নিরাপত্তাহীনতা আর চরম অনিশ্চিয়তায় সাধারণ মানুষ
খবর বাংলা২৪ ডেক্স: প্রতিদিন ঘটছে নৃশংস খুনের পর খুন। ঘটছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ। ট্রেনে করে অস্ত্রের চালান বহন করা হচ্ছে। মাদক মাফিয়াদের সাথে প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সব মিলিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন কাটছে সাধারণ মানুষের।
দৈনিক নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রতিদিন গড়ে ১২ জন খুন হচ্ছেন। রাজধানী কেন্দ্রিক খুনের ঘটনা কম লক্ষ করা গেলেও রাজধানীর বাইরে প্রতিদিন দুর্বৃত্তদের হাতে অসংখ্য মানুষ হতাহত হচ্ছেন। এরমধ্যে অনেকেই রয়েছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মী। এমনকি, সরকারদলীয় নেতাকর্মীরাও এ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, মঙ্গলবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সবচেয়ে নিরাপদ এবং সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বেষ্টিত সরকারি পরিবহন ট্রেনেও এখন আগ্নেয়াস্ত্রের চালান আসছে। কমলাপুর রেল পুলিশ জানায়, গত দুই দিনে স্টেশন এলাকা থেকে দু’টি একে-২২ রাইফেল এবং বিপুলসংখ্যক গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে ইদানীং বন্দু যুদ্ধের ঘটনা ঘটছে। প্রকাশ্যেই মাদক মাফিয়ারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। যা আগে দেখা যেত না। গত তিন দিনে কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে এক স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও এক যুবলীগ নেতা নিহতসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
তবে অপহরণের বিষয়টিই মানুষকে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে। গত ১৬ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা থেকে বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক অপহরণের পর থেকেই অপহরণ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। সে থেকে অপহরণের সংখ্যাও দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এমনকি, মাত্র ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ জন অপহরণের ঘটনা ঘটে মাত্র এক দিন আগে। এরমধ্যে কয়েকজন উদ্ধার পেলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৯ জন। নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ পাঁচজন এবং একই এলাকার আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার ড্রাইভারের অপহরণের বিষয়টি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ এখন উত্তাল। এছাড়া গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টর থেকে অপহৃত হন ছাত্রদলের লক্ষ্মীপুর জেলার সভাপতি শামসুল ইসলাম সোলেমান। এক দিন পর ২৬ এপ্রিল তার লাশ উদ্ধার করা হয় লক্ষ্মীপুর থেকে। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রের বরাত দিয়ে নয়া দিগন্ত জানায়, জানুয়ারি মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটে ৭০টি, দস্যুতা ৯৯টি, খুন ৪০৩টি, দাঙ্গা ৯টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১,১২৭টি, অপহরণ ৬২টি, পুলিশ আক্রান্তের ঘটনা ঘটে ১০৪টি, চুরির ঘটনা ঘটে ৬৩৩টি। সব মিলিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সারা দেশে মামলা হয় ১৩ হাজার ১৮৫টি। ফেব্রুয়ারি মাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে ৪৮টি, দস্যুতা ৮৪টি, খুন ৩২৮টি, দাঙ্গা ৪টি, নারী ও শিশু নির্যাতন এক হাজার ২৫৬টি, অপহরণ ৫৫টি, পুলিশ আক্রান্ত ৪৮টি, চুরি ৬১৫টি। সব মিলিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে মামলা দায়ের হয় ১১ হাজার ৯৫৫টি। মার্চে ডাকাতির ঘটনা ৪৮, দস্যুতা ১০৫, খুন ৩৬৯, দাঙ্গা ৬, নারী ও শিশু নির্যাতন ১ হাজার ৬৬৯টি, অপহরণ ৭৯, পুলিশ আক্রান্ত ৫৭, চুরি ৫৬৯।
সব মিলিয়ে মার্চে মামলা হয়েছে ১৪ হাজার ২২১টি।