রিয়াল- এক যুগ পর ফাইনালে
খলনায়ক থেকে নায়ক! কী আশ্চর্য রূপান্তর! দুই বছর আগের সেমিফাইনালে তাঁরা ছিলেন খলনায়ক। টাইব্রেকে গড়ানো ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের প্রথম শটটা নিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। শেষ শটটা সার্জিও রামোস। কিন্তু দুজনই গোল করতে পারেননি। রোনালদো-রামোসের এই ব্যর্থতার কারণেই সেবার ফাইনালে যেতে পারেনি রিয়াল। সেই বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে এবার সেমিফাইনালের ফিরতি লেগের প্রথমার্ধেই ম্যাচের মীমাংসা করে ফেলেন সেই রামোস-রোনালদোই। শেষ পর্যন্ত দুজনের জোড়া গোলে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্নকে তাদেরই মাঠে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে এক যুগ পর ফাইনালে উঠেছে রিয়াল।
২০ মিনিটের মধ্যেই ম্যাচটা ‘শেষ’ করে দেন রামোস। ১৬তম মিনিটে কর্নার থেকে আসা বলে জোরাল হেডে বায়ার্নকে প্রথম ধাক্কা দেন রিয়াল ডিফেন্ডার। চার মিনিট পর ফ্রি কিক থেকে উড়ে আসা বলে একই রকম হেডে করে ফেলেন ২-০। সমীকরণ তখন এমন—ফাইনালে যেতে চাইলে বায়ার্নকে করতে হবে চার গোল!
ম্যাচের সমীকরণ হয়তো সেখানেই শেষ। কিন্তু রোনালদোর ব্যক্তিগত হিসাব তখনো বাকি। ৩৩ মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে গ্যারেথ বেলের বাড়ানো বলে ৩-০ করেন রোনালদো। এরপর দুই হাতের আঙুল তুলে বুঝিয়ে দিয়েছেন এটি তাঁর এই আসরে ১৫ নম্বর গোল। রোনালদো ভেঙে দিলেন লিওনেল মেসির ১৪ গোল করার রেকর্ড। প্রথমার্ধে ৩-০। রেফারি চাইলে তখনই শেষের বাঁশি বাজিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তাতে রিয়ালই সবচেয়ে বেশি আপত্তি করত। বায়ার্নকে আরও লজ্জায় ফেলার সুযোগ তারা হাতছাড়া করবে কেন? রামোসের হ্যাটট্রিক বাকি। রোনালদোর গোলসংখ্যাও বাড়িয়ে নিয়ে রেকর্ডটাকে নিরাপদ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাজও তো আছে।
না, দ্বিতীয়ার্ধে রামোস আর গোল পেলেন না। তবে ৮৭ মিনিটে রোনালদিনহোকে মনে করিয়ে দেওয়া দুর্দান্ত এক ফ্রি কিক থেকে এই আসরের ১৬ নম্বর গোলটি করলেন রোনালদো। রোনালদোর কিক ঠেকাতে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে দেয়াল বানিয়েছিল বায়ার্ন। রোনালদো জানতেন এই দেয়াল কিক নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে উঠবে। তিনি তাই ওপর দিয়ে না মেরে বল চালান করলেন নিচ দিয়ে। পুরো ম্যাচে বায়ার্নকে রিয়াল কতটা নির্বোধ বানিয়েছে—সেটারই প্রতীক হয়ে থাকল যেন এই গোল!
নিজেদের মাঠে এক হালি গোল হজম করে, দুই লেগ মিলিয়ে ৫-০ ব্যবধানে হেরে বিদায় নিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। চ্যাম্পিয়নস লিগ নামকরণের পর থেকে কোনো দলেরই টানা দুবার শিরোপা না-জেতার রেকর্ডও অক্ষুণ্ন রইল। ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে সর্বশেষ টানা দুবার ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছিল এসি মিলান।
মিলানের সেই বিজয়ী দলটাতে খেলা কার্লো আনচেলত্তিই এবার রিয়ালের কোচ। রিয়ালকে ‘লা দেসিমা’র স্বপ্ন পূরণ করা তো দূরের কথা, ফাইনালেই তুলতে ব্যর্থ হয়েছিলেন আনচেলত্তির পূর্বসুরী ফ্যাবিও ক্যাপেলো, বার্নড সুস্টার, এমনকি হোসে মরিনহোর মতো কোচরাও। অবশেষে ২০০২ সালের পর মাদ্রিদের ক্লাবটিকে শুধু ফাইনালেই তুললেন না, আনচেলত্তি যেন দশম ইউরোপ-সেরার ট্রফিটা ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ক্লাবটির ঘরে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি আরও উজ্জ্বল করে তুললেন অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায়।
পুরো ম্যাচে রিয়ালের একটাই আক্ষেপ থাকল। হলুদ কার্ড দেখার কারণে ফাইনালে খেলতে পারবেন না রিয়ালের মাঝমাঠের কারিগর জাবি আলোনসো। ২০০৫ সালে লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা আলোনসোর তাই ভিন্ন আরেকটি ক্লাবের হয়ে এই টুর্নামেন্ট জেতা হচ্ছে না। তবে খেলোয়াড় ও কোচ দুই ভূমিকাতেই মিলানের হয়ে এই ট্রফি জেতা আনচেলত্তির সামনে হাতছানি থাকছে ইতিহাস গড়ার। ভিন্ন দুটো ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার কীর্তি যে আছে মাত্র তিন কোচের। হাতছানি আছে বব পেইসলির পর প্রথম কোচ হিসেবে তিনবার এই ট্রফি জেতার কীর্তি গড়ারও।
রিয়াল অবশ্য আপাতত রোমাঞ্চের ক্ষণ গুনছে লা দেসিমার। এক যুগ পর দশ নম্বর ইউরোপ সেরার ট্রফি আবার ঘরে নিয়ে আসার।