পোড়ানো হয়েছিল, দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না, রিটার্নিং অফিসারদের কাছে সার্বিক পরিস্থিতির তথ্য চেয়েছিলাম। তারা সেই তথ্য কমিশনে দিয়েছে। এগুলো আমাদের কাছে সংরক্ষিত থাকবে।’
দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিশন থেকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দোষীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে বিচার হবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘বুধবার কমিশন বৈঠক রয়েছে। বৈঠকে সংসদ নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।’